বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ক্ষুদ্র একটি বাজারের পাশের একটি গ্রামের গৃহবধূ পূর্ণিমা মণ্ডল। বিয়ের পরই দেখেছেন স্বামীর অসহায়ত্ব আর দেনায় ডুবে যাওয়ার অসহায় পরিস্থিতি। সেখান থেকে মোবাইল আর্থিক সেবা নগদ-কে সঙ্গে নিয়ে রীতিমতো ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। 

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের বিশেষ সাক্ষাৎকারে পূর্ণিমা মণ্ডল জানিয়েছেন তার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। 

প্রশ্ন : বাংলাদেশের একটা প্রত্যন্ত গ্রামে নারী উদ্যোক্তা হওয়া তো সহজ নয়। কীভাবে এই পর্যন্ত এলেন?
পূর্ণিমা মণ্ডল : আসলে ব্যবসাটা করতেন আমার স্বামী মিলন কীর্তনীয়া। তিনি চিংড়ির ঘের করতেন আর কয়েকটা দোকান চালাতেন। কিন্তু আমি বিয়ের পর দেখলাম, ওনার সব ব্যবসা লোকসানে চলছে। কয়েক লাখ টাকা দেনা। তখন আমাদের সংসার চালানো কঠিন ছিল। এত দেনা বলে লোকজন খারাপ কথা বলত। আমি বুঝলাম, এই ব্যবসা যদি নিজে চালানো যায়, এটা দিয়ে লাভ করা সম্ভব। তাই স্বামীকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে এই বাজারের পাশে ঘর ভাড়া নিলাম। তারপর নিজেই দোকানে বসা শুরু করলাম। 

প্রশ্ন : লোকজন সমালোচনা করত না?
পূর্ণিমা মণ্ডল : কেউ সামনে এসে তো কিছু বলত না। কিন্তু পেছনে যাচ্ছেতাই বলত। আমার দোকান বাসস্ট্যান্ডে। এখান থেকে আমাদের তিন গ্রামের মানুষ শহরে যায়। তারা বলে, এ কেমন বৌ? ঘর ফেলে দোকানে বসেছে!

প্রশ্ন : আপনার স্বামী আপত্তি করেননি?
পূর্ণিমা মণ্ডল : করেছেন। গ্রামে কেউ নিজের নতুন বৌকে দোকানদারি করতে দেয়? সে কিছুতেই রাজি ছিল না। আমি জোর করে দোকান শুরু করেছি।

প্রশ্ন : বিয়ের আগে কল্পনা করেছিলেন যে, এমন একটা লড়াই করতে হবে?
পূর্ণিমা মণ্ডল : না। আমি তো পড়াশোনা করতাম। মোংলায় উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছি। এরপর চট্টগ্রামে নার্সিং পড়া শুরু করেছিলাম। এরমধ্যে আমার কাকা বলল, ভালো একটা ছেলে পাওয়া গেছে; তাই বিয়ে দিয়ে দিল। সবাই বলেছিল, ছেলে ভালো ব্যবসায়ী। পরে তো দেখলাম, সব দেনায় ডুবে আছে।
 
প্রশ্ন : তারপর অবস্থা বদলানো শুরু করল কী করে?
পূর্ণিমা মণ্ডল : আমার মনে হচ্ছিল নতুন একটা কিছু করা দরকার। তাই দোকানে মোবাইলে লেনদেনের ব্যবস্থা করলাম। নগদ উদ্যোক্তা হলাম। এই সেবাই আমার ভাগ্য বদলে দিয়েছে।  

প্রশ্ন : এখন কেমন চলছে সংসার?
পূর্ণিমা মণ্ডল : এখন আমার একটা ছেলে পড়াশোনা করে। ভাড়া দোকানে আর ব্যবসা করি না। নিজে দোকানটা কিনে নিয়েছি। বাড়িও একটা করেছি। দেনা বলে আর কিছু নেই। বলতে পারেন, আমি সেই পুরোনো দিনটা বদলে দিয়েছি। এখন আমি মাথা উঁচু করে চলতে পারি। আর এ জন্য আমি নগদ-কে ধন্যবাদ জানাই।

প্রশ্ন : মাথা উঁচু করে বাঁচার এই অভিজ্ঞতাটা কেমন?
পূর্ণিমা মণ্ডল : একটা সময় লোকে পেছনে অনেক কথা বলত। এখন তারাই আমাকে এসে বলে, তুমি মেয়েদের মাথা উঁচু করে চলতে শিখিয়েছ। অনেক কষ্ট করে এখানে এসেছি। আমার এই লড়াইয়ে পথ চলতে নগদসহ যারা সমর্থন দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমি আমার উদ্যোক্তা পরিচয় নিয়ে গর্ববোধ করি। 

প্রশ্ন : এখন লোকজন আপনাকে কীভাবে দেখে?
পূর্ণিমা মণ্ডল:  সেদিন যারা আমার সমালোচনা করত, আমাকে লজ্জা দিত; তারাই এখন আমার প্রশংসা করে। আমি এখন এই এলাকার সবার ভালোবাসা পাই। সবাই পছন্দ করে। আমাকে দেখে অনেক নারীও নানাভাবে কাজে এগিয়ে আসছে। আমি মনে করি, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখলে এবং পরিশ্রম করলে যেকোনো মানুষের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।