রমজান মাস শুরুর আগেই ইফতারের জন্য প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ, ছোলা, বেগুন, শসা ও লেবুসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। মাত্র একদিনের ব্যবধানে এসব পণ্যের দাম কেজিতে বেড়েছে পাঁচ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম আরও বাড়তে পারে। কাল অর্থাৎ মঙ্গলবার পণ্যের সঙ্কট দেখা দিতে পারে। একদিকে করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ, অন্যদিকে রমজান- এ কারণেই হয়তো পণ্যের দাম বাড়ছে।

সোমবার (১২ এপ্রিল) রাজধানীর সেগুনবাগিচা, মালিবাগ ও বাড্ডা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, একদিনের ব্যবধানে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা কেজিতে। একদিন আগে অর্থাৎ রোববার একই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে।

পেঁয়াজের পাশাপাশি রসুনও কেজি প্রতি ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজিতে। আর ৭০ টাকা কেজি দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।

পিয়াজু, আলুর চপ এবং বেগুনি তৈরির জন্য ব্যবহৃত ১০০ টাকা কেজির বেসন বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকায়। আলুর দাম ৩-৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২২-২৮ টাকা কেজি দরে। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে বেগুনের। ৪০-৫০ টাকা কেজির বেগুন ৬৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

এগুলোর পাশাপাশি বুটের ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজিতে। আর অ্যাংকরের ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭০টাকা কেজিতে। কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে মানভেদে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজিতে, যা একদিন আগেও ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজিতে। এছাড়াও শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায় আর কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি দরে।

লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৭০ টাকায়। গত কয়েকদিন আগেও ৩০-৪০ টাকা হালি ছিল লেবুর দাম। শরবতের জন্য অপরিহার্য চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকা কেজি দরে। তবে আগের কেনা থাকলে ৭০ টাকায়ও বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।

খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা কেজি দরে। তবে মধ্যম মানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়াও ফলের মধ্যে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা কেজি দরে। আপেল ২০ টাকা বেড়ে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা ১৮০ টাকা কেজি দরে। দেশি পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৯০ টাকা কেজি দরে।

বায়তুল মোকাররম এলাকার খেজুর ব্যবসায়ী রোকন উদ্দিন মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার খেজুর সস্তা। অনান্যবারের চেয়ে কম দামে বিক্রি করছি। রমজানকে কেন্দ্র করে আগেই খেজুর কিনেছিলাম। এখন তো হঠাৎ করে লকডাউন শুরু হয়েছে। তাই কাস্টমার পেলেই অল্প লাভেই ছেড়ে দিচ্ছি।

ব্যাংক কর্মকর্তা মোজ্জাম্মেল হোসেন লেয়াকত ঢাকা পোস্টকে বলেন, অন্যবারের চেয়ে খেজুরের দাম একটু কমই মনে হচ্ছে। রোজায় সবাই ইফতার করবো এই জন্য তিন কেজি ভালো মানের খেজুর নিলাম। দাম কত রাখলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৮০০ টাকা। অর্থাৎ ৬০০ টাকা কেজি দরে মরিয়ম খেজুর কিনলেন।

সেগুন বাগিচার কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন বলেন, আলু, পেঁয়াজ, বেগুন আর লেবুর দাম বেড়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সামনে রোজা। আর রোজায় এগুলোর চাহিদা বেশি। আর সে জন্য দামও বেড়েছে। তিনি বলেন, রোজা শুরুর দিন থেকে আরও বাড়তে পারে।

পেঁয়াজ ব্যবসায়ী লুৎফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোজার সঙ্গে লকডাউন। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়বেই। দুদিন পরে কিনবেন কী, মালই তো পাবেন না।

বাড্ডার কাঁচাবাজারে আসা কারখানা শ্রমিক রিপন মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, জিনিসের দাম শুনলে গায়ে আগুন জ্বলে। মনডায় কয় বাড়ি গিয়া এগুলার চাষ করি। কী আর করা? দাম বাড়লেও আলু পেঁয়াজ কিনতে হয়, কমলেও কিনতে হয়। খাইয়া তো বাঁচা লাগবে।

এমআই/আরএইচ