মো. মেহমুদ হোসেন / ফাইল ছবি

এবার মেহমুদ হোসেনও ন্যাশনাল ব্যাংক ছাড়লেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার ১১ মাস আগেই তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তার এমডি পদে মেয়াদ ছিল আগামী ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ন্যাশনাল ব্যাংকের আগে মেহমুদ হোসেন এনআরবি ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়ার এমডি ছিলেন।

জানা গেছে, গত ১৮ জানুয়ারি ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে মেহমুদ হোসেন পদত্যাগপত্র জমা দেন। পরে বৃহস্পতিবার অফিস করেননি ও রোববারও অফিস যাননি।

পদত্যাগের বিষয়ে জানতে মেহমুদ হোসেনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এরপর হোয়াসঅ্যাপে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলেননি।  

ব্যাংকটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ফয়সাল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পদত্যাগের বিষয়টি জানি না। যতটুকু জানি এমডি স্যার ছুটিতে আছেন। এজন্য আজকেও অফিসে আসেননি।

একটি সূত্র জানায়, মেহমুদ হোসেন গদত্যাগপত্রে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ উল্লেখ করলেও মূলত ব্যাংকটির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সিকদার পরিবারের চাপে পদত্যাগ করতে হয়েছে। এখন ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) সৈয়দ রইস উদ্দিন ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্বে আছেন। এর আগে ছয় বছরে চারজন এমডিকে মেয়াদ শেষের আগেই ব্যাংকটি থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল।

মেহমুদ হোসেন পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মনোয়ারা সিকদারের কাছে। মনোয়ারা সিকদার অসুস্থ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।  

এসব বিষয়ে জানতে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক সংসদ সদস্য পারভীন হক সিকদারের সঙ্গে ঢাকা পোস্টের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। তিনি এসব বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হয়ননি।

ন্যাশনাল ব্যাংকে নানা অনিয়ম ও এমডির পদত্যাগের ঘটনা নতুন নয়। গত দেড় দশকে ব্যাংকটির বেশিরভাগ এমডিই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। যে কারণে ২০১৪ সালে ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন ব্যাংকটিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন সমন্বয়ক দায়িত্ব পালন করলেও ব্যাংকটির অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। ব্যাংকটির মালিকানায় রয়েছে সিকদার গ্রুপ। তারাই ব্যাংকটির নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

এমডিদের সুরক্ষায় ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করে বলেছিল, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কেউ স্বেচ্ছায় পদ ছাড়তে চাইলে এক মাস আগে পদত্যাগের কারণ জানিয়ে নিজ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কারও চুক্তি বাতিল বা কাউকে পদত্যাগে বাধ্য করা যাবে না।

তবে এই প্রজ্ঞাপন জারির পর ন্যাশনাল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এমডি পদত্যাগ করেন। এতে এই নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।

নানা অনিয়মের কারণে দুই বছর ধরে ন্যাশনাল ব্যাংক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পরিচালকরা তাদের পছন্দের গ্রাহকদের ঋণ দিতে চাচ্ছেন। জোর করে ঋণ পর্ষদে তুলছেন। মেহমুদ হোসেন এসব কাজে রাজি ছিলেন না। পর্ষদের প্রভাবশালী দুই পরিচারকের সঙ্গে বনিমনা হচ্ছিল না তার। তাই পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন।  
 
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুয়ায়ী, বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ১১ হাজার ৩৩৬ কোটি। বিতরণ করা ঋণের যা ২৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৭ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। ব্যাংকটির ঋণ আমানত অনুপাতের হার ৯২ দশমিক ৯ শতাংশ, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার চেয়ে প্রায় ৬ শতাংশ বেশি।

এসআই/এসএম