আওতা বাড়ালে করের হার কমানো সম্ভব
ডিসিসিআই আয়োজিত ওয়েবিনার
আওতা যত বাড়ানো যাবে ততই করের হার কমানো সম্ভব হবে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। শনিবার (৩ এপ্রিল) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা : ব্যবসা পরিচালন সূচকে অন্যতম অনুষঙ্গ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে সরকার বেশ কিছু প্রয়োজনীয় সংস্কারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে এবং আগামীতে তা অব্যাহত থাকবে। আমাদের জিডিপিতে করের অবদান খুবই কম এবং যত বেশি করের আওতা বাড়ানো যাবে ততই করের হার কমানো সম্ভব হবে। এটি আমাদের ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় কমাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, গত অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রায় ৫৫ হাজার নতুন করদাতাকে করের আওতায় নিয়ে আসতে পেরেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের সব বন্দরসমূহের সক্ষমতা বেড়েছে, তবে এ ক্ষেত্রে আরও উন্নয়নে জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা মোকাবিলার জন্য সরকার মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে এবং গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে আরও বেশি গুরুত্বারোপসহ বিশেষ বরাদ্দ বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এছাড়াও তিনি মামলা পরিচালনার দীর্ঘসূত্রিতা নিরসনকল্পে ‘মামলার সময় ব্যবস্থাপনা’ উন্নয়নের প্রতি জোরারোপ করেন।
বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, সরকার অনেক সময় বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা সত্ত্বেও ব্যাংক, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট মহলের নিকট তা যথাসময়ে না পৌঁছানোর জন্য জরিপের সময় কম পয়েন্ট পেতে হয়। এতে সংস্কার করেও তেমন লাভ হয় না। তিনি এজন্য যেকোনো সংস্কারের সংবাদ দ্রুততম সময়ে ব্যবসায়ী মহলসহ সব স্তরে যেন সবাই প্রচার করে তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিজ্ঞাপন
ওয়েবিনারের স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বাংলাদেশে বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তিতে সাধারণত প্রায় ৪ বছর সময় লেগে যায়, তবে পৃথিবীর অনেক দেশ বাণিজ্য বিষয়ক আইনি প্রক্রিয়ার এ ধরনের দীর্ঘসূত্রিতা কমাতে সংশ্লিষ্ট আইনের যথাযথ প্রয়োগ, কোর্ট কার্যক্রমের অটোমেশন, ইলেকট্রনিক পেমেন্ট সিস্টেমের প্রবর্তন, বিশেষায়িত বাণিজ্যিক কোর্ট চালুকরণ এবং এডিআর কার্যক্রমের সম্প্রসারণের ওপর অধিক হারে জোরারোপ করছে।
২০১৯ সালে প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০৫ এবং প্রতিবেদনে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর সমক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোরারোপ করা হয়। তাই প্রতিযোগিতার সক্ষমতার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নয়নে বেসরকারিখাতের অংশগ্রহণে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার জানান, বাণিজ্য বিরোধ বিষয়ক মামলা পরিচালনায় ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে যার আওতায় ই-ফাইলিং, প্রমাণাদি সংরক্ষণে ডিডিটাল ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হবে। ফলে এ ধরনের বিরোধ দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে। বিদ্যমান দেউলিয়াত্ব আইন-১৯৯৭ সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তি সহজতর করার জন্য সরকার ঢাকা ও চট্টগ্রামে ‘কমার্শিয়াল কোর্ট’ ও কমার্শিয়াল এপিলেট কোর্ট স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও সংস্থাসমূহের সমন্বয় খুবই জরুরি। সেই সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনার সূচকে উন্নয়নে সরকার ও বেসরকারিখাতকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে উৎপাদনশীল খাতে ব্যবহারের তাগিদ দেন।
ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাত্তার অ্যান্ড কোং-এর প্রধান মো. সামির সাত্তার। আরও বক্তব্য রাখেন ডিসিসিআই জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এন কে এ মবিন ও সহসভাপতি মনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
আরএম/এইচকে