জাল নথিপত্রে রপ্তানির আড়ালে ৮৬টি চালানের বিপরীতে ২১ কোটি টাকা বিদেশে পাচার ও আত্মসাতের অভিযোগে সাবিহা সাইকি ফ্যাশনের মালিক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

বেবি ড্রেস, জিন্স প্যান্ট, শার্ট, লেগিন্স ও শালসহ বিভিন্ন পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব ও নাইজেরিয়ায় রপ্তানি দেখানো হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহ্ মো. আশিকুর রহমান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

চট্টগ্রামের বন্দর থানায় গত ২৪ মার্চ মামলাটি এজাহারভুক্ত করা হয়। গত ৩১ জানুয়ারি শুল্ক গোয়েন্দার অভিযানে অর্থ পাচারের এমন কৌশলের বিষয়টি সামনে আসে।

বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ফখরুল আলম ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, সাবিহা সাইকি ফ্যাশন মোট ৮৬টি পণ্য চালানের বিপরীতে ৯৯৭ মেট্রিক টন মেনস ট্রাউজার, টি-শার্ট, বেবি সেট, ব্যাগ, পোলো শার্ট, জ্যাকেট, প্যান্ট ও হুডি রপ্তানি করে। যার বিনিময় মূল্য ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৭ মার্কিন ডলার বা ২১ কোটি টাকা। ওই টাকা দেশে আসার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্তে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। এরূপ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও পর্যায়ক্রমে অভিযান চলবে।

আসামিরা হলেন- সাবিহা সাইকি ফ্যাশনের মালিক মো. শাকিল, লাইমেক্স লিপার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সরফরাজ কাদের, ওই প্রতিষ্ঠানের কাস্টমস সরকার মো. ওবায়দুর রহমান ও তরুন কান্তি দে, চট্টগ্রামের হালিশহরের বাসিন্দা সাদাব মকবুল ও অজ্ঞাতনামা একজনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ জানুয়ারি শুল্ক গোয়েন্দার একটি টিম চট্টগ্রাম নগরের উত্তর পতেঙ্গা কাটগড় এলাকায় সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড (ওসিএল) ডিপোতে অভিযান চালায়। অভিযানে জালিয়াতির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ১৫টি বিল অব এক্সপোর্টের রপ্তানি কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করা হয়। এরপর এসব বিল অব এক্সপোর্টের রপ্তানি সংক্রান্ত দলিলাদি যাচাই করার জন্য অগ্রণী ব্যাংকে চিঠি পাঠানো হয়। 

গত ২ ফেব্রুয়ারি ব্যাংক জানায়, সাবিহা সাইকি ফ্যাশন তাদের কোনো গ্রাহক নন। বিল অব এক্সপোর্টগুলো অন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের নামে ইস্যু করা হয়েছিল। এতে প্রমাণিত হয় জাল দলিলের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে ও হচ্ছিল। তাই পণ্য চালানগুলোর বিপরীতে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা বৈধ পন্থায় দেশে আসার সুযোগ নেই বিধায় এ ক্ষেত্রে মানিলন্ডারিং সংঘটিত হয়।

চালানগুলোতে টি-শার্ট ও লেডিস ড্রেস রপ্তানির কথা থাকলেও পরীক্ষায় বেবি ড্রেস, জিন্স প্যান্ট, শার্ট, লেগিন্স, শালসহ ঘোষণা ছাড়াও বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যায়। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এই রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ৯৪টি চালানের সন্ধান পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৮৭টি চালানে ৯৯৭ টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। 

অনুসন্ধানকালে রপ্তানিকারকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি জানান, পণ্য চালানগুলোর সঙ্গে তিনি সংশ্লিষ্ট নন। অর্থাৎ জাল নথি ব্যবহার করা হয়েছে।

পণ্যগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, নাইজেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি করে অর্থপাচার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট লিমেক্স সিপার্স লিমিটেডের আইডি নম্বর লক করা হয়েছে।

শিয়া ট্রেডিং কর্পোরেশন, ইমু ট্রেডিং কর্পোরেশন ও ইলহাম নামের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও একই কৌশলে অর্থ পাচারের প্রমাণ পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা। ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩৬১ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

আরএম/ওএফ