মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন হয়েছে রোববার (১ জানুয়ারি)। এটি মেলার ২৭তম আয়োজন। এই আয়োজনকে ঘিরে রাজধানীর অদূরে পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের বাইরে বসেছে ছোট-বড় অসংখ্য অস্থায়ী দোকান। তার মধ্যে খাবারের দোকানের সংখ্যাই বেশি। এসব দোকানে খাবারের চড়া দাম আদায় করা হচ্ছে দর্শনার্থীদের কাছ থেকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাণিজ্য মেলার বাইরে আশপাশের এলাকায় শতাধিক ছোট-বড় খাবারের দোকান বসেছে। এসব অস্থায়ী দোকান বসানোকে ঘিরে মাস চুক্তিতে ১০ হাজার থেকে ২০/৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের। এছাড়া ছোট দোকানগুলোকে দিন চুক্তিতে টাকা দিতে হচ্ছে।

অস্থায়ী বড় দোকানগুলোর মধ্যে বিরিয়ানি, পোলাও, কাচ্চি, তেহারি ও সাদা ভাতের দোকানের সংখ্যাই বেশি। আর ছোট দোকানগুলোর মধ্যে চা-নাশতার দোকানের সংখ্যা বেশি। বাধ্য হয়ে এসব দোকানে যারা খেতে যাচ্ছেন তাদের পরিশোধ করতে হচ্ছে চড়া দাম। বাজারে যে বিরিয়ানি জাতীয় খাবারের দাম  ১০০/১২০ টাকা, সেগুলো এখানে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়।

একইভাবে ৬ টাকার রঙ চা বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়, আর দুধ চা, সিঙ্গারা ও সমুচা ১৫ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে না। মেলায় আসা দর্শনার্থীরা খাবারের দাম নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

রাজধানীর মালিবাগ থেকে পরিবার নিয়ে মেলায় আসা মমিনুল ইসলাম বলেন, মেলা থেকে বের হয়ে বাইরের দোকানে পরিবারসহ বিরিয়ানি খেয়েছিলাম। ১২০ টাকার বিরিয়ানির দাম এখানে ২০০ টাকা করে নিলো। এভাবে প্রতি জিনিসের দাম এখানে বেশি। দূর-দূরান্ত থেকে মেলায় দর্শনার্থীরা আসে, যখন তারা মেলার বাইরে কোনো দোকানে খায় তখন তাদের কাছ থেকে আদায় করা হয় অতিরিক্ত টাকা। ১০ টাকার নিচে এখানে কোনো চা নেই, আর দুধ চা খেলে দিতে হচ্ছে ১৫ টাকা করে।

মেলা প্রাঙ্গণের সামনের প্রধান সড়কের বিপরীতে চাসহ অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে একটি অস্থায়ী দোকান বসিয়েছেন মামুন নামের এক দোকানি। তিনি বলেন, বেশিরভাগ দোকানই অস্থায়ীভাবে মেলার জন্য বসানো হয়েছে। বড় বড় যেসব দোকান বসেছে তাদেরকে কমপক্ষে ২০/৩০ হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে এই এক মাসের জন্য। ছোট ছোট যেসব অস্থায়ী দোকান আছে তাদের দিন চুক্তিতে টাকা দিতে হয়। এসব টাকা স্থানীয় প্রভাবশালী ও জায়গার মালিকরা নিয়েছে। ছোট একজন ব্যবসায়ীকেও এসব টাকা পরিশোধের পর লাভ বের করতে হবে, যে কারণে দাম কিছুটা বেশি রাখছে সবাই।

পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে রোববার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯৫ সাল থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন ও উৎপাদনে সহায়তার জন্য এ মেলার আয়োজন করা হয়। আগে বাণিজ্য মেলা শেরে বাংলা নগরের চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত হতো। ২০২২ সাল থেকে মেলার জন্য জায়গা নির্ধারিত হয়েছে পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার।

এবার ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ১০টি দেশের ১৭টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। তবে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলবে। এবার মেলায় প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। মেলার টিকিট অনলাইনে ক্রয় করলে ৫০ শতাংশ ছাড়ের সুযোগ থাকবে। এছাড়াও মেলায় প্রায় এক হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাসহ বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য ১৭টি প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও স্টল রয়েছে। দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য দুটি হলের বাইরে মিলে মোট ৩৩১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে।

এএসএস/এসএসএইচ/