আলোচনা সভায় পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা

করোনাভাইরাসের কঠিন সময়ে সরকারের দেওয়া প্রণোদনা ও বেতন-ভাতার টাকা পোশাকশ্রমিকদের হাতে সহজে পৌঁছে দিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান বিকাশ।

মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) ‘তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিকদের ডিজিটাল বেতন ব্যবস্থাপনা : অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনায় পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা এ মত প্রকাশ করেন। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিকাশ।

তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা বলেন, করোনার কঠিন ওই সময়ে ব্যাংক থেকে শুরু করে প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের সেবা স্থবির হয়ে পড়েছিল। সে সময়ে সরকারে পক্ষ থেকে শ্রমিকদের দেওয়া প্রণোদনা পৌঁছাতে অন্যতম ভরসা হয়ে দাঁড়ায় মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিকাশ। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে আমরা শ্রমিকদের কাছে প্রণোদনার বেতন ভাতা পৌঁছে দেই।

পোশাক তৈরির প্রতিষ্ঠান এজি গ্রুপের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘ডিজিটাল সুবিধায় শ্রমিকদের দ্রুততার সঙ্গে বেতন-ভাতা পৌঁছে দেওয়ায় এই শিল্প অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কেননা ওই সময়ে শ্রমিকের কাছে নগদ টাকা পৌঁছানো সবচেয়ে বেশি জরুরি ছিল। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে এ খাতে সরকারের পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা। আর এই প্রণোদনার টাকা শ্রমিকের কাছে পৌঁছে দেওয়া সহজ করেছে বিকাশ।’

বিকাশের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার মিজানুর রশিদ বলেন, ‘করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে এই শিল্প রক্ষায় এমএফএসের মাধ্যমে সরকারি প্রণোদনা বিতরণে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে সকলের সঙ্গে যৌথভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করেছে বিকাশ। ওই সময়ে ৯৮০টি ফ্যাক্টরির প্রায় ১১ লাখ শ্রমিককে প্রায় তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেতন-ভাতা সরাসরি তাদের বিকাশ অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেয়া হয়। কোভিড পরিস্থিতি শুরু হওয়ার আগে চার লাখ শ্রমিক বিকাশে তাদের বেতন-ভাতা পেতেন।’

তিনি জানান, অল্প সময়ের মধ্যে বিশাল সংখ্যক শ্রমিকের জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং একই সঙ্গে এমএফএস অ্যাকাউন্ট খোলার কমপ্লায়েন্স ঠিক রেখে কাজটি করা সহজ ছিল না। সব পক্ষের সমন্বিত পদক্ষেপে জরুরি অবস্থার মধ্যেও সফলতার সঙ্গে কাজটি সম্পন্ন করে বিকাশ।

তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এক দিনের মধ্যে মাস্টার অ্যাকাউন্ট খোলা, একসঙ্গে বহুসংখ্যক শ্রমিকের জন্য অ্যাকাউন্ট খোলা, অনলাইন ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা, পিন রিসেট করতে সহায়তা করা, অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট দেওয়াসহ সবধরনের সেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নিশ্চিত করে বিকাশ। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে শ্রমিক-সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় নতুন এজেন্ট নিয়োগ অব্যাহত রাখা হয়।’

আলোচনা সভায় বিকাশের পক্ষ থেকে বলা হয়, মোবাইল অ্যাকাউন্টে বেতন পাওয়ায় শ্রমিকদের ডিজিটাল সচেতনতাও বেড়েছে। বেসরকারি জরিপ প্রতিষ্ঠান সানেমের তথ্যানুসারে ২০২০ সালের মে মাসে ৫৩ শতাংশ নারী শ্রমিক নিজেরা ক্যাশ আউট করতে পারতেন। ২০২০ এর সেপ্টেম্বরে এই হার বেড়ে ৬৫ শতাংশ হয়। একই সময়ে নিজেরাই নিজেদের ব্যালেন্স চেক করার সক্ষমতার পরিমাণ ৫৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭০ শতাংশ হয়। শ্রমিকদের বড় অংশ সেন্ড মানি সেবা ব্যবহার করেন। এই সময়ে নিজেই সেন্ড মানি করতে পারেন এমন নারী শ্রমিকের সংখ্যা ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩০ শতাংশ হয়। এছাড়া গত বছরের এপ্রিল-জুন মাসে প্রতি চার জন তৈরি পোশাক শ্রমিকের তিন জনই বেতন পেয়েছেন এমএফএস অ্যাকাউন্টে।

এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট (এসিএফডি) পরিচালিত জরিপের তথ্য বলছে, শ্রমিকদের মাধ্যমে মাসে এক হাজার ১১ কোটি টাকা যায় গ্রামে। ৬২ শতাংশ শ্রমিক নিয়মিত গ্রামে পরিবারে টাকা পাঠান। এদের ৮২ শতাংশই মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নেন। গার্মেন্টস শ্রমিকদের ৪৩ শতাংশেরই বিকাশ অ্যাকাউন্ট আছে।

বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড পিআর করপোরেট কমিউনিকেশন্স বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার সামসুদ্দিন হায়দার ডালিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন- অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইনামুল হক, নিউ এজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ ইব্রাহিম, নিউ এশিয়া গ্রুপের পরিচালক আমির সেলিম। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে বক্তব্য তুলে ধরেন।

একে/এফআর