জলবায়ুর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে প্রতি বছর প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলারের খুব সামান্যই ছাড় করা হয়েছে। ফলে উন্নয়নশীল দেশের জলবায়ু সংকট মোকাবিলা হুমকিতেই থেকে যাচ্ছে। বিপরীতে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ও জলবায়ু সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর চাহিদা ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

বুধবার (১০মে) রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘জি-৭ সামিট-কল ফর গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভস ফর এনডিং সাপোর্ট ফর ফসিল ফুয়েলস অ্যান্ড এক্সিলারেট দ্য ট্রানজিশন টু রিনিউয়েবল এনার্জি’ শীর্ষক ডায়লগে এসব কথা বলেন বক্তারা। 

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

গোলাম মোয়াজ্জেম তার প্রবন্ধে বলেন, এই সামিটকে কেন্দ্র করে এসব দেশগুলোর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শেষ হচ্ছে। তারা জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বিগ্ন। সংকট মোকাবিলায় এখনই উদ্যোগ নেওয়া দরকার। ন্যাশনাল ডিটারমাইন কনট্রিবিউশন (এনডিসি) যে প্রতিশ্রুতির মধ্যে ছিল তা থেকে সরে যাচ্ছে। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।

তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে অর্থায়নে এখন সবাই গুরুত্ব দিচ্ছে। কয়লা থেকে বেরিয়ে আসতে উন্নত দেশগুলো আরও সময় চাচ্ছে। প্রযুক্তির দিক থেকে জি-৭ দেশগুলো আরও উন্নত প্রযুক্তি হাতে নিয়েছে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলার দিতে পারছে না। অথচ এসব দেশের চাহিদা এখন ট্রিলিয়ন ডলারে যাচ্ছে।

মোয়াজ্জেম বলেন, আমরা বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ, প্রশমন এবং মানিয়ে নিতে জি-৭ দেশগুলোর কাছ থেকে সহায়তা, সমর্থন এবং অর্থায়ন আশা করি। জি-৭ দেশগুলোর উচিত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কয়লা এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসসহ (এলএনজি) জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করা। এলএনজিতে বিনিয়োগ রোধ করা উচিত কারণ এটা কার্বনভিত্তিক জ্বালানি।

প্রবন্ধে তিনি আরও বলেন, জি-৭ দেশগুলোর উচিত নবায়নযোগ্য জ্বালানির অর্থায়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এসব খাতে অর্থায়নের ওপর জোর দেওয়া। একই সঙ্গে নবায়নযোগ্য উন্নত ও স্বল্পমূল্যের প্রযুক্তি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ছড়িয়ে দিতে পারলে বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ শুন্যতে নেমে আসবে।

ফাহমিদা খাতুন তার বক্তব্যে বলেন, জি-৭ সামিটের বেশ কিছু লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। যেমন- গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানো, জীবাশ্ম জ্বালানি কমিয়ে আনা, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর ঘটানো। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে কীভাবে এসব কমানো হবে তার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি। এ সামিটে উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের দাবি তুলে ধরার সুযোগ পায়।

অনুষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেল বলেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উচিত ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্সিয়াল ইনস্টিটিউট (আইএফআই) থেকে আরও বেশি অর্থ আনা। কপ-২৬ এ গঠিত গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড, আইএমএফের রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ট্রাস্ট ও ক্লাইমেট ফাইন্যান্স টাস্কফোর্স থেকে অর্থ আনা জরুরি।

জাপান দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন মি. তাতসুয়া মাচিদা বলেন, বাংলাদেশকে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপের সঙ্গে তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে ২০৪০ সালের লক্ষ্য অর্জন করা যায়।

আরএম/কেএ