আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের ঋণের টাকা পেতে সরকারকে ২০২৬ অর্থবছর শেষে আরও অতিরিক্ত ২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে হবে বলে মনে করছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)।

এই টাকা আহরণে সরকার কী পদক্ষে গ্রহণ করবে তা চলতি অর্থবছরের মধ্যে আইএমএফকে জানাতে হবে। এছাড়াও শুধু সংস্থাটির শর্ত পূরণই নয়, ২০৩১ সালে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার জন্য এ অনুপাত আরও বেশি বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছে পিআরআই।

সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বনানীতে পিআরআইয়ের কার্যালয়ে ‘পিআরআই স্টাডি সেন্টার অন ডমেস্টিক রিসোর্স মোবিলাইজেশন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ও গবেষণা পরিচালক এম এ রাজ্জাক।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আইএমএফএয়ের শর্ত মেনে ২০২৪, ২০২৫ এবং ২০২৬ অর্থবছরে বাজেটের মূল রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ২৩৪০ বিলিয়ন টাকা বা ২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করতে হবে। এর মধ্যে ২০২৪ অর্থবছরে অতিরিক্ত কর আদায় করতে হবে ৬৫ হাজার কোটি টাকা।

পাশাপাশি ২০৩১ সালে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার জন্য এ অনুপাত আরও বেশি বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।  

শর্ত অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা অত্যন্ত কঠিন। তবে অর্জন না করে উপায় নেই। পিআরআই বলছে, রাজস্ব আয় বাড়াতে আইএমএফের পক্ষ থেকে এখনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা না পাওয়া গেলেও বাজেটের আগে ধাপে ধাপে তা আসবে। তবে আইএমএফের চাপে নয়; বরং নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতেই এই সংস্কার করা প্রয়োজন।

গবেষণা পরিচালক এম এ রাজ্জাক জানান, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব খাতকে শক্তিশালী করতে আইএমএফ অনেকগুলো শর্ত দিয়েছে। তিনি বলেন, আইএমএফের ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে শর্ত অনুযায়ী জিডিপিতে করের অবদান সাত দশমিক ৮ থেকে ২০২৪ অর্থবছরে ৮ দশমিক তিন শতাংশ, ২০২৫ অর্থবছরে ৮.৮ শতাংশ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের কর জিডিপি অনুপাত বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।  

রাজ্জাক বলেন, এটি আপাতত দৃষ্টিতে এটাকে ছোট টার্গেট বলে মনে হতে পারে। কিন্তু গত কয়েক বছরের গতি ধারা দেখছি সেই অনুসারে এটা আদায় করাটা অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার হবে। কারণ বাজেটের লক্ষ্যমাত্রাই আদায়ের বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্য আয়ে পরিণত হবে। অষ্টপঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুসারে, আমাদের ২০২৫ অর্থবছর শেষে কর জিডিপি বাড়াতে হবে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ। আমরা যদি আইএমএফের সব শর্ত পালন করি তারপরও কর জিডিপিতে অবদান হবে ৯ শতাংশ। অর্থাৎ আন্ততুষ্টির কিছু নেই। সুতরাং আইএমএফের শর্তের কথা চিন্তা না করে, সরকারের হোম লোন পলিসির চিন্তা করে কর জিডিপির আওতা বাড়ানো উচিৎ।

আইএমএফের আরও শর্ত হচ্ছে-
# সরকার আগামী অর্থবছরের বাজেট থেকে যেসব খাতে নগদ প্রণোদনা তুলে দিলে সমস্যা হবে না, সেখাত থেকে ক্যাশ ইনসেনটিভ বা নগদ প্রণোদনা বাদ দিয়ে দেবে।

# সরকার চেষ্টা করবে কররে আওতা বাড়াতে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে তারা ১ কোটি মানুষকে টিআইএনের আওতায় আনবে।

# আগামী ৫ বছরের মধ্যে ৩০ হাজার ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস দেবে। এতে সরকার এ খাত থেকে ১০৫ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব পাবে। তার মধ্যে ২০২৪ অর্থবছরের মধ্যে ৬০ হাজার কোটি টাকা ওঠাতে পারবে।

# এছাড়াও ভ্যাট আদায়ের পরিমাণ বাড়াবে। ইনকাম ট্যাক্স আইন সংস্কার করবে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, বর্তমান লক্ষ্য অনুসারে রাজস্ব আদায় হলে শর্তপূরণ করা সম্ভব হবে না। বরং আরও ট্যাক্স জিডিপিও রেশিও কমে যাবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ট্যাক্স রেট কম না। সুতরাং দ্রুত কর হার দ্রুত বাড়বে না। ১৬ কোটির দেশে সর্বোচ্চ দেড় কোটি মানুষ কর যোগ্য। তাদের করের আওতায় আনা সহজ না। এটার জন্য এনবিআরএকে ঢেলে সাজাতে হবে। আইনের সংস্কার করতে হবে।

এমআই/এসএম