এ বুথের চার মেশিনের মাত্র একটিতে আছে টাকা/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

দেশে চলমান করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে দেশব্যাপী কার্যকর হওয়া কঠোর বিধিনিষেধের ফলে ব্যাংকগুলো থেকে নগদ টাকা উত্তোলনের হিড়িক পড়েছে। এতেই বিপাকে পড়েছে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক। বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকটির এটিএম (অটোমেটেড টেলার মেশিন) বুথে টাকার ঘাটতি দেখা গেছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা। কর্তৃপক্ষও বিষয়টি স্বীকার করেছে।

তারা বলছে, করোনার কারণে দেশব্যাপী কঠোর বিধিনিষেধ জারি ও কার্যকরের পর সবাই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। জমা দিচ্ছে কম। ফলে ব্যাংক থেকে বুথে টাকাও কম আসছে।

গ্রাহকদের অভিযোগ, সোমবার (৫ এপ্রিল) সকাল থেকে রাজধানীর বাড্ডা এলাকার ডাচ্‌-বাংলার বুথে টাকা নেই। ফলে টাকা উত্তোলন করতে এসে এক বুথ থেকে আরেক বুথে যাচ্ছেন তারা।

সকাল ১০টায় ব্যাংকটির মেরুল বাড্ডা বুথে এসেছেন মুরগি ব্যবসায়ী রুহুল আমিন। সেখানে গিয়ে দেখেন বুথে টাকা নেই। নিরাপত্তাকর্মী এ ব্যবসায়ীকে জানান, গতকাল রাত থেকে বুথে টাকা নেই।

জরুরি দরকারে রুহুল আমিনকেও গ্রামের বাড়িতে ৩০ হাজার টাকা পাঠাতে। সেজন্য এই বুথে অপেক্ষা না করে দ্রুত মধ্যবাড্ডা লিঙ্ক রোড এলাকার বুথে আসেন সকাল সাড়ে ১০টায়। আসতেই বুথের নিরাপত্তাকর্মী জানালেন, বুথে টাকা নেই।

প্রহরী জানালেন, টাকা উত্তোলন করতে হলে গুলশান অথবা উত্তর বাড্ডা এলাকার বুথে যেতে। রুহুল আমিনের কাছে ব্যাংকের চেক বই না থাকায় টাকা ওঠানোর জন্য গুলশানের বুথের দিকে যাত্রা শুরু করলেন। সেখানেও তিনটি বুথের মধ্যে টাকা আছে মাত্র একটিতে। প্রায় আধাঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পর টাকা তোলেন। এরপর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বাড়িতে পাঠান।

বাড্ডা পোস্ট অফিস এলাকার এ বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বিপদের মধ্যে বিপদ। ৩০ হাজার টাকা ওঠানোর জন্য তিন বুথে যেতে হয়েছে। দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে।’

সকাল ১১টায় বাড্ডা লিঙ্ক রোড এলাকার ডাচ-বাংলার বুথে গিয়ে দেখা গেছে, নিরাপত্তাকর্মী বুথের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি বাড্ডার গোদারাঘাট এলাকা থেকে আসা দুই গ্রাহককে বললেন, ‘বুথে টাকা নেই’। ওই দুই ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘জ্বালা আর ভালো লাগে না। যেখানে যাই, সেখানেই টাকা দরকার। কিন্তু এখন বুথে এসেও টাকা পাই না’।

এ বুথের নিরাপত্তাকর্মী মিজানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে বুথে টাকা নেই। কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, দেখি কী হয়।’

এরপর উত্তর বাড্ডার বুথে গিয়ে দেখা গেছে, বুথটিতে চারটি মেশিনের মধ্যে তিনটিতেই টাকা নেই। সেখানে সামাজিক দূরত্ব না মেনে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন গ্রাহকরা।

লাইনে দাঁড়িয়ে বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন আমেরিকান লাইফ ইনস্যুরেন্সের (আলিকো) বাড্ডা জোনের কর্মকর্তা মুরাদ আহমেদ। জানতে চাইলে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ডাচ্‌-বাংলার লিঙ্ক রোডের বুথে গিয়ে দেখি টানা নেই। সেখান থেকে ৪০ টাকা খরচ করে এখানে এসেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি সাড়ে ১০ হাজার টাকা ওঠাবো বলে দুটি বুথে গিয়েছি। এখানে এসে আধাঘণ্টা অপেক্ষা করে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা উঠালাম।’

জানতে চাইলে নাম না প্রকাশের শর্তে উত্তর বাড্ডা এলাকার বুথের দায়িত্বে থাকা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘গতকাল বিকেল থেকে আজ সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বুথে টাকা ছিল না। আমি ব্যাংকে জানানো পর একটি মেশিনে টাকা দেওয়া হয়েছে। আর বাকি তিনটি ফাঁকা রয়েছে।’

এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লকডাউনের খবরে গতকাল বিকেলে মুহূর্তের মধ্যে দুই কোটি টাকা উঠিয়ে নেয় মানুষ। সাধারণত বুধ থেকে এই টাকা উত্তোলন হতে ২-৩ দিন লাগে। ফলে রোববার বিকেল থেকে টাকা নেই বুথে।’

এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সকালে অনেক রিকোয়েস্ট (অনুরোধ) করে একটি মেশিনে কিছু টাকা ঢুকিয়েছি। নাহলে এখন আপনারা কেউ টাকা উত্তোলন করতে পারতেন না।’

বাকি তিনটি মেশিনে টাকা আসবে কি না- জবাবে তিনি বলেন, ‘এখনও কিছু বলতে পারছি না।’

এ বিষ‌য়ে জান‌তে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কাশেম মো. শিরিন ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবেদুর রহমান সিকদারের মোবাইল ফোন ও হোয়াটস অ্যাপে কয়েকবার কল করা হলেও তারা ধরেননি। এসএমএস পাঠালেও কোনো উত্তর দেননি।

এমআই/এফআর