দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নবনির্মিত রাজস্ব ভবন আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে।

রোববার (২৯ জানুয়ারি) এনবিআরের সম্মেলন কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিভাগ থেকে প্রতিষ্ঠানটির কাছে রাজস্ব ভবনটি হাস্তান্তর করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। উপস্থিত ছিলেন প্রকল্প পরিচালক ও কর কমিশনার মো. লুৎফুল আজীম ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্যসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। গণপূর্ত অধিদপ্তরের পক্ষে প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি মীর মঞ্জুরুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

যদিও রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ১২তলার রাজস্ব ভবনটি আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবনটি উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে। পাশাপাশি ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে হবে রাজস্ব সম্মেলন।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, নতুন আধুনিক জাতীয় রাজস্ব ভবনটি ২০তলা ফাউন্ডেশনে নির্মিত হলেও বর্তমানে ১২তলা পর্যন্ত কাজ শেষ করা হয়েছে। ভবনটি কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ সর্বাধুনিক সুবিধা-সংবলিত। ভবনের মোট আয়তন ছয় লাখ ৮২ হাজার ৮৯৭ বর্গফুট। প্রতিটি ফ্লোরের উচ্চতা ১৩ ফুট। বেজমেন্টের আয়তন ৬৬ হাজার বর্গফুট। নিচতলা থেকে চতুর্থতলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন ৪৪ হাজার বর্গফুট করে। পঞ্চম থেকে বাকি সব তলার আয়তন ৪৬ হাজার বর্গফুট।

এনবিআরের সব অফিসের পাশাপাশি সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিইসি), কর জরিপ দপ্তর, বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ-কর), বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ-ভ্যাট), কর আপিলাতসহ কয়েকটি কর অঞ্চলের কার্যালয় আগারগাঁওয়ের নতুন ভবনে চলে যাবে।

নতুন রাজস্ব ভবনে যেসব সুবিধা থাকছে

শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ নতুন ভবনটিতে ৮টি লিফট রয়েছে, যার মধ্যে ছয়টি সাধারণ ও দুটি ফায়ার লিফট। রয়েছে ৫১০ আসনের মাল্টিপারপাস হল, রেভিনিউ আর্কাইভ, লাইব্রেরি, রেকর্ডরুম, সেন্ট্রাল ডেটা প্রসেসিং সেন্টার ও সার্ভার স্পেস। কম্পিউটার ল্যাব, ট্রেনিং সেন্টার, কমার্শিয়াল ব্যাংক শাখা, এটিএম, পোস্ট অফিস, কুরিয়ার সার্ভিস, স্টেশনারি শপ, বার লাউঞ্জ, প্রতি তলায় গ্রিন স্পেস ও স্মোকিং জোন থাকবে। সুবিধার মধ্যে আরও রয়েছে সার্বক্ষণিক জেনারেটর সুবিধা, বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, অ্যাকসেস কন্ট্রোল সিকিউরিটি সিস্টেম, প্রতিবন্ধী ও সিনিয়র সিটিজেনদের প্রবেশ, নির্গমন ও চলাচলের ব্যবস্থা, জরুরি অবস্থায় প্রাকৃতিক বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা, ক্যাফেটেরিয়া, কল সেন্টার, ডে-কেয়ার সেন্টার, মিডিয়া সেন্টার, পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক প্রার্থনা কক্ষ, প্রতি ফ্লোরে পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক টয়লেট জোন প্রভৃতি। 

ষষ্ঠ তলায় বোর্ড প্রশাসন, সব প্রথম সচিব ও কিছু সংখ্যক দ্বিতীয় সচিবের দপ্তর থাকবে। সপ্তম তলাজুড়ে থাকবে দ্বিতীয় সচিবদের দপ্তর। অষ্টম তলায় কর পরিদর্শন পরিদপ্তর ও এনবিআরের আইসিটি শাখা থাকবে। নবম তলায় বৃহৎ করদাতা ইউনিট (আয়কর ও ভ্যাট) থাকবে।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, ভবনের নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় থাকবে সেবাকেন্দ্র, ব্যাংক, পোস্ট অফিস, কুরিয়ার সার্ভিস, কল সেন্টার, বার লাউঞ্জ, ক্যাফেটেরিয়া, পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক প্রার্থনা কক্ষ, রেকর্ডরুম ও স্টেশনারি শপ। দ্বিতীয় তলায় ওঠার জন্য থাকবে চলন্ত সিঁড়ি। তৃতীয় তলায় থাকবে মাল্টিপারপাস হল, এনবিআরের গবেষণা ও পরিসংখ্যান শাখা, ডে-কেয়ার সেন্টার, লাইব্রেরি ও রেভিনিউ আর্কাইভ।

চতুর্থ তলায় অর্থমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর চেম্বার, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) এবং এনবিআরের ছয় সদস্যের দপ্তর থাকবে। পঞ্চম তলায় থাকছে চেয়ারম্যান ও ১২ সদস্যের দপ্তর।

ষষ্ঠ তলায় বোর্ড প্রশাসন, সব প্রথম সচিব ও কিছু সংখ্যক দ্বিতীয় সচিবের দপ্তর থাকবে। সপ্তম তলাজুড়ে থাকবে দ্বিতীয় সচিবদের দপ্তর। অষ্টম তলায় কর পরিদর্শন পরিদপ্তর ও এনবিআরের আইসিটি শাখা থাকবে। নবম তলায় বৃহৎ করদাতা ইউনিট (আয়কর ও ভ্যাট) থাকবে।

১০ম তলায় আয়কর আপিলাত ট্রাইব্যুনাল, ১১তম তলায় ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনাল ও কেন্দ্রীয় জরিপ অঞ্চল থাকবে। ১২তম তলায় আয়কর ও ভ্যাট আপিল দপ্তর থাকবে। দুটি বেইজমেন্টে ২৪৬টি কার ও ১৭২টি মোটরসাইকেল পার্কিং সুবিধা রয়েছে।

২০০৮ সালে পাঁচ বছর মেয়াদে ১৪১ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়েছিল। মামলা নিষ্পত্তি হলে অবশেষে ২০১৪ সালে সেই প্লট বুঝে পায় এনবিআর। এর মধ্যে প্রকল্পের প্রথম মেয়াদ ২০১৩ সালেই শেষ হলে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। নকশা পরিবর্তনে প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫১ কোটি টাকা। একাধিকবার মেয়াদ বৃদ্ধি করে চলতি বছরের জুনে প্রকল্পটি শেষ করার সময়সীমা ঠিক করা হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী ফেব্রুয়ারিতে যাত্রা শুরু করছে রাজস্ব ভবন।

আরএম/জেডএস