২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতি পূরণে সরকার ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ঋণ নেবে বলে লক্ষ্য ঠিক করেছে। সরকারের এই ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা নানা সমালোচনা করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, এ ঋণ নিলে বেসরকা‌রি খাতে কোনো সমস্যা হবে না। এছাড়া মূল্যস্ফীতিও বাড়বে না।

শুক্রবার (২ জুন) বিকেলে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর স‌ঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি, বা‌জিণ‌্যমন্ত্রী টিপু মুন‌শি, ‌শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থ সচিব ফা‌তেমা ইয়াস‌মিন প্রমুখ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার সংকট মোকা‌বিলায় প্রায় ২০ বিলিয়ন মা‌র্কিন ডলার বাজারে বিক্রি ক‌রে‌ছে। তার মানে ২ লাখ কোটি টাকা বাজেট থেকে সেন্ট্রাল ব্যাংকে ঢুকে গেছে। এই টাকা যদি বাজারে থাকত তাহলে সরকারের এক লাখ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া কোনো বিষয় হতো না। এখন যেহেতু বাজারে তারল্য সংকট রয়েছে, সেজন্য সরকার বন্ডের মাধ্যমে নিচ্ছে।

‌তি‌নি বলেন, নতুন টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়লে যে মূল্যস্ফীতি বাড়বে তার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ ২ লাখ কোটি টাকা তুলে এনে ৭০ হাজার কোটি টাকা ছাড়লে টাকার সরবরাহ (ক্যাসেল আউট) কম থাকছে।

পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে টাকার সরবরাহ কম দা‌বি ক‌রে গভর্নর ব‌লেন, আমাদের মানি সাপ্লাই যদি দেখেন ওয়ান অব দ্য লোয়েস্ট এই রিজিওনের মধ্যে। জিডিপির মাত্র ৪০ শতাংশ মানি সাপ্লাই। যেটা ইন্ডিয়াতে ডাবল, ৭৬-৭৭ শতাংশ। থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়াতে প্রায় ১০০ শতাংশ। তাই সরকার ঋণ নিচ্ছে বলে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, এটা ঠিক না। মূল্যস্ফীতি বাড়ছে বিশ্ব বাজা‌রে তেলের দাম, গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, অনেকেই বলছেন আমরা লোন নিয়ে চলছি। আইএমএফ থে‌কে সর্বশেষ যে ঋণ নেওয়া হ‌য়ে‌ছে এই অর্থ আমাদের প্রবাসীরা দুই মাসেই দেশে প্রেরণ করে। অর্থাৎ দুই মাসের রেমিট্যা‌ন্সের অর্থ আমরা ঋণ নিয়েছি। এটা খুব একটা বেশি ঋণ নয়।

বা‌জেট ঘাট‌তি পূর‌ণে সরকারের ব্যাংক ঋণ নির্ভরতার বিষয় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ব‌লেন, বাজেটে যে বড় আকারের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে সেটা মেটাতে ব্যাংকের ওপরই নির্ভর করছে সরকার। এক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে বড় ধাক্কা আসবে। অর্থাৎ বেসরকারি খাত প্রয়োজনীয় ঋণ পাবে না। আর যদি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় তাহলে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ব‌লেন, ব্যাংক থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে তার প্রভাব পড়বে। নেতিবাচক প্রভাব পড়বে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে। অতি দরিদ্রদের জন্য সামান্য কিছু থাকলেও খেটে খাওয়া মানুষের জন্য কিছুই নেই। এসব খেটে খাওয়া মানুষের জন্য বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ বাড়ালে কর্মসংস্থান বাড়ত। সঙ্গে বৃদ্ধি পেত উৎপাদন। মূল্যস্ফীতিও কমে আসত। এক কথায় বলতে গেলে এটা ‘চ্যালেঞ্জের মুখে গতানুগতিক বাজেট’।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট সংসদে পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। প্রস্তাবিত বা‌জে‌টে আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।

এসআই/এসএসএইচ/