কেউ ৫ কেজি, কেউ ৩ কেজি করে পণ্য নিচ্ছেন। নেই কোনো দরদাম, নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাইও।

নিত্যপণ্যের দোকান ও কাঁচাবাজারে ক্রেতাদের পণ্য ক্রয়ের হিড়িক পড়েছে। ভরদুপুরে ক্রেতাদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রেতারা। কোনো দরদাম নেই, যে দাম হাঁকা হচ্ছে তাতেই কিনে নিচ্ছেন ক্রেতা। এতে হাসি ফুটেছে বিক্রেতাদের মুখে। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পণ্য নিয়ে বাসায় ফিরছেন অনেক ক্রেতা। বাজারগুলোতে আজ মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি।

মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর বাড্ডা এলাকার মুদিরদোকান ও কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। নিত্যপণ্যের মধ্যে পেঁয়াজ, আলু, ছোলার পাশাপাশি শসা, টমেটো, বেগুন এবং মাছ-মাংসের দোকানগুলোতে তুলনামূলক বেশি ভিড় লক্ষ করা গেছে। এছাড়া খেজুর ও মুড়ির দোকানেও মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।

ক্রেতারা বলছেন, সকালে ভিড় বেশি হবে ভেবে দুপুরে আসলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাজার করতে এসে পড়লেন মানুষের জটলায়। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাত পোহালে শুরু হচ্ছে রোজা। এছাড়া ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করায় খুচরা ক্রেতারাও পাইকারি দরে বেশি করে মাল নিচ্ছেন।

মধ্যবাড্ডা কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত দু-তিনদিনের তুলনায় আজ ক্রেতাদের উপস্থিতি বেশি। সকাল থেকে বেশ বিকিকিনি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আজ টার্গেট করে পাঁচ বস্তা পেঁয়াজ এনেছি। দুপুর ১২টার মধ্যে তিন বস্তা শেষ। বিকেল নাগাদ বাকি দুই বস্তাও শেষ হয়ে যাবে। পেঁয়াজের পাশাপাশি আলু, বেসন, ছোলা, আদা ও রসুনসহ বিভিন্ন মসলা কিনছেন ক্রেতারা।

মোবারক হোসেন বলেন, আগে ক্রেতারা জিনিসের দাম জিজ্ঞাসা করতেন। এরপর দরদাম করে পণ্য কিনতেন। কিন্তু আজ শুধু পাঁচ কেজি, তিন কেজি করে মাল নিচ্ছেন। কোনো দরদাম নাই।

সকাল অথবা বিকেলে ভিড় হবে ভেবে দুপুরে আসা। তারপরও জনসমাগম এড়ানো গেল না

বাড্ডার হাফেজি মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা মহসিন উদ্দিন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, দোকানদার আমার পরিচিত। এছাড়া চাঁদ উঠলে কাল থেকে রোজা। এ কারণে কোনো জিনিসের দাম জিজ্ঞাসা করিনি। তিনি আরও বলেন, গত সপ্তাহ পেঁয়াজ কিনেছি ৩০ টাকা কেজি দরে। আজ কিনেছি ৪০ টাকায়। কোথাও কোথাও ৪৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।

একদিকে রোজা, অন্যদিকে লকডাউন। মালামালের সংকট হতে পারে এমন শঙ্কায় অনেক মানুষ পণ্য বেশি করে কিনে মজুত করছেন বলে জানান বাড্ডা পাঁচতলা বাজারের ব্যবসায়ী রিপন হায়দার। তিনি বলেন, ‘আমরা হুজুগে বাঙালি। কাল থেকে মাল পাওয়া যাইব না— এমন ভাইবা অনেকেই বেশি বেশি করে কিনছেন। আমরা বলছি, এবার মালের সংকট হবে না। কিন্তু তারা (ক্রেতারা) মানছেন না, বেশি দামেই কিনে নিচ্ছেন।’

‘কেউ এক সপ্তাহ আবার কেউ ১৫ দিনের বাজার করে নিচ্ছেন’ উল্লেখ করে রিপন হায়দার বলেন, আমরা ক্রেতাদের মাস্ক পরতে বলছি। দূরে দূরে দাঁড়াতে বলছি কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। কেউ সামাজিক দূরত্ব মানছেন না। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়াচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, পাঁচজনে মাল দিচ্ছি, ভিড় কমছেই না। এ ভিড় সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকতে পারে। এমন পরিস্থিতি আগে কখনও দেখিনি।

রুমন আহমেদ নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘গতবারের চেয়ে এবার লকডাউন আরও বেশি কড়া হবে। হুনতাছি (শুনেছি) ঘর থেকে বাইরে গেলে পুলিশ পাস লাগব। তাই যা প্রয়োজন একবারে লইয়া লইছি (নিয়ে নিচ্ছি)।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে। আলু ২০-২৫ টাকা, করলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০-৮০টাকা, শসা ৬০ টাকা, বেগুন ৬০-৮০ টাকা, টমেটো ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৮০ টাকা হালি। পটল ও ঝিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতে।

খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১৫০-৬০০ টাকা কেজি দরে। মুড়ি ৭০-৭৫ টাকা কেজি, ইসবগুলের ভুসি বিক্রি হচ্ছে হাজার টাকা কেজি দরে। চিনির কেজি নেওয়া হচ্ছে ৭০ টাকা।

এদিকে, বাজারে বেড়েছে মুরগির দাম। দুদিন আগেও ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। ১৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া পাকিস্তানি কক বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৫০০ টাকা পিস। আর গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৭০-৫৮০ টাকা কেজি দরে।

মাছের মধ্যে বেড়েছে রুইয়ের দাম। বাজারে ২৩০-৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে রুই।

নিত্যপ্রয়োজনীয় ৬ পণ্যের দাম নির্ধারণ

নিত্যপ্রয়োজনীয় ছয়টি পণ্যের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদফতর। কৃষি বিপণন আইনে এ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। পণ্যগুলো হলো- তেল, ডাল, ছোলা, খেজুর, চিনি ও পেঁয়াজ।

তেল : খুচরা বাজারে এক লিটার বোতলের দাম ১৩১ থেকে ১৪১ টাকা। আর পাঁচ লিটার বোতলের দাম ৬৬০ টাকা।

মসুর ডাল : পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি ডালের দাম (উন্নত) ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। আর খুচরা বাজারে ৯৭ থেকে ১০৩ টাকা।

পেঁয়াজ : বাজারে পেঁয়াজের সর্বোচ্চ পাইকারি দাম প্রতি কেজি ৩৫ টাকা ও খুচরা ৪০ টাকা।

ছোলা : পাইকারি বাজারে ছোলার দাম কেজিপ্রতি ৫৮ থেকে ৬২ টাকা ও খুচরা বাজারে ৬৩ থেকে ৬৭ টাকা।

চিনি : পাইকারি বাজারে পরিশোধিত মূল্য ৬৩ টাকা ও খুচরা বাজারে ৬৭ থেকে ৬৮ টাকা।

খেজুর : পাইকারিতে সাধারণ মানের খেজুর ৬০ থেকে ৭০ টাকা ও খুচরায় ৮০ থেকে ১০০ টাকা। মাধ্যম মানের পাইকারিতে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা ও খুচরায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতির কারণে আগামী ১৪ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তবে এ সময়ে উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ছয় ঘণ্টা খোলা রাখা যাবে। গতকাল সোমবার (১২ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

এমআই/এমএআর/জেএস