রূপালী ব্যাংকের মুন্সিগঞ্জের নওপাড়া শাখায় নগদ অর্থ গ্রহণ ও প্রদান সংক্রান্ত কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন একমাত্র ক্যাশিয়ার ইউসুফ শেখ। দায়িত্বরত অবস্থায় একদিন চা খাওয়ার কথা বলে ব্যাংক থেকে পালিয়ে যান তিনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে পাওয়া যায়নি।

তখন ব্যাংক ব্যবস্থাপকের সন্দেহ হলে ব্যাংকের আরও দুই কর্মকর্তাকে দিয়ে ক্যাশ মিলাতে গিয়ে ৬১ লাখ ৭৯ হাজার ৭৯ টাকা ঘাটতি পাওয়া যায়।

ছয় মাস আগে ঘটে যাওয়া এমন ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান শেষে ক্যাশিয়ার ইউসুফ শেখের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আহসান উদ্দিন বাদী হয়ে কমিশনের নারায়ণগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন। দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এজাহারে বলা হয়, ইউসুফ শেখ ২০১৬ সাল থেকে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের রূপালী ব্যাংকের নওপাড়া শাখায় অস্থায়ী ভিত্তিতে সহকারী অফিসার (গ্রেড-২) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি সহকারী অফিসার হিসেবে ব্যাংকের একই শাখায় যোগ দেন। ব্যাংকের নগদ অর্থ গ্রহণ ও প্রদানে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় চা খাওয়ার কথা বলে পালিয়ে যান। সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যাংকে আর ফিরে না আসায় সন্দেহ হয় ব্যাংক ব্যবস্থাপকের। পরে দুই কর্মকর্তাকে দিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ক্যাশ মিলাতে গিয়ে ৬১ লাখ ৭৯ হাজার ৭৯ টাকা ঘাটতি পাওয়া যায়। পরে বিষয়টি শাখা ব্যবস্থাপক ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

বিভাগীয় তদন্তে দেখা যায়, ঘটনার আগের কার্যদিবস অর্থাৎ ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ব্যাংকের নগদ তহবিলের ক্লোজিং ব্যালেন্স ছিল ৩৮ লাখ ৬৪ হাজার ১৯১ টাকা। এরপর ১১ ডিসেম্বর রোববার নগদ গ্রহণ করা হয় আরও ৮১ লাখ ৫১ হাজা ১৭৬ টাকা। সেদিন মোট নগদ তহবিল দাঁড়ায় ১ কোটি ২০ লাখ ১৫ হাজার ৩৬৭ টাকা। একই দিন নগদ প্রদান করা হয় ২০ লাখ ৮০ হাজার ৮৮০ টাকা। সুতরাং সমাপনী নগদ তহবিল থাকার কথা ছিল ৯৯ লাখ ৩৪ হাজার ৪৮৬ টাকা। কিন্তু সমাপনী নগদ তহবিল পাওয়া যায় ৩৭ লাখ ৫৫ হাজার ৪০৭ টাকা। ঘাটতি পাওয়া যায় ৬১ লাখ ৭৯ হাজার ৭৯ টাকা। এই পরিমাণ টাকা আসামি ইউসুফ শেখ বিভিন্ন অপকৌশল ও প্রতারণার মাধ্যমে তছরুপ ও আত্মসাৎ করে ব্যাংক থেকে পালিয়ে যায় বলে আপাতত দৃষ্টিতে প্রতীয়মান হয়েছে। এ ঘটনার পর ইউসুফ শেখকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনায় ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর লৌহজং থাকায় একটি সাধারণ ডায়েরি (ডিজি) করেন। পরে তা দুর্নীতি দমন কমিশনে তদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

আসামি ইউসুফ শেখ ব্যাংকে কর্মরত থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার, অপকৌশলে ব্যাংক থেকে ওই টাকা তছরূপ ও আত্মসাৎ করে পলাতক রয়েছে, যা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়। মামলায় আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

আরএম/জেডএস