পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ২৬টি ব্যাংক এরই মধ্যে ২৯০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। এই তহবিলের মধ্যে ১ হাজার ৩৭ কোটি টাকা এরইমধ্যে বিনিয়োগও করেছে। শিগগিরই ব্যাংকগুলো আরও চার হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, দেশের দুই পুঁজিবাজারে ত্রিশটি ব্যাংক তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই হিসেবে ব্যাংকগুলোর মোট তহবিলের আকার হবে ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে বাকি রয়েছে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো দ্রুত এই তহবিল গঠন করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে। সেই হিসেবে ২৬টি ব্যাংক নতুন করে আরও ৪ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। কারণ, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকগুলো ১ হাজার ৩৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মাসুদ বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিশেষ তহবিলে বিনিয়োগের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা তদারকি করছি। শিগগিরই ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করবে বলে প্রত্যাশা করছি।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। তফসিলি ব্যাংকগুলোকে ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংক উৎসাহিত করবে বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে।

ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে বাজার চাঙ্গা হবে। কম দামে থাকা শেয়ারগুলো যৌক্তিক দামে আসবে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান

এছাড়াও যেসব ব্যাংক পুঁজিবাজারে বন্ড ছেড়ে মূলধন বাড়াতে চায়, তাদের শর্ত দেওয়া হবে যে, ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিলের বিনিয়োগ থাকতে হবে। বেশিরভাগ ব্যাংক বন্ড ছেড়ে মূলধন বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছে। আশা করছি শিগগিরই ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যাংকগুলোর এই বিনিয়োগ পুঁজিবাজারের জন্য ভালো হবে। তবে ব্যাংকগুলোর অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য নয় বরং দেশের অর্থনীতির অন্যান্য সেক্টরে বিনিয়োগ বেশি দরকার। তাতে উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে। অর্থনীতির আকার বাড়বে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে বাজার চাঙ্গা হবে। কম দামে থাকা শেয়ারগুলো যৌক্তিক দামে আসবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিশেষ তহবিল গঠন করে বিনিয়োগ করবে বলে সম্মতি প্রকাশ করেছে। কিন্তু এখনও ৫ ভাগের একভাগ বিনিয়োগ করেছে। অর্থাৎ আরও চারভাগ করতে হবে। তারা সম্মতি জানানোর পরও বিনিয়োগ করতে প্রকৃতপক্ষে তাদের সমস্যা কোথায় সেটা জেনে তাদের বিনিয়োগের সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বর্তমানে পুঁজিবাজারে মোট ত্রিশটি ব্যাংক তালিকাভুক্ত রয়েছে। আগামী সপ্তাহে আরও একটি বেসরকারি ব্যাংক তালিকাভুক্ত হবে। এ নিয়ে ৩১টি ব্যাংক তালিকাভুক্ত হবে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে- এবি ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, রুপালী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, সোসাল ইসলামী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংক এবং উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড।

মূলধনের দিকে থেকে এই ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারের ২৫-৩০ শতাংশ অবদান রাখে। ফলে এ খাত পুঁজিবাজারে উত্থান-পতনে বড় ভূমিকা রাখে। এর মধ্যে ২৬টি ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

এমআই/এনএফ