সিপিডির ভার্চুয়াল সংলাপে কানিজ আলমাস খান

চার শতাংশ কেন, বিনা সুদে হলেও ঋণ নেবেন না পার্লার শিল্পের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। করোনা মহামারির মতো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ব্যবসায় টিকে থাকতে প্রকৃত অর্থে প্রণোদনা চান তারা।

বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ভার্চুয়াল সংলাপে এসব দাবি তুলে ধরেন পারসোনা হেয়ার অ্যান্ড বিউটি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও নারী উদ্যোক্তা কানিজ আলমাস খান।

‘সরকারের আর্থ-সামাজিক পুনরুদ্ধার ব্যবস্থা : নারীরা কতটা উপকৃত হয়েছে’ শীর্ষক আয়োজিত সংলাপে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সিপিডির সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক ড. রওনক জাহান সংলাপ পরিচালনা করেন।

কানিজ আলমাস বলেন, আমাদেরকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সেটা যেন টিকে থাকে, সেজন্য সরকারের সহযোগিতা চাই। অনেক পার্লার বন্ধ হয়ে গেছে। পুনরায় চালু করার জন্য ঋণ নিচ্ছেন না অনেক পার্লার মালিক। কারণ তারা ভয় পাচ্ছেন, ব্যবসা চালু হবে কি না। অন্যদিকে ঋণ নিতে যে বিভিন্ন কাগজপত্রের নামে ব্যাংকগুলো থেকে চাহিদাপত্র থাকে, তা কাটিয়ে অনেকেই ঋণ নিতে আগ্রহী নন।

তিনি বলেন, আমি নিজে এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমাদের অনেক ক্ষুদ্র পার্লার ব্যবসায়ীকে সরকারের প্রণোদনা হিসেবে ঋণের বিষয়টি বলেছি। অধিকাংশ আমাকে বলেন, শুধু চার শতাংশ কেন, বিনা সুদে হলেও ঋণ নেবেন না। তারা ঋণ চান না, প্রকৃত অর্থে প্রণোদনা চান। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা যারা আছেন, তাদের প্রনোদনা দিলে ব্যবসা চালু করতে পারবেন।

পার্লার ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে কানিজ আলমাস আগামী তিন বছরের ভ্যাট ও কর মওকুফ করার দাবি জানান। তিনি বলেন, ন্যুনতম বাসা ভাড়া দিয়ে হলেও অনেকে পার্লার ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু ভ্যাট ও কর দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা অনেকেরই সম্ভব হবে না। এছাড়া ১৫ শতাংশ ভ্যাট এর বিষয়েও নতুন করে বিবেচনা করার প্রয়োজন আছে।

কানিজ আলমাসের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাংলাদেশে ৭৮ ভাগ নারী ইনফরমাল অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এটি দেশের জন্য ভালো সংবাদ। তিনি (কানিজ আলমাস) কিছু দাবি করেছেন। ভ্যাট ও কর মওকুফের বিষয়টি আমি সরকার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করব।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক লীলা রশীদ নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে বলেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে প্রণোদনার মধ্যে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ন্যুনতম বরাদ্দ ছিল পাঁচ শতাংশ। এখন পর্যন্ত ৭২ শতাংশ ঋণ ছাড় করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ দশমিক ১০ শতাংশ নারীদের জন্য ঋণ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ৬২ শতাংশ ঋণ নারী উদ্যোক্তাদের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো দিয়েছে। বাকি ২৮ শতাংশ দিয়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। এখানে বেসরকারি ব্যাংকগুলো তাদের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ঠিক করে ঋণ দিয়েছে। অন্যদিকে সরকারি ব্যাংকগুলো সরকারের উদ্দেশ্য পূরণে নারী উদ্যোক্তা মূলত ঋণ দিয়েছে।

তিনি বলেন, কাগজে কলমে নারী উদ্যোক্তা হলেও প্রতিষ্ঠান চালান পুরুষ উদ্যোক্তা। অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রী বা মার নামে প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। আসলে মূলত নারী উদ্যোক্তাদের সুবিধা নেওয়ার জন্য কাগজে-কলমে রাখা হয়েছে।

সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘের নারী প্রতিনিধি শোকো ইশিকাওয়া, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর. এফ. হোসেন ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম প্রমুখ।

আরএম/আরএইচ