ঋতু পরিবর্তনের কথা বলে খুচরা পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা কমলার দাম বাড়াতে শুরু করেছেন। কমলার দাম বাড়ানোয় মাল্টা এবং দেখতে কমলার মত ফল কিনুর দাম বাড়তে শুরু করেছে। পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়তে পারে আগামী মাস থেকে।

আড়ৎদার ও ফল আমদানিকারকরা বলছেন, ভারতের নাগপুর থেকে আগামী ২৫ মার্চের পর আর কোনো কমলা আসবে না। কারণ কমলার ঋতু শেষ। বাকি যা থাকবে তা নিজেদের জন্য রেখে দেবে ভারত সরকার। ফলে নতুন করে কমলার আমদানি হবে না। অর্থাৎ ঠিক রমজানের আগেই কমলা আমদানি বন্ধ হবে। আর আমদানি বন্ধ হলে বাজারে দাম বাড়তে শুরু করবে। যারা কোল্ড স্টোরেজে রাখতে পারবেন তারাই বেশি দামে কমলা বিক্রি করবেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের চাহিদার ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ কমলা ভারত ও নেপাল থেকে আমদানি করা হয়। এর মধ্যে ভারত থেকে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ আমদানি করা হয় আর বাকি ১৫ থেকে ২০ ভাগ নেপাল ও চীন থেকে আমদানি করা হয়। আর বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চল অর্থাৎ চট্টগ্রাম, সিলেট এবং রাঙ্গামাটিতে চাষাবাদ হয় বাকি ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমলা। ফলে আমদানি কমে গেলে দাম বেড়ে যাবে।

দেশের সবচেয়ে বড় ফলের বাজার রাজধানীর বাদামতলী বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, একের পর এক ট্রাকভর্তি কমলা, আপেল, আঙ্গুর বাজারে ঢুকছে। আর ট্রাকগুলোকে ঘিরে রাখছেন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। বাজারটিতে ২৮ কেজি ক্যারেটভর্তি ভালো মানের কমলা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায়। মাঝারি মানের কমলা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। রমজানের আগেই প্রতি ক্যারেটে ন্যূনতম ৫০০ টাকা করে বাড়বে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা। 

সরাসরি ভারতের নাগপুর থেকে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ট্রাক কমলা এনে পাইকারি দরে বিক্রি করেন এমডি মেরাজ উদ্দিন। ভারতের নাগপুরের এ ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, কমলার দাম প্রতি ক্যারেটে বাড়তে পারে ৫০০ টাকা। কারণ এখন ঋতু শেষ হয়েছে। আগামী ২৫ তারিখের পর থেকে কমলা আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, কমলা আসা বন্ধ হয়ে গেলে পাকিস্তানি কিনুর দাম বাড়বে। বাড়বে মাল্টার দামও। তবে আপেল, আঙ্গুর ও আনার নিয়মিত আসবে বলেও জানান তিনি।

রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা ও পল্টন এলাকায় ফলের দোকানগুলোতে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ আগে কমলা ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো। তবে এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। দেখতে কমলার মতই কিনু ফল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি দরে। অথচ এই কিনু গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। কিনুর দামে বিক্রি হচ্ছে মাল্টাও। অর্থাৎ প্রতি কেজি মাল্টার দাম ১৫০ টাকা। 

বাড্ডার ফল ব্যবসায়ী এনামুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঋতু শেষের কথা বলে কমলার দাম বাড়ানো হয়েছে। রমজানে কমলা কিনতে হবে ৩০০ টাকা কেজি দরে। কমলার দাম বাড়ায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কিনু ও মাল্টার দাম। তবে তরমুজের দাম কমতে পারে। 

পল্টনের ব্যবসায়ী রিপন সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সামনে রোজা, তাই চাল ও তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। ফল ব্যবসায়ীরা বসে থাকবে নাকি? তারাও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ফলের দাম বাড়াচ্ছে। আমরা তাদের কাছ থেকে এনে বিক্রি করি। দাম বেশি হলে বেশি, আর কম হলে কম দামেই বিক্রি করি।

বাদামতলী বাজারের আড়ৎদার হাজী বরাত মিয়ার ছেলে হাজী মাসুম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সামনে কমলার দাম বাড়বে। তার কারণ কমলা আমদানি নির্ভর ফল। আমরা ভারত ও নেপাল থেকে কমলা আমদানি করি। আগামী মাস থেকে কমলা আমদানি কমে যাবে। আমদানি কমে গেলে বাজারে সংকট হবে। চাহিদার চেয়ে আমদানি কম হলেও দাম বাড়বেই এটাই তো স্বাভাবিক নিয়ম। এ অবস্থায় যারা বেশি মজুদ রাখবে তারাই লাভবান হবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনার বছর ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে মোট ২১ হাজার ৮৮৮ টন কমলা আমদানি করা হয়েছে। তবে তার আগের বছর ২ লাখ ৫০ হাজার ৬৯৭ টন আমদানি করা হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৭৪ টন এবং তার আগের বছরগুলোতে যথাক্রমে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৯২১ টন এবং ১ লাখ ৭৭ হাজার ৪৭৬ টন কমলা আমদানি করা হয়েছে।

এমআই/আরএইচ/ওএফ