১৬০১ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ভারতে বাণিজ্য যাত্রার অনুমতি প্রদান করেন ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ। পরবর্তীতে মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর ১৬১৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ভারতে বাণিজ্য করার অনুমতি প্রদান করেন এবং কোম্পানিটি গোয়া, মুম্বাই ও চট্টগ্রামে বাণিজ্য ঘাটি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে ১৭৬৫ সালে পলাশী যুদ্ধে ইংরেজরা জয়লাভের পর ১৭৮৬ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম বোর্ড অব রেভিনিউ গঠন করা হয়। আর স্যার জন শোরকে ১৭৮৭ সালে বোর্ড অব রেভিনিউয়ের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয় হয়।

অন্যদিকে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহজনিত ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য ১৮৬০ সালে ভারতে আনুষ্ঠানিকভাবে আয়কর ব্যবস্থা প্রবর্তন করে ব্রিটিশ সরকার। পরবর্তীতে ১৮৮৬ সালে পৃথক ও পূর্ণাঙ্গ ইনকাম ট্যাক্স অ্যাক্ট প্রবর্তিত হয়। যার ধারাবাহিকতায় ১৯৮৪ সালের ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিনেন্স চালু হয়, যা আয়কর আইন হিসেবে বাংলাদেশে চালু আছে।

অনুরূপভাবে প্রাচীন মিশরীয়সহ অন্যান্য সভ্যতার সময়ে কাস্টমস ব্যবস্থার প্রমাণ পাওয়া যায়। কালের বিবর্তনে আজ আধুনিক কাস্টমস ব্যবস্থা চালু হয়। ১৫২৮ সালে বাংলাদেশে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের প্রতিষ্ঠা করেছিল পর্তুগিজরা। এরপর ধাপে ধাপে এগিয়ে চলছে কাস্টমস। একইভাবে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট প্রচলনেরও রয়েছে গৌরবগাঁথা ইতিহাস।

এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) উদ্যোগে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয়েছে রাজস্ব সম্মেলন। আর এর পাশেই স্থাপিত আছে রাজস্ব জাদুঘর। যেখানে ঘুরে আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাটের নানা ইতিহাসসহ এনবিআরে তিন বিভাগের ইতিহাস-ঐতিহ্য জানতে পারছে দর্শনার্থীরা। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাদুঘর ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও যুগ্ম কমিশনার তরিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এনবিআরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরতেই আমাদের এই প্রচেষ্টা। ভবিষ্যতে আমাদের নতুন রাজস্ব ভবনে স্থায়ী একটি মিউজিয়ামে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের মিউজিয়াম পরিদর্শন করলে আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগ সম্পর্কে সহজ ও সুন্দর একটি ধারণা পাবে দর্শনার্থীরা। একইসঙ্গে আমরাও আমাদের ইতিহাস ও কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে পারলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের এই মিউজিয়াম পরিদর্শন করে উদ্দীপনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি আমাদের এই মিউজিয়ামকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নত করার পরামর্শ দিয়েছেন।

জাদুঘর পরিদর্শনে আসা এক রাজস্ব কর্মকর্তা আরমান বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ এনবিআরে কাজ করছি। এ সময় অনেক ঘটনারই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাক্ষী। তবে একসাথে এনবিআরের তিনটি বিভাগের প্রাচীন ইতিহাস তেমনভাবে জানা ছিল না। রাজস্ব মিউজিয়ামে এসে ইতিহাসটা জানা হলো।

এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজস্ব সম্মেলন ও রাজস্ব ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই তিনি রাজস্ব জাদুঘর ঘুরে দেখেন এবং পরিদর্শন বইতে মন্তব্য লেখেন। পরে সব আয়কর ও কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তারা জাদুঘর ঘুরে দেখেন। 

জাদুঘরে শুল্ক আদায়ের প্রাচীন ইতিহাস চিত্রকর্মের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। একইসঙ্গে পুরোনো দিনের স্মারক আইন, বিধি, এসআরও’র কপি এবং স্মাগলিংয়ের সময় আটককৃত মূল্যবান ধাতব মূর্তি প্রদর্শন করা হয়।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- এম নুরুল কাদেরের নিজ হাতে লেখা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের বরাদ্দকৃত ব্যয়ের হিসাব বিবরণী, ১৯৮৪ সালের ৪ জুন প্রকাশিক প্রথম আয়কর অধ্যাদেশের গেজেট কপি, ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান আমলের কাস্টমস ম্যানুয়াল, ১৯৫১ সালের মংলা কাস্টমসে দাখিলপত্র বিল অফ এন্ট্রির কপি, ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম কাস্টমসে আটককৃত লুইস এক্সভি ঘড়ি এবং রেডিও ক্যাসেট টেপ, চাঁদের পাথর ও ধূলিকণা পৃথিবীতে আনার প্রথম কাস্টমস ঘোষণাপত্র, ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম কাস্টমসে জুতার হিলের মধ্যে স্বর্ণ চোরাচালানের দায়ে আটককৃত জুতা অন্যতম।

আরএম/এমজে