আমরা সরকারকেও কর দিই, আবার ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টকেও দিই। রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা ইচ্ছামতো অ্যাসেসমেন্ট করে। তাহলে কীভাবে করনেট বৃদ্ধি হবে? এ ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সকালে ‘আয়কর ব্যবস্থার ক্রমবিকাশ ও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আয়করের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে বিভিন্ন বক্তারা এসব কথা বলেন।

সেমিনারে উন্মুক্ত এক আলোচনায় আকবর আলী নামের এক ব্যবসায়ী এনবিআর কর্মকর্তাদের অনিয়মের কথা তুলে ধরে বলেন, রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের ব্যবসায়ীরা ডাকলে তারা (ব্যবসায়ী) ভয় পায়। ব্যবসায়ীরা মনে করে, একবার কর্মকর্তাদের কাছে গেলে তারা আমাদের কোনো কথা বিশ্বাস করবে না। রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা ইচ্ছামতো অ্যাসেসমেন্ট করবে। আমার আয় ফিক্সড। বিভিন্ন কোম্পানি ডিভিডেন্ড দেয় আর বাড়ি ভাড়া পাই। তারপরও উনারা এগুলো এক্সসেপ্ট করেন না। এটা নাই, ওটা নাই বলে অ্যাসেসমেন্ট করেন। এটা স্বচ্ছ করতে হবে। স্বচ্ছ না হলে যারা ট্যাক্স দেয় তাদের প্রতি জুলুম হচ্ছে।

অপর এক করদাতা বলেন, আমরা সরকারকেও কর দিই, আবার ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টকেও দিতে হয়। এনবিআর কর্মকর্তারা ইচ্ছামতো অ্যাসেসমেন্ট করেন। তাহলে কীভাবে করনেট বৃদ্ধি হবে? এ ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। যারা কর দেয় তাদের হয়রানির শিকার করতে হয়।

অন্যদিকে ভুক্তভোগী করদাতাদের প্রসঙ্গ টেনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে করদাতাদের কর প্রদানে সহনশীল মাত্রা থাকা জরুরি। এখানে একজন করদাতা বলেছেন আমরা সরকারকেও দিই, ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টকেও দিই। এরকম সমস্যা শুধু বাংলাদেশে নয়, সব দেশেই কম বেশি আছে। আমার মনে হয়, এটা কমিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে। এজন্য ডিজিটালাইজেশনের ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।

প্যানেল আলোচনায় মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, নতুন রাজস্ব ভবনে যেন ব্যক্তি পর্যায়ে আস্থার জায়গায় তৈরি হয়। করের হার নয়, করদাতাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে কর আহরণ বৃদ্ধি করতে হবে। রাষ্ট্র আমাদের যেসব সেবা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সেসব সেবা দিতে হলে কর আহরণ বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, করোনার সময় কর্পোরেট কর হার হ্রাস করা হয়েছে, যেটা আমরা চাইনি। আমরা শুধু চাই আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে কর্পোরেট কর হার নির্ধারণ। বেশি ট্যাক্স আদায় করতে হলে সবগুলো বিভাগে কর আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কর আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য ব্যবসায়ী নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে রাজস্ব বোর্ডের সমন্বয় করতে হবে। আইএমএফ বলেছে কর জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি করতে, করনেট করতে।

এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, আরবানে বেশি রুরালে নাই, এটা আমি বিশ্বাস করি না। আমাদের সহনীয় লেভেলটা অনেক বেশি, তাই এখানে বিল গেটস নেই বা জ্যাক মাও নেই। ব্যবসায়ীরা টাকা কামায়, টাকা উৎপাদন করে। তাই যারা ট্যাক্সদাতা, দাতাদের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না করে একটা ভালো অবস্থা তৈরি করা যেতে পারে। সবার মধ্যে একটা অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক উন্নয়ন করা গেলে ট্যাক্স হার বাড়বে।

তিনি বলেন, ট্যাক্সের একটা সহনশীল মাত্রা থাকা উচিত। বিদেশে এক প্যাকেট সিগারেট কিনলেও সেটা থেকে ট্যাক্স কাটা হয় ও সরকারের কোষাগারে জমা হয়ে যায়। তারা সবকিছুতেই দায়বদ্ধ থাকে। এক আইডি কার্ড থেকেই সবকিছুর সঙ্গে যুক্ত তারা।

কাস্টমে ব্যবসায়ীদের মালামাল ছাড় দিতে দেরি করা যাবে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, একজন ব্যবসায়ীর মাল কাস্টমে তিন দিন আটকে রাখলে এর সঙ্গে জড়িত সবাই ভুক্তভোগী হয়। তাই যতদ্রুত সম্ভব মালামাল খালাসের ব্যবস্থা করতে হবে।

রাজস্ব সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সকালে ‘আয়কর ব্যবস্থার ক্রমবিকাশ ও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আয়করের ভূমিকা’ শীর্ষক প্রবন্ধটি তুলে ধরেন কর অঞ্চল-১ এর কমিশনার মো. ইকবাল হোসেন। প্রবন্ধে সারা বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্য, আর্থিক কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা ও কর আরোপের মৌলিক ধারণাগত পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে আয়কর বিভাগ এখনো প্রস্তুত নয়। এজন্য এ বিভাগকে আরও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা প্রয়োজন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. মুসলিম চৌধুরী। সভাপতির বক্তব্য এনবিআর আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, একজন কৃষক জমি কিনতে গেলেও টিআইএন নিতে হয়। তাকে তো আমরা করদাতা হিসেবে এড্রেস করতে পারি না। কর মেলা যেসময় হয়, তা হচ্ছে রিটার্ন দাখিলের শেষ সময়। তাই সবাই মেলা নিয়েই ব্যস্ত থাকে, রিটার্ন দাখিল হয় না। অটোমেশন একটা সফটওয়্যার কিনে ফেললেই যেসব সহজ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন না। এজন্য আরও অনেক কাজ করতে হবে।

আরএম/এসএসএইচ/