স্বর্ণালংকার পরিবহনের সময় প্রতিষ্ঠানের চালানের কপি, বহনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র ও বাজুসের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে কোনো হয়রানি না করে তার যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। একই সঙ্গে বাজুসের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ছয়টি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে বাজুস প্রতিনিধি দলের বৈঠকে এ দাবি জানানো হয়। 

বৈঠক শেষে বাজুসের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, বাজুসের কিছু সমস্যা নিয়ে আমরা উনার সাথে বৈঠক করেছি। মন্ত্রী অতীতেও সুন্দর ভূমিকা রেখেছেন, আগামীতেও উনি আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করবেন বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। 

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা স্মার্ট জুয়েলারি ব্যবসায়ী হতে চাই। এ জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী একটি নতুন নীতিমালা দিয়েছেন। সেই নীতিমালা অনুযায়ী আমরা স্বর্ণ রপ্তানি করতে পারব, আমদানি করতে পারব। এই আমাদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু আইনগত প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যার কারণে আন্তর্জাতিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা স্বর্ণের মূল্যটা নির্ধারণ করতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, বাজুস যেভাবে কাজ করছে আমাদের সমন্বয়ে আগামী দিনে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ যে সমস্যাগুলো রয়েছে, সেগুলো আমরা নিরসন করতে পারব। আমাদের মূল সমস্যা ছিল স্বর্ণ পরিবহনের ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় পুলিশি হয়রানি হয়, তাঁতীবাজারে আমাদের একটি ছোট, বড়, মাঝারি শিল্প কারখানায় অর্নামেন্টস তৈরি হয়। সেখানে পুরাতন স্বর্ণ নিয়ে নতুন স্বর্ণ তৈরি হয়ে আসে, আসা-যাওয়ার সময় আমাদের কিছুটা হয়রানি হতে হয়। যে বিষয়ে আমরা মতবিনিময় করেছি।

দিলীপ কুমার বলেন, প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় বাজুসের সাংগঠনিক কমিটি রয়েছে। সেই জায়গার আইনশৃঙ্খলা কমিটিগুলোতে বাজুকের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারিকে অন্তর্ভুক্ত রেখে যারা অসৎ ব্যবসায়ী আছে, যেসব অভিযান আছে বা সংকট আছে... স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে কাজ করবে, এই কথাটা আমরা বলেছি। মন্ত্রী মহোদয় সদয়। উনি আগেও আমাদের সহযোগিতা করেছেন।

বৈঠকে বাজুসের পক্ষ থেকে ছয়টি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। প্রস্তাবনাগুলো হলো, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় জুয়েলারি শিল্পের অনেক সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান হওয়ার বাজুসের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। একই সঙ্গে ভবিষ্যতেও বাজুসের যেকোনো সমস্যা সমাধানে আপনার আন্তরিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চোরাচালান বিরোধী টাস্কফোর্সে বাজুসের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে চোরাচালান বিরোধী কার্যক্রমে বাজুসের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা, জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটিতে বাজুসের জেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সারা দেশে জুয়েলারি দোকানে এ যাবৎকাল অনেক চুরি ডাকাতির ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এসব ঘটনায় বর্তমান আইন অনুযায়ী সাধারণ চুরির মামলা হিসেবে থানা গ্রহণ করে। স্বর্ণ একটি মূল্যবান ধাতু। তাই আইন পরিবর্তন করার জন্য প্রস্তাবনা পেশ করছি। পাশাপাশি অতীতে সংঘটিত অপরাধ তদন্তে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এছাড়া, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্বর্ণ পরিবহনের ক্ষেত্রে জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা প্রায়ই হয়রানির শিকার হয়। এ ক্ষেত্রে স্বর্ণালংকার পরিবহনের সময় প্রতিষ্ঠানের চালানের কপি, বহনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র ও বাজুসের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে কোনো হয়রানি না করে, তার যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে বাজুস।

এ সময় বাজুসের সহ-সভাপতি গুলজার আহমেদ, মো. রিপনুল হাসান, মাসুদুর রহমান, মো. জয়নাল আবেদীন, সমিত ঘোষ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন, উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল, সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও বর্তমান কার্যনির্বাহী সদস্য পবিত্র চন্দ্র ঘোষ ও কার্যনির্বাহী সদস্য ইকবাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

এমএম/কেএ