ঈদে নতুন পোশাকের সঙ্গে নতুন জুতা অপরিহার্য। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে জুতা কিনতে পছন্দ করেন সবাই। তাই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে রমজানেই বাড়তি অফার দিচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ড। অনলাইন কিংবা অফলাইন যেভাবেই কিনতে চান বিশেষ ডিসকাউন্ট, ক্যাশব্যাক বা গিফট ভাউচারের মতো বাড়তি অফারের ছড়াছড়ি। তারপরও জমজমাট বিক্রির অপেক্ষায় সময় গুণছেন অধিকাংশ জুতার দোকানিরা।

রাজধানীর মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর, বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন এলাকার ভাইব্রেন্ট, বাটা, এপেক্স, বোলিং, বে-সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জুতার দোকান ঘুরে বিক্রেতাদের কণ্ঠে এমন আক্ষেপের সুর শোনা গেছে। কালো, চকোলেট, অ্যান্টিক, সোনালী, রুপালী, মেরুন, টার্কোয়েজ, সাদা ও বেনসন কালারের জুতা-স্যান্ডেল ক্রেতাদের বেশি পছন্দ। এখনো কাঙ্ক্ষিত বিক্রি হচ্ছে না বলেই দাবি করলেন তারা।

পাদুকা শিল্পে দেশের সবচেয়ে বড় বহুজাতিক কোম্পানি বাটা। সারা দেশে ২৪০টি শোরুম রয়েছে। ঈদ উপলক্ষ্যে বাটায় চলছে ১০ থেকে ২০ শতাংশ ক্যাশব্যাক অফার। মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, নগদের ক্রয় করলে ২০০ টাকা পর্যন্ত কুপন এবং ঢাকা ব্যাংক, এমটিবি ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে ক্রয়ে ক্রেতা পাচ্ছেন ১০ শতাংশ, আর ইউসিবিএল ও ডাচ বাংলা ব্যাংকের নেক্সাস পেমেন্টে ক্রেতা পাচ্ছে ১৫-২০ শতাংশ অফার।

>>>দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির আগুন ইফতার বাজারেও

অন্যদিকে অনলাইন কেনাকাটায় সব পণ্যে ২০ শতাংশ ডিসকাউন্ট সুবিধা। আরো রয়েছে ২০ শতাংশ কম দামে গিফট ভাউচার। ঈদকে সামনে রেখে প্রায় ৬০০ নতুন ডিজাইনের জুতা বাজারে এনেছে বাটা। এতকিছুর পরও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা। পাঁচ রমজান পেরিয়ে গেলেও বিক্রি জমজমাট হচ্ছে না বলছেন বিক্রেতারা।

বাটার একটি শোরুমের বিক্রেতা মফিজুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বসুন্ধরা ও যমুনা ফিউচার পার্কে আমাদের সবচেয়ে বড় দুটি শোরুম আছে। ঈদ উপলক্ষ্যে প্রতিটি শোরুমে দৈনিক ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা থাকে। চলতি বছরে করোনার নেতিবাচক কোনো প্রভাবও নেই। তারপরও মনে হচ্ছে মানুষের হাতে ঈদ বাজারের বাড়তি অর্থ নেই। গত বছরের তুলনায়ও বিক্রির সূচক নিন্মগামী। ১৫ রমজানের পর হয়ত ঈদের আমেজ পাওয়া যেতে পারে। 

জুতার আরেক জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ভাইব্রেন্ট ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় অন্যতম। ভাইব্রেন্ট গ্রাহকদের চাহিদা, আধুনিকতা ও সব শ্রেণির মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে ৫০০ এর বেশি মডেলের জুতার কালেকশন রাখছে শোরুমগুলোতে। নারী, পুরুষ ও শিশুদের জন্য জুতা-স্যান্ডেলের পাশাপাশি বিভিন্ন ডিজাইনের লেদার সামগ্রী, ট্রাভেল ব্যাগ, পুরুষদের পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্টসহ অন্যান্য লাইফ স্টাইল সামগ্রীও পাওয়া যাচ্ছে ভাইব্রেন্ট ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোতে।

>>>ফলের দাম আকাশচুম্বী, শুনে ফিরে যাচ্ছেন ক্রেতা

সারা দেশে ভাইব্রেন্টের ২৫টি শাখা রয়েছে। রামপুরা হাজিপাড়ার ভাইব্রেন্টের শোরুম ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম ঈদের বিক্রি নিয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে আমরা দিচ্ছি ১৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট সুবিধা। ক্রেতার ভিড় সেভাবে এখনো দেখা যাচ্ছে না। এই শোরুমে ঈদ উপলক্ষ্যে বিক্রির টার্গেট ৩৬ লাখ টাকার মতো, আমাদের প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হবে কি না সন্দেহ রয়েছে।

এবারের ঈদের চাহিদার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবারের ঈদ উপলক্ষ্যে বাচ্চাদের আইটেম বেশি চলছে। এরপরে আছে নারীদের জুতা-স্যান্ডেল। পাশাপাশি আমাদের পোশাকের আইটেমগুলোও ভালো চলছে। 

একই বক্তব্য পাওয়া গেল জুতা-স্যান্ডেলের ব্র্যান্ড বে, এপেক্স ও বোলিংয়ের বিক্রেতাদের কাছ থেকেও।

সারা দেশে বে-এর ৮৪টি শোরুম আছে। রামপুরার বে’র শোরুম ইনচার্জ রুবেল যদিও আশার কথা শোনালেন। তিনি জানান, বিক্রি প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে বলা যায়। গত বছরের মতোই বে’র পণ্যের চাহিদা রয়েছে। এই শাখায় কোটি টাকার মতো টার্গেট রয়েছে। আশা করছি শতভাগই পূরণ হবে।

>>>ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে ব্রয়লার

ঈদ অফারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শোরুমে বাড়তি কোনো অফার নেই। তবে অনলাইন ক্রয়ে ২৫ ভাগ ছাড় সুবিধা। পাশাপাশি ২ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকার গিফট ভাউচার রয়েছে, যা ২৫ শতাংশ কম দামে কিনতে পারবে। পণ্য কেনাকাটায় ওই ভাউচার ব্যবহার করতে পারবেন ক্রেতারা।

এদিকে অনলাইন কেনাকাটায় এপেক্স দিচ্ছে ২২ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক সুবিধা। ব্র্যান্ডটির সব ধরনের পণ্য ক্রয়ে নগদ, সিটি ব্যাংক, লংকাবাংলা, ডাচ বাংলার নেক্সাসপে, ব্র্যাক ব্যাংক, ইউসিবিএল, যমুনা, এনআরবি ব্যাংক, এবি ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এটিবি, কমিউনিটি ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে ওই সুবিধা পাওয়া যাবে। এছাড়া এপেক্স জুতা কেনাকাটায় ১০ শতাংশ কম মূল্যে মিলছে গিফট ভাউচার। 

>>>দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি : সাধ্যের মধ্যে কোনটা?

ঈদ উপলক্ষ্যে এপেক্স ২০০০ হাজারের মতো নতুন পণ্য বাজারে ছেড়েছে বলে জানিয়েছে মৌচাক শোরুমের বিক্রেতা আনিস।

অন্যদিকে বোলিংয়ের বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বসে আছি। টার্গেটের কাছাকাছিও যেতে পারব না বলে মনে হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষ্যে আমাদের স্ক্র্যাচকার্ড, ক্রেডিট কার্ড, জিপি স্টার ও বিকাশ অফারে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ছাড়ের অফার রয়েছে। আশা করছি সামনে সুদিন আসবে।

আরএম/এমএ