করের আওতা বাড়াতে নতুন ২৮টি কর অঞ্চল স্থাপন করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর নতুন কর অঞ্চলের এলাকা ও প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন করা হয়েছে। তিন ধাপে কর অঞ্চল স্থাপনের পাশাপাশি নিয়োগ দেওয়া হবে প্রায় আট হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী।

প্রথম ধাপে আগামী জানুয়ারিতে রাজধানীতে কর অফিস স্থাপনের কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি ওই অফিস পরিচালনায় প্রায় চার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগেরও প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। এ সময় নতুন কর অঞ্চল- ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৪ ও ২৫; কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট; ই-ট্যাক্স ব্যবস্থাপনা ইউনিট এবং উৎসে কর ব্যবস্থাপনা ইউনিটের কার্যক্রম শুরু হবে।

দ্বিতীয় ধাপে নতুন সৃষ্ট চট্টগ্রামের কর অঞ্চল- ৫ ও ৬, কর অঞ্চল- কক্সবাজার, ফরিদপুর, নরসিংদী, যশোর, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর ও নোয়াখালীর কার্যক্রম শুরু হবে।

তৃতীয় ধাপে আন্তর্জাতিক ইউনিট, কর অঞ্চল- পাবনা, কর আপিল অঞ্চল- ৫ ও ৬, চট্টগ্রামের কর আপিল অঞ্চল- ২ এবং রংপুরের কর আপিল অঞ্চলের কার্যক্রম শুরু হবে।

প্রথম ধাপে আগামী জানুয়ারিতে রাজধানীতে কর অফিস স্থাপনের কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি ওই অফিস পরিচালনায় প্রায় চার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগেরও প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। এ সময় নতুন কর অঞ্চল- ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৪ ও ২৫; কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট; ই-ট্যাক্স ব্যবস্থাপনা ইউনিট এবং উৎসে কর ব্যবস্থাপনা ইউনিটের কার্যক্রম শুরু হবে

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের কর প্রশাসন ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সদস্য সৈয়দ মুহাম্মদ আবু দাউদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুরাতন এলাকাগুলো পুনর্গঠন করে নতুন ২৮টি কর অঞ্চলের বিষয়ে আদেশ জারি হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে রাজধানীতে ১৩ কর অঞ্চলের কার্যক্রম শুরু হবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে বাকি কর অঞ্চলগুলোর কার্যক্রম বাস্তবায়ন হবে। ওই কর অফিসগুলো পরিচালনায় প্রায় আট হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হবে।

‘প্রথম ১৩ কর-অঞ্চলের সবই রাজধানীতে স্থাপিত হচ্ছে। জানুয়ারিতে কর অঞ্চলগুলোর কার্যক্রম শুরু হবে। প্রথম পর্যায়ে বিদ্যমান কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে কার্যক্রম চলবে। পরবর্তীতে অফিসগুলো পরিচালনায় প্রায় চার হাজারের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হবে। যদিও লোকবল নিয়োগে একটু সময় লাগতে পারে।’

এনবিআর সূত্রে আরও জানা যায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে গত ১৮ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত আদেশ জারি হয়েছে।

যে সব এলাকা নিয়ে নতুন ২৮ কর অফিস গঠিত

নতুন অফিসগুলোর মধ্যে ১৩টি ঢাকার বিভিন্ন এলাকা নিয়ে গঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট, ই-ট্যাক্স ব্যবস্থাপনা ইউনিট এবং উৎসে কর ব্যবস্থাপনা ইউনিট নামের বিশেষায়িত তিন অফিসের কার্যক্রম শুরু হবে। বাকিগুলো অঞ্চলভিত্তিক কর অফিস হবে।

গোয়েন্দা ও তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আয়কর ফাঁকি উদঘাটন এবং রাজস্ব পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট, আয়কর বিভাগের ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশন, যাবতীয় কার্যাবলি নিয়ে ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিট ও উৎস কর ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন এবং উৎসে কর মনিটরিং সম্পর্কিত যাবতীয় কার্যাবলি নিয়ে গঠিত হবে উৎসে কর ব্যবস্থাপনা ইউনিট।

ঢাকা জেলায় ইংরেজি বর্ণমালার A ও U দ্বারা শুরু লিমিটেড কোম্পানি, L দিয়ে শুরু ঠিকাদার শ্রেণির কর মামলা এবং ডাক্তার ও নার্স ব্যতীত ঢাকা জেলায় কর্মরত ইংরেজি বর্ণমালার N থেকে Z পর্যন্ত বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ২২নং ওয়ার্ড, ২৩ ও ২৪নং ওয়ার্ডের কিছু এলাকা, ২৫, ২৬, ৩৫ ও ৩৬নং ওয়ার্ডগুলো নিয়ে গঠিত হবে কর অঞ্চল- ১৬।

ইংরেজি বর্ণমালার L ও S দ্বারা শুরু লিমিটেড কোম্পানি, P ও Q দিয়ে শুরু ঠিকাদার শ্রেণির কর মামলা এবং ঢাকা জেলায় কর্মরত ইংরেজি বর্ণমালার L থেকে S পর্যন্ত বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ২৩ ও ২৪নং ওয়ার্ডের কিছু এলাকা, ২৯, ৫৫, ৫৬ ও ৫৭নং ওয়ার্ডগুলো নিয়ে গঠিত হবে কর অঞ্চল- ১৭।

ইংরেজি বর্ণমালার J ও M দ্বারা শুরু লিমিটেড কোম্পানি, T দিয়ে শুরু ঠিকাদার শ্রেণির কর মামলা এবং ঢাকা জেলায় কর্মরত ইংরেজি বর্ণমালার J থেকে M পর্যন্ত বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মামলা, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৬২, ৬৫, ৬৬, ৬৭ ও ৬৮নং ওয়ার্ডগুলো গঠিত হবে কর অঞ্চল- ১৮।

ইংরেজি বর্ণমালার P দ্বারা শুরু লিমিটেড কোম্পানি, K দিয়ে শুরু ঠিকাদার শ্রেণির কর মামলা এবং ঢাকা জেলায় কর্মরত ইংরেজি বর্ণমালার P বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মামলা, বিভিন্ন চামড়া, কাগজ ও ইলেকট্রিক প্রতিষ্ঠান এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ২১, ৩৭, ৩৮, ৩৯ ও ৩নং ওয়ার্ডগুলো গঠিত হবে কর অঞ্চল- ১৯।

ইংরেজি বর্ণমালার T দ্বারা শুরু লিমিটেড কোম্পানি, M দিয়ে শুরু ঠিকাদার শ্রেণির কর মামলা এবং ঢাকা জেলায় কর্মরত ইংরেজি বর্ণমালার I বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মামলা, বিভিন্ন চামড়া, কাগজ ও ইলেকট্রিক প্রতিষ্ঠান এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৫০, ৫৯, ৬০ ও ৬১নং ওয়ার্ডগুলো নিয়ে গঠিত হবে কর অঞ্চল- ২০।

ইংরেজি বর্ণমালার B দ্বারা শুরু লিমিটেড কোম্পানি, U ও V দিয়ে শুরু ঠিকাদার শ্রেণির কর মামলা এবং ঢাকা জেলায় কর্মরত ইংরেজি বর্ণমালার B বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মামলা, বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ১৭, ৪০, ৪১ ও ৪২নং ওয়ার্ডগুলো নিয়ে গঠিত হবে কর অঞ্চল- ২১।

ইংরেজি বর্ণমালার E দ্বারা শুরু লিমিটেড কোম্পানি, N দিয়ে শুরু ঠিকাদার শ্রেণির কর মামলা এবং ঢাকা জেলায় কর্মরত ইংরেজি বর্ণমালার E বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মামলা এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৪৯ ও ৫০নং ওয়ার্ডগুলো নিয়ে গঠিত হবে কর অঞ্চল- ২২।

ঢাকা জেলার N ও O ইংরেজি বর্ণমালা দ্বারা শুরু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ২৭, ২৮, ২৯, ৩১ ও ৩২ ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হবে ঢাকার কর অঞ্চল- ২৩।

ঢাকা জেলার সকল আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট, বার্ধক্য তহবিল, ইংরেজি বর্ণমালার R দ্বারা শুরু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৫১, ৫২, ৫৩, ৫৪ ও ৫৮নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হবে ঢাকার কর অঞ্চল- ২৪।

চলতি বাজেট বক্তৃতায় রাজস্ব প্রশাসন সম্প্রসারণের ইঙ্গিত দিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, রাজস্ব প্রশাসনের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নানাবিধ সংস্কার কার্যক্রম চলমান। এনবিআরের অধীনে সব প্রশিক্ষণ একাডেমিকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সেবার মান উন্নয়ন ও করের আওতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজস্ব প্রশাসনের সম্প্রসারণের কার্যক্রমও চলমান। ২০১১ সালে সর্বশেষ আয়কর প্রশাসনের কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে ৩১টি কর অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই সময়ের তুলনায় এখন করদাতার সংখ্যা ছয় গুণ বেড়েছে। যার ধারাবাহিকতায় করের নতুন অফিসের কার্যক্রম বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে

ঢাকা জেলায় অবস্থিত ইংরেজি বর্ণমালার F, Q ও X দিয়ে শুরু লিমিটেড কোম্পানি ও কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৪৮, ৬৩, ৬৪, ৬৯, ৭০, ৭১ ও ৭২নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হবে ঢাকার কর অঞ্চল- ২৫।

ঢাকার বাইরের নতুন কর অঞ্চল

আন্তর্জাতিক ‍চুক্তি, ট্রান্সফার প্রাইসিং ও মানি লন্ডারিং সম্পর্কিত কার্যাবলি নিয়ে আন্তর্জাতিক কর ইউনিট, চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত ইংরেজি বর্ণমালার B,T, I ও V দিয়ে শুরু লিমিটেড কোম্পানি ও কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১১, ১৫, ২২, ২৪, ২৮ ও ৩২নং ওয়ার্ড নিয়ে চট্টগ্রামের কর অঞ্চল- ৫; চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত ইংরেজি বর্ণমালার K, N, P ও Z দিয়ে শুরু লিমিটেড কোম্পানি ও কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১, ২, ৩, ১৬, ৩৪ ও ৩৬নং ওয়ার্ড নিয়ে চট্টগ্রাম কর অঞ্চল- ৬; কক্সবাজার জেলার করদাতা নিয়ে কর অঞ্চল- কক্সবাজার; নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জ জেলার সকল ধরনের করদাতাদের জন্য কর অঞ্চল- নরসিংদী; গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলা নিয়ে কর অঞ্চল- ফরিদপুর; যশোর, নড়াইল, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলা নিয়ে কর অঞ্চল-  যশোর; কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার কোম্পানি ও বৈতনিকসহ সকল করদাতা নিয়ে কর অঞ্চল- কুষ্টিয়া; দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলা নিয়ে কর অঞ্চল- দিনাজপুর এবং নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী জেলা নিয়ে কর অঞ্চল- নোয়াখালী গঠিত হবে।

তৃতীয় ধাপের কর অঞ্চল

পাবনা ও নাটোর জেলার ব্যক্তি ও কোম্পানির করদাতা নিয়ে কর অঞ্চল- পাবনা; কর আপিল অঞ্চল- ৫ ও ৬; চট্টগ্রামের কর আপিল অঞ্চল- ২ এবং রংপুরের কর আপিল অঞ্চলের কার্যক্রম শুরু করা হবে।

চলতি বাজেট বক্তৃতায় রাজস্ব প্রশাসন সম্প্রসারণের ইঙ্গিত দিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, রাজস্ব প্রশাসনের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নানাবিধ সংস্কার কার্যক্রম চলমান। এনবিআরের অধীনে সব প্রশিক্ষণ একাডেমিকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সেবার মান উন্নয়ন ও করের আওতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজস্ব প্রশাসনের সম্প্রসারণের কার্যক্রমও চলমান। ২০১১ সালে সর্বশেষ আয়কর প্রশাসনের কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে ৩১টি কর অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই সময়ের তুলনায় এখন করদাতার সংখ্যা ছয় গুণ বেড়েছে। যার ধারাবাহিকতায় করের নতুন অফিসের কার্যক্রম বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে।

আরএম/এমএআর/