কঠোর বিধিনিষেধ আসছে, এমন খবরে শনিবার বিকিকিনি বেড়ে যায় মার্কেটগুলোতে | ছবি- ঢাকা পোস্ট

আগামীকাল সোমবার থেকে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে চলবে দেশ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সামাল দিতে সাতদিন গণপরিবহনের চলাচল বন্ধের পাশাপাশি বাজার-মার্কেট, হোটেল-রোস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।

এমন খবরে হঠাৎ বিক্রি বেড়ে যায় রাজধানীর শপিংমলসহ ফ্যাশন হাউসগুলোতে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার পাশাপাশি অনেকে ঈদ ও বৈশাখের নতুন পোশাক কিনতে শনিবার দুপুরের পর মার্কেটগুলোতে ভিড় জমান।

ফলে হঠাৎ ফ্যাশন হাউসগুলোতে বিক্রি বেড়ে যায়। ‘জেন্টেল পার্ক’ নামের ফ্যাশন হাউসের আউটলেটগুলোতে অর্ধবেলায় (দুপুরের পর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত) প্রায় ৪৮ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়। যদিও রোববার (৪ এপ্রিল) মার্কেটগুলোতে তেমন ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি।

কথা হয় রাজধানীর বেইলি রোডের নাভানা টাওয়ারে অবস্থিত জেন্টেল পার্ক ফ্যাশন হাউসের ম্যানেজার কামরুল হাসানের সঙ্গে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, গতকাল (শনিবার) সকাল থেকে তেমন ক্রেতা ছিল না। দুপুরে যখন শোনা গেল কঠোর বিধিনিষেধ দিচ্ছে সরকার, এরপরই ক্রেতারা আসতে শুরু করেন। প্রথমে তারা ভেবেছিলেন, রমজানে হয়তো দোকানপাট বন্ধ থাকবে। তাই রমজান ও বৈশাখের কেনাকাটা একসঙ্গে করতে ভিড় করেন। বিক্রিও ভালো হয়েছে।

রোববার পাল্টে যায় চিত্র। অধিকাংশ মার্কেট ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে | ছবি- ঢাকা পোস্ট

আমাদের শো-রুমে গতকাল অর্ধবেলায় প্রায় দেড় লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। অন্য শো-রুমগুলোতেও বেশ ভালো বিক্রি হয়েছে— বলেন তিনি।

প্রায় একই বিকিকিনির তথ্য দিয়েছেন রাজধানীর খিলগাঁওয়ে অবস্থিত জেন্টেল পার্ক শো-রুমের বিক্রয়কর্মীরা। তারা জানান, বর্তমানে সারাদেশে জেন্টেল পার্কের ৪৮টি শো-রুম রয়েছে। গড়ে প্রতিটি শো-রুমে এক লাখ টাকার মতো পণ্য বিক্রি হয়েছে।

এদিকে, শনিবারের বিক্রিতে সন্তুষ্ট হলেও রোববার সকাল থেকে অধিকাংশ মার্কেট ছিল ক্রেতাশূন্য। রাজধানীর মৌচাক, মালিবাগ, খিলগাঁও, শান্তিনগরসহ বেশ কয়েকটি শপিংমল ঘুরে তেমন ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি। অলস সময় পার করতে দেখা যায় বিক্রেতাদের।

রাজধানীর শান্তিনগর টুইন টাওয়ারে অবস্থিত ‘ক্যাটস আই’ শো-রুমের ম্যানেজার তুষার হতাশা প্রকাশ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছর করোনার কারণে ব্যবসার চরম ক্ষতি হয়। এবার আশায় ছিলাম বৈশাখ ও রমজানের ঈদ উপলক্ষে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। এরই মধ্যে দোকানে নতুন কাপড় এসে গেছে। কিন্তু আর হলো না। গতকাল (শনিবার) ক্রেতার দেখা মিললেও আজ শূন্য। আগামীকাল (সোমবার) থেকে দোকান বন্ধ হবে বলে শুনতেছি। কী হবে আমাদের? লস আর লস।

মৌচাকের ফুটপাতে টি-শার্ট বিক্রি করেন জুয়েল, বেচাবিক্রি বন্ধ হচ্ছে ভেবে চিন্তায় পড়েন তিন | ছবি- ঢাকা পোস্ট 

মৌচাকের ফুটপাতে টি-শার্ট বিক্রি করেন জুয়েল মাহমুদ। বাহারি টি-শার্টের পসরা সাজিয়েছেন তিনি। বলেন, এবার আর রক্ষা হবে না। গত বছর দোকান বন্ধ করে বাবা-মাকে নিয়ে গ্রামে থাকতে হয়েছিল। করোনা কমলে জমানো টাকা দিয়ে ফের ব্যবসা শুরু করি। কিন্তু আবারও  লকডাউন। এবার একেবারে পথে বসতে হবে। 

‘সরকার বড় বড় শিল্পমালিকদের জন্য সবকিছু করে। আমাদের মতো ছোটখাটো ব্যবসায়ীদের দিকে ফিরে তাকায় না। হয়তো আর বাঁচা হবে না’— বলেন জুয়েল।

আরএম/এমএআর/