পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের শর্তের খাতিরে প্রকল্পে কনসালটেন্ট (পরামর্শক) নিতে হয়। এ খাতে বড় টাকা চলে যায়।

শনিবার (২৭ মে) নগরীর ওয়েস্টিন হোটেলের বলরুমে ‘আইসিসি রাউন্ড টেবিল অন ইনভেস্টমেন্ট ফর ইনফ্রাস্টাকচার ডেভলপমেন্ট’ শীর্ষক গোল টেবিলে তিনি এ কথা বলেন।

উন্নয়ন প্রকল্প প্রসঙ্গে এম এ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বরাবরই আমাদের বলেন, প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় খরচ নয়। এটা সবার জন্যই জেনারেল বার্তা। আমাদের কাছে বার্তা এসেছে আমরাও খরচ কমানোর চেষ্টা করছি। প্রকল্পের অনেক জায়গায় অপ্রয়োজনীয় খরচ হয়ে যায়। অনেক সময় পরিকল্পনা কমিশনেও ধরতে পারি না। আমাদেরও লিমিটেড ক্ষমতা।

বাধ্য হয়ে প্রকল্পে পরামর্শক সেবা নিতে হয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা আগেও দেখেছি নোট কিনলেই মূল বই পাওয়া যেতো। বাংলা বাজারে নোট না নিলে বই দিত না। ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা লোন দেবে না যদি এই কনসালটেন্ট না নেই। যেহেতু আমরা কম সুদে ঋণ নিয়ে থাকি, এজন্য অনেক বিষয় মেনে নিতে হয়।

দেশের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ১২ বছরে দেশে অনেক পজিটিভ মুভমেন্ট হয়েছে। সড়কে দেখলেই আমরা আনন্দিত হই, কতটুকু লাভ হবে এটা দেখি না। সরকার সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে অনেক নজর দিয়েছে। রেলমন্ত্রী বলেছেন, পঞ্চগড় থেকে টেকনাফ রেল হবে এটা স্বপ্নের মতো। তবে আমি মনে করি এটা দ্রুত হওয়া দরকার। চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে দরকার। ডাবল লাইন রেল হচ্ছে। এটা হলেই আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে।

পরিবেশের ক্ষতি করে উন্নয়ন নয় জানিয়ে এম এ মান্নান বলেন, জাতি হিসেবে আমরা সচেতন ছিলাম না। এখন সচেতনভাবে কাজ করছি। ধানের জমি নষ্ট করবো না। সামান্য রেডিও ট্রান্সমিশন অফিস হবে অথচ বিশাল জায়গা নিয়ে বসে আছে, এটা হতে দেব না। জমির সর্বোত্তম ব্যবহার করবো। দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না। জলাভূমি ও প্লাবন ভূমির ক্ষতি করবো না। প্লাবন ভূমিতে ফ্লাইওভার করবো। হাওর অঞ্চলে ফ্লাইওভার করে দেব। প্লাবন ভূমি নষ্ট করবো না। দিরাই-শাল্লা এলাকায় কাজ শুরু করেছি ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য। প্লাবন, চরে পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে এমন অবকাঠামো করবো না। সরকারের সিদ্ধান্ত আমাদের সিদ্ধান্ত।

তিনি আরও বলেন, ঢাকায় যোগাযোগের ব্যাপারে আমরা সতর্ক। ঢাকায় সার্কুলার রোড লন্ডনের আদলে হতে পারে। এটা হলে কিছু উপকার হবে। এটা সিরিয়াসলি পাস হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি। মালয়েশিয়ার রাজনীতির জায়ান্ট হিসেবে পরিচিত মাহাথির মোহাম্মদ। তিনি মালয়েশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রীই শুধু ছিলেন না বরং আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার বলা হয় তাকে।

এসময় শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মাহাথির মোহাম্মদ উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মাহাথিরকে প্রশংসা করা হয়, তাহলে বাংলাদেশের মাহাথির শেখ হাসিনার কেন প্রশংসা করা হবে না। মাহাথির যা করেছেন, শেখ হাসিনা তার থেকে বেশি করেছেন। বাংলাদেশের অবস্থা আরও খারাপ ছিল, শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। 

মন্ত্রী বলেন, চার মেয়াদে সরকার গঠন করে ইন্দিরা গান্ধী বা মার্গারেট থ্যাচারকেও ছাড়িয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে এশিয়ার ‘লৌহ মানবী’ অভিহিত করেছে দ্য ইকোনমিস্ট। ব্রিটিশ এই সাময়িকীর বিশ্লেষণে ১৭ কোটির মানুষের জনবহুল বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য দারিদ্র্য বিমোচনে নেতৃত্ব দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে বেশিরভাগ সময় জিডিপির বার্ষিক গড় হার ছিল সাত শতাংশ। সমকালীন বৈশ্বিক পরিস্থিতির বিবেচনায় এটি অভাবনীয় বলে অভিহিত করেছে ইকোনমিস্ট। এটা আমাদের সবার পড়া দরকার। আমাদের শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার আয়রন লেডি। অনেকে বলছিল, দেশ দেউলিয়া হয়ে যাবে। বাংলাদেশ দেউলিয়া হয়নি। পদ্মাসেতু নিজের টাকায় আমরা বাস্তবায়ন করেছি।

ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশের সভাপতি ইটিবিএল হোল্ডিংস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে গোলটেবিলে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল হক, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ প্রমুখ।

এসআর/এসএম