বাজারে মানুষের ভিড়

করোনা সংক্রমণ রোধে শুরু হয়েছে সরকারের সাতদিনের বিধিনিষেধ। সাতদিনের প্রথম দিন বুধবার (১৪ এপ্রিল) রাজধানীর বাড্ডা এলাকার কাঁচাবাজারে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। এখানে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। বাজার করতে আসা লোকজন কিংবা ব্যবসায়ী, সবার মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পূর্বনির্ধারিত স্থানেই বসানো হয়েছে বাজার। সরকার ঘোষিত উন্মুক্ত স্থানে কোনো দোকান বসানো হয়নি। তাছাড়া দোকানগুলোতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই। পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব মানতেও দেখা যাচ্ছে না কাউকে।

স্বাভাবিকভাবে দেখলে মনে হবে, অন্যান্য দিনের চেয়ে যেন দ্বিগুণ মানুষ বাজার করতে এসেছেন। ফলে বেঁধেছে জটলা। ধাক্কাধাক্কি কিংবা গা ঘেঁষাঘেঁষি না করে সামনে পেছনে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বাজারের মতই একই দৃশ্য এলাকার অলিগলির মুদির দোকানগুলোতেও।

ইফতার পণ্য যেমন- খেজুর, মুড়ি, ছোলা, চিনি, তরমুজ, পেয়ারা, কলা ইত্যাদি কিনতে অনেকেই ভিড় করছেন। এছাড়া পেঁয়াজ, আলু, শসা, টমেটো, বেগুন, মাছ-মাংস ও দুধ-ডিম বিক্রি হচ্ছে বেশি। দাম-দর করারও সময় নেই। বিক্রেতারা যে দাম চাচ্ছেন, সেই দামেই পণ্য কিনছেন ক্রেতারা। 

পাঁচতলা কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা এনামুলের কাছে তিনবার দাম জিজ্ঞাসার পর বললেন, শসার কেজি ৭০ টাকা। আবারও ক্রেতা রকিব হাসান জিজ্ঞেস করেন কত হলে পারবেন? ব্যবসায়ী কোনো উত্তর দিলেন না। আরও দুজন ক্রেতাকে টমেটো, বেগুন এবং ঢেঁড়স দিলেন।

বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে রকিব আবার জিজ্ঞেস করলেন, একদাম কত? ব্যবসায়ীর কোনো সাড়া মেলেনি। আবারও জানতে চাইলে বলেন, ৭০ টাকা হলে নেন, না হলে চলে যান। বিরক্ত করছেন কেন?

জানতে চাইলে এ ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল থেকে জিনিসের দাম বলতে বলতে গলায় পানি নেই। এখন কথা বলতে পারছি না। মন চাচ্ছে দোকান বন্ধ করে চলে যাই। কিন্তু পারছি না। মালগুলো নষ্ট হবে এজন্য।

একই বাজারের মুদি দোকানদার ওয়ালিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাধারণত আমি একাই দোকানদারি করি। কিন্তু আমার সাথে আজ দুলাভাই ও চাচাত ভাই দোকানে, তারপরও ক্রেতাদের মাল দিয়ে শেষ করতে পারছি না। করোনার কথা চিন্তাও করার সময় নেই এমন পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, সামাজিক দূরত্ব তো দূরের কথা, মাস্কও পড়ছেন না ক্রেতারা। তাতের একটু দূরে সরে যেতে বললে তারা বলেন, আগে সদাই (পণ্য) দেন, পরে কথা কন। কেউ কারও কথা শুনছেন না। এ নিয়ে আমরা ভয়ে আছি। পেটের দায়ে দোকান খুলেছি। কিন্তু অসুস্থ হলে তো আর কেউ দেখতে আসবেন না।      

মধ্যবাড্ডা কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী মুসলেম উদ্দিন বলেন, আজকে যেন ঈদের বাজার। বেচাকেনার জন্য সকাল থেকে দম ফেলার সময় পাইনি। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ছুটির দিনের পাশাপাশি প্রথম রমজানের কারণে ক্রেতাদের ভিড় ছিল বেশি। কাল থেকে ভিড় কমে যাবে।

গত ১২ এপ্রিল করোনোভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দ্বিতীয় দফা কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। এতে বলা হয়, ১৪ এপ্রিল ভোর ছয়টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত সব গণপরিবহন, অফিস-আদালত বন্ধ থাকবে। তবে এ সময়ে কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল নয়টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

এরপর সরকার ঘোষিত সর্বাত্মক বিধিনিষেধে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনই জানায় স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারের দেওয়া নির্দেশনা মেনে বুধবার থেকে খোলা থাকবে কাঁচাবাজার। মঙ্গলবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশেনের মেয়রের নেতৃত্বে আলাদা বৈঠক করে দুই সিটি করপোরেশন। বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়সহ কাঁচাবাজারের বিষয়েও আলোচনা হয়। বৈঠকে উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, লকডাউনে বিধিনিষেধ যাতে বাস্তবায়ন হয়, বাজারগুলো যাতে তিনটার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়, সকাল নয়টার আগে না খোলে, সবকিছুই ভালোভাবে দেখতে হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটির করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুন বলেন, সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন শুরু করেছি। বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজার খোলা স্থানে নেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।

ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, গুলশান ১ ও ২ এর কাঁচাবাজার পাশের সড়কে খোলা স্থানে বাজার বসানো হয়েছে। বনানী কাঁচাবাজার ফুড কোর্টের জায়গায় বসানো হবে। মহাখালীতে খালি জায়গা না থাকায় তারা ভেতরেই বসবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে। বাড্ডা এলাকার বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে।

এমআই/আরএইচ