ঈদ-উল আজহার ছুটির বাকি মাত্র চার দিন। মন্ত্রীর নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও এখনো জুন মাসের প্রথম ১৫ দিনের বেতন হয়নি ৯ হাজার ৮১৩ কারখানায়। আর ঈদ বোনাস দেওয়া হয়নি ৮ হাজার ১৬২টি কারখানার শ্রমিকদের। আরও অবাক করা বিষয় হচ্ছে এখনো মে মাসের বেতন হয়নি ৭০২ কারখানার শ্রমিকদের।

পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ, বেপজা,পাটকল এবং শিল্পাঞ্চল পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (২২ জুন) বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময়ে ৯ হাজার ৯১৫টি কল-কারখানার মধ্যে চলতি বছরের মে মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে ৯ হাজার ২১৩টি কল-কারখানায়। যা শতাংশের হিসেবে ৯২ দশমিক ৯২ শতাংশ। অর্থাৎ ৭০২টি কারখানার শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা হয়নি। যা শতাংশের হিসেবে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।

মে মাসের বেতন

তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ১ হাজার ৬২৪ কারখানার মধ্যে মে মাসের বেতন হয়েছে ১ হাজার ৫০২টি কারখানায়। অর্থাৎ ১২২টি কারখানায় এখনো মে মাসের বেতন হয়নি।

নিটওয়ার মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত ৬৯৯টি কারখানার মধ্যে ৬৩৮ কারখানার বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। ৬১টির বেতন পরিশোধ করা হয়নি। বিটিএমইএর ৩৫৯টি কারখানার মধ্যে ৩৩৩ কারখানার বেতন পরিশোধ করা হয়েছে, বাকি আছে ২৬টির। বেপজার ৩৯২টির মধ্যে ৩৮৬ কারখানার বেতন পরিশোধ করা হয়েছে, বাকি আছে ৬টির।

তবে পাটকল ৯০টিরই বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য খাতের ৬ হাজার ৭৫১টি কারখানার মধ্যে ৬ হাজার ২৬৪টির বেতন দেওয়া হয়েছে, আর পরিশোধ করা হয়নি ৪৮৭টির। 

জুনের প্রথম ১৫ দিনের বেতন

এদিকে ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে জুন মাসের প্রথম ১৫ দিনের বেতন পরিশোধ করেছে ১০২টি কারখানা। অর্থাৎ জুন মাসের ১৫ দিনের বেতন পাননি ৯ হাজার ৮১৩টি কারখানার শ্রমিকরা।

তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ১ হাজার ৬২৪ কারখানার মধ্যে জুন মাসের বেতন হয়েছে ১৩টি কারখানায়। অর্থাৎ ১ হাজার ৬১১টি কারখানায় এখনো জুন মাসের ১৫ দিনের বেতন হয়নি।

নিটওয়ার মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত ৬৯৯টি, বিটিএমইএর ৩৫৯টি এবং বেপজার ৩৯২টি কারখানার মধ্যে ৩৮৫টির শ্রমিকদের জুন মাসের ১৫ দিনের বেতন দেওয়া হয়নি।

তবে ৯০টি পাটকলের মধ্যে ১১টি পাটকলের শ্রমিকদের জুনের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। এ খাতের ৭৯টি কারখানার শ্রমিকদের বেতন বাকি রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য খাতের ৬ হাজার ৭৫১টি কারখানার মধ্যে ৭১টিতে বেতন দেওয়া হয়েছে। আর বেতন দেওয়া হয়নি ৬ হাজার ৬৮০টি কারখানার শ্রমিকদের।

অর্থাৎ ৯ হাজার ৯১৫টি কারখানার মধ্যে মোট ১০২টি কারখানায় বেতন হয়েছে। যা শতাংশের হিসেবে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। এখনো ৯ হাজার ৮১৩টি কারখানার শ্রমিকদের জুন মাসের ১৫দিনের বেতন দেওয়া হয়নি।

ঈদ বোনাস

৯ হাজার ৯১৫টি কারখানার মধ্যে ১ হাজার ৭৫৩টি কারখানায় ঈদ উল-আজহার বোনাস দেওয়া হয়েছে। এখনো ৮ হাজার ১৬২টি কারখানার শ্রমিকরা বোনাসের অপেক্ষায় রয়েছেন।

এসব কারখানার মধ্যে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ১ হাজার ৬২৪ কারখানার মধ্যে বোনাস হয়েছে ৩৭২টি কারখানায়। অর্থাৎ ১ হাজার ২৫২টি কারখানায় ঈদ বোনাস দেওয়া হয়নি।

নিটওয়ার মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত ৬৯৯টি কারখানার মধ্যে ২২৩টি কারখানার শ্রমিকদের বোনাস দেওয়া হয়েছে। এখনো ৪৭৬টি কারখানায় ঈদ বোনাস দেওয়া হয়নি।

বিটিএমইএর ৩৫৯টির মধ্যে বোনাস দেওয়া হয়েছে ১০৩টিতে। আর বোনাস দেওয়া হয়নি ২৫৬টি কারখানা শ্রমিকদের। বেপজার ৩৯২টি কারখানার মধ্যে ১৯৭টির শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। এখনো বাকি রয়েছে ১৯৫টি কারখানা।

পাটকল খাতের ৯০টির মধ্যে শ্রমিকদের ঈদের বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে ২২টি কারখানায়। এ খাতের বাকি রয়েছে ৬৮টি কারখানার বোনাস।

এছাড়া অন্যান্য খাতের ৬ হাজার ৭৫১টি কারখানার মধ্যে ৮৩৬ টির বোনাস দেওয়া হয়েছে। আর বোনাস দেওয়া হয়নি ৫ হাজার ৯১৫টি কারখানা শ্রমিকদের।

উল্লেখ্য, জাতীয় ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (টিসিসি) ৭৫তম এবং আরএমজি টিসিসির ১৫তম সভা অনুষ্ঠিত হয় ৬ জুন। সেখানে শিল্পকারখানার বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে আলোচনা করেন সংশ্লিষ্টরা। সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। সভা শেষে তিনি ঈদুল আজহার ছুটির আগেই শ্রমিকদের ঈদ বোনাস এবং জুন মাসের ১৫ দিনের বেতন দেওয়ার জন্য মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান।

এমআই/এমজে