হোম কনজাম্পশন বন্ড লাইসেন্সের অপব্যবহার রোধে কড়া শর্ত আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। স্থানীয় শিল্পগুলি শুল্কমুক্ত কাঁচামালে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে- এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির শুল্ক, রফতানি ও বন্ড শাখা এমন একটি আদেশ সম্প্রতি জারি করেছে।

এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব মাে. মশিয়ার রহমান মন্ডলের সই করা আদেশে হোম কনজাম্পশন বন্ড লাইসেন্সের অপব্যবহার রোধ ও বন্ড লাইসেন্সধারীদের কাছ থেকে বকেয়া আদায়ে জোর দেওয়া হয়েছে। শনিবার (২৭ মার্চ) এনবিআরের জনসংযোগ দফতর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

প্রসঙ্গত, দি কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯-এর ধারা-১৩ অনুযায়ী বন্ড লাইসেন্স প্রদান করা হয়। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান পিরিয়ডে বন্ড প্রথা প্রচলিত ছিল। সে সময় মূলত ব্যবসা সহজ ও সহনীয় করার লক্ষ্যে হোম কনজাম্পশন বন্ড প্রথা প্রচলিত হয়।

লাইসেন্সের অধীনে স্থানীয় শিল্পের মধ্যে চিনি, ভেজ্য তেল, চামড়া, ইস্পাত, প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, বৈদ্যুতিক, ইলেকট্রনিক্স এবং তামাক প্রস্তুতকারকসহ বেশ কয়েকটি কারখানা হোম কাস্টমসের বন্ড সুবিধা ভোগ করে থাকে। তবে বর্তমানে কোনো নতুন লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না।

আদেশে বলা হয়েছে, হোম কনজাম্পশন বন্ড লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানগুলো কাস্টমস আইনের আওতায় আমদানি পর্যায়ে কাঁচামালে শুল্ক-কর পরিশােধ না করে পণ্য চালান খালাস করে থাকে। প্রতিষ্ঠানগুলো লাইসেন্সের শর্ত ও কাস্টমস আইনের ৯৮ ধারা অনুযায়ী ছয় মাসের মধ্যে নথিপত্র দাখিল করে শুল্ক কর পরিশােধ করে গুদাম থেকে পণ্যের চালান খালাস করে থাকে। এ অবস্থায় দেশীয় পণ্য ভােগের জন্য হােম কনজাম্পশন বন্ড লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আমদানি প্রাপ্যতা নির্ধারণ ও বকেয়া আদায়ের ক্ষেত্রে নিম্নরূপ শর্ত ও সীমা আরােপ করা হলো।

শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- হােম কনজাম্পশন বন্ড লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুমােদিত বার্ষিক অথবা সাময়িক আমদানি প্রাপ্যতার ভিত্তিতে কাঁচামাল আমদানি করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা, ওয়্যারহাউসের ধারণ ক্ষমতা, পূর্ববর্তী বৎসরে বার্ষিক কাঁচামালের ব্যবহার প্রভৃতি তথ্য উপাত্ত বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট কমিশনার বার্ষিক আমদানি প্রাপ্যতার পরিমাণ নির্ধারণ করবেন। তবে বার্ষিক আমদানি প্রাপ্যতা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতার ৮০ শতাংশের বেশি হবে না। যদি অতিরিক্ত প্রাপ্যতার প্রয়ােজন হয় তাহলে জাতীয় রাজস্ব বাের্ডের অনুমােদন নিতে হবে।

১৯৬৯ সালের কাস্টমস আইনের আওতায় ওয়্যারহাউস পরিদর্শনে কাঁচামাল অবৈধ অপসারণ, কম বা বেশি পাওয়া, বিধি বহির্ভূত পণ্য আমদানি অথবা অন্য কোনো কারণে সৃষ্ট দাবিনামা অনিষ্পন্ন থাকলে তার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমদানি প্রাপ্যতা প্রদান করা যাবে না।

কোনো দাবিনামা অনিষ্পন্ন থাকলে এবং এই ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বার্ষিক বা সাময়িক আমদানি প্রাপ্যতার আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট কমিশনার আমদানিকৃত পণ্য চালানের ওপর আরােপনীয় শুল্ক ও করের সমপরিমাণ পণ্য খালাসের আদেশ দেবেন। একই সঙ্গে ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে চালানের জন্য প্রযােজ্য রাজস্ব পরিশােধ করে ব্যাংক গ্যারান্টি অবমুক্ত করা যাবে।

প্রতিষ্ঠান দাবিনামার দায় স্বীকার করে প্রযােজ্য শুল্ক-কর, অর্থদণ্ড, সুদ ও বকেয়া পরিশােধের লক্ষ্যে কিস্তি সুবিধার আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট কমিশনার পাওনা পরিশােধে সর্বোচ্চ ৬টি সমান মাসিক কিস্তিতে তা মঞ্জুর করতে পারবেন। তবে বিলম্বে পরিশােধের জন্য শর্ত অনুযায়ী প্রযােজ্য সুদ পরিশােধ করতে হবে।

ইতােপূর্বে জারিকৃত এ সংক্রান্ত সব আদেশ বাতিল করা হলো বলেও নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে।

আরএম/এইচকে