দেশে দুর্যোগের ঝুঁকি ও সংকট মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করবে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর এবং একশনএইড বাংলাদেশ।

শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) এফবিসিসিআই মিলনায়তনে এ সংক্রান্ত এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ‘রোল অব দ্য প্রাইভেট সেক্টর ইন ডিজাস্টার রিস্ক অ্যান্ড ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক ওই কর্মশালা যৌথভাবে আয়োজন করে ডিপার্টমেন্ট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, এফবিসিসিআই ও একশনএইড বাংলাদেশ। পরে এ বিষয়ে এফবিসিসিআই এবং একশনএইড বাংলাদেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিডার (বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি) এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান। এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান।  

সূচনা বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অনেকখানি এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। আগের যেকোন সময়ের চেয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আরও বেশি দক্ষ ও কর্মক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। শুধু সরকার বা বেসরকারি খাত নয়, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্ব ও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশের এই অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।

মাহবুবুল আলম আরও বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে শিল্পায়নের কোনো বিকল্প নেই। আর এজন্য মূল বিষয় হলো কমপ্লায়েন্স। কারণ ভবন বা কারখানার কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত না হলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। তবে লাইসেন্স ইস্যুকারি সংস্থাগুলোরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে বলে জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, ২০১৮ সাল থেকে শিল্পসহ বিভিন্ন খাত নিয়ে কাজ করছে এফবিসিসিআই, যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিডার এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, আজকের এই কর্মশালা এলডিসি উত্তর বাংলাদেশের প্রস্তুতিমূলক কাজের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর মধ্য দিয়ে এফবিসিসিআই তার জাতীয় দায়িত্বের একটি অংশের কাঠামোবদ্ধ কাজের সূচনা করেছে। এফবিসিসিআই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের শীর্ষ সংগঠন হিসেবে এক্ষেত্রে তার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন এবং নিজ উদ্যোগের মাধ্যমে তা প্রমাণ করেছে। তবে, দুর্যোগ মোকাবিলায় ভালো পণ্য আমদানি ও ব্যবহারের ওপর জোর দেন লোকমান হোসেন মিয়া।

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, একশনএইড বাংলাদেশ দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের ব্যক্তি খাতের দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং সাড়া দান সক্ষমতা বিষয়ে কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক উদ্যোক্তা, বিশেষ করে তরুণ ও নারী উদ্যোক্তা এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে বিভিন্নমুখী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে।

ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থান বিবেচনার করে আমাদের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, আমাদের নিজেদের কাজের জন্য নিজেদের সমাধান বের করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে ডিসিসিআইয়ের সঙ্গে কাজের মাধ্যমে আমাদের একটি অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে, বাংলাদেশি সংগঠনের নিজস্ব কাঠামো অনুযায়ী বাংলাদেশের নীতি কাঠামোর সঙ্গে মিল রেখে কোনো একটি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা গেলে, তা বেশি কার্যকর হয়। আমরা বুঝে নেব যে আমাদের ঝুঁকি কোথায় আছে এবং তার ভিত্তিতে যদি আমরা সেগুলো কমানোর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করি, তবেই আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো, ঠিকভাবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মিজানুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পূর্তিতে দাঁড়িয়ে আজকের বাংলাদেশে বেসরকারি খাত তথা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা জাতীয় উন্নয়ন বিনিয়োগে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশের যোগান দিচ্ছেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আমাদের সবার সম্মিলিত প্রয়াসে বেসরকারি খাতকে দুর্যোগ সহনশীল করে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। আমরা সারা পৃথিবীতে জানান দিতে পেরেছি যে, ধ্বংসস্তূপের মাঝ থেকে কীভাবে বিশ্বের সর্বোচ্চ রেটিংপ্রাপ্ত গ্রিন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায়।

মো. কামরুল হাসান বলেন, বাংলাদেশের পাবলিক-প্রাইভেট সব পর্যায় থেকে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং দুর্যোগ প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে আন্তঃ সমন্বয় নিশ্চিতের মাধ্যমে সমগ্র ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে অধিকতর কার্যকর এবং শক্তিশালী করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের এমআইএম-পরিচালক নিতাই চন্দ্র দে সরকার। এছাড়া আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিডার নির্বাহী সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী।

সমাপনী বক্তব্যে এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিন হেলালী বলেন, ২০২৬ সালে আমরা এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করতে যাচ্ছি। শিল্প কারখানার কমপ্লায়েন্সের জন্য আমরা এফবিসিসিআই সেফটি কাউন্সিল গঠন করেছি। কাউকে দোষা-দোষী নয়, বরং সবার সম্মিলিতভাবেই আমরা কাজ করতে চাই।

কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি মো. মুনির হোসেন, এফবিসিসিআই পরিচালক, এফবিসিসিআইর উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শহিদুল্লাহ, একশনএইড বাংলাদেশের কনসোর্টিয়াম ম্যানেজার আ ম নাছির উদ্দিন, এফবিসিসিআইর বিভিন্ন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের নেতা ও সরকারি কর্মকর্তারা।

এসআই/এসএম