আন্তর্জাতিক আইএসটি’র সনদ পেল লাল তীরের সিড ল্যাব
আন্তর্জাতিক বীজের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সিড টেস্টিং অ্যাসোসিয়েশনের (আইএসটিএ) স্বীকৃতি ও সনদ পেয়েছে লাল তীর সিড লিমিটেড-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান এমএনটি সিড টেস্টিং ল্যাবরেটরি। দেশের প্রথম কোনো বীজ পরীক্ষাগার এ সনদ পেল।
শুক্রবার (২৩ জুন) গাজীপুরের বাসনে লাল তীর সিড লিমিটেড-এর প্রধান গবেষণা কেন্দ্রে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এ সময় লাল তীর সিড লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব আনাম এবং জেনারেল ম্যানেজার ড. আব্দুর রশিদসহ প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, লাল তীরের এমএনটি বীজ পরীক্ষাগার দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতে বীজের মান নির্ণয়কারী পরীক্ষাগারগুলোর মধ্যে প্রথম বিশ্বের সর্বোচ্চ বীজমান প্রত্যয়ন সংস্থার স্বীকৃতি ও সনদ পেয়েছে। ফলে এ পরীক্ষাগারের বীজের গুণমানের প্রত্যয়পত্র বিশ্বের সব দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতে গ্রহণযোগ্য হবে।
বিজ্ঞাপন
লাল তীর সিড লিমিটেড প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৯৫ সালে। যা বেসরকারি খাতে প্রথম গবেষণাভিত্তিক বীজ কোম্পানি। এ পর্যন্ত লাল তীর ৩৫টি বিভিন্ন ফসলের ১৯৯টি জাত উদ্ভাবন করেছে, যার মধ্যে ৮৭টি হাইব্রিড। পাশাপাশি দেশি জাত সংরক্ষণে এ পর্যন্ত লাল তীর বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিভিন্ন ফসলের ১ লাখ ৩০ হাজার জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করেছে।
লাল তীর সিড লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হলে, জমি বাড়াতে হবে, না হয় উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের জমি বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সেজন্য সবাই উৎপাদনশীলতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে, আমরাও সে কাজটি করছি।
তিনি বলেন, দেশের সার্বিক উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আমাদের ল্যাবের এ স্বীকৃতি বড় প্রভাব ফেলবে। পাশাপাশি বিদেশে বীজ রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন দুয়ার উন্মোচন হবে। এটি দেশের বীজ উন্নয়ন ও আমাদের পরীক্ষাগারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি।
তিনি আরও বলেন, এক সময় দেশে মানসম্পন্ন বীজের অভাবে ফসল উৎপাদনে একটি বড় বাধা ছিল। স্থানীয় জার্মপ্লাজম ব্যবহার করে বিভিন্ন ফসলের হাইব্রিড ও উন্মুক্ত পরাগায়িত উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়ন করাই ছিল আমাদের এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে শুরু থেকেই গবেষণা ও প্রজননের মাধ্যমে জাত উন্নয়নের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্বীকৃতির পর এখন আমাদের বিশ্বমানের স্বীকৃতিগুলোও আসছে।
লাল তীরের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল দেশীয় শাকসবজির জাত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবিত উন্নত ফসলের বীজ দেশে উৎপাদন করা এবং কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী বীজ সরবরাহ করা।
লাল তীর সিডের মালিক জানান, আমরা এখন আবহাওয়া সহনশীল বীজ উৎপাদনে বেশি জোড় দিচ্ছি। বীজের ফসল স্বাদ গন্ধ আমাদের উপযোগী ও কৃষক-ভোক্তার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় এমন বীজ তৈরি করা হচ্ছে। এখন দেশে উচ্চফলনশীল জাতের পেঁয়াজের বীজ উদ্ভাবন করতে পেরেছি। এ জাতের পেঁয়াজ দ্বিগুণ ফলন দিচ্ছে। বর্তমানে দেশের পেঁয়াজ আবাদের ৩০ শতাংশ জমিতে নতুন এ জাতের বীজ রোপণ করা হলে পেঁয়াজের ঘাটতি থাকবে না। বেশি জায়গায় আবাদ করা গেলে পেঁয়াজ রপ্তানিও করতে পারব।
লাল তীরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব আনাম বলেন, বাংলাদেশে উৎপাদিত লাল তীরের বীজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় রপ্তানি হচ্ছে।
তিনি জানান, ২০১৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল সিড টেস্টিং অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য পদ অর্জন করার পর থেকে আমাদের পরীক্ষাগার তাদের সব পদ্ধতি-প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বীজের গুণগতমান পরীক্ষা করে আসছে। এ সংস্থা ২০১৫ সাল থেকে দীর্ঘ সাত বছর আমাদের কার্য-প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি যাচাই-বাছাই ও বহুমুখী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ২০২৩ সালের মে মাসে বীজ পরীক্ষাগারকে বিশ্ব মানসম্পন্ন হিসেবে স্বীকৃতি সনদ অনুমোদন করেছে।
এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৮৩টি দেশের ১৩০টি ল্যাবরেটরি ইন্টারন্যাশনাল সিড টেস্টিং অ্যাসোসিয়েশনের স্বীকৃত এবং বীজের মান নির্ণয় ও সনদ দেওয়ার জন্য অনুমোদিত। এসব পরীক্ষাগার আন্তর্জাতিক বীজ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বীজের গুণমানের সনদপত্র (কমলা ও নীল) ইস্যু করার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত। এ সনদ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।
এসআই/এফকে