রাজস্ব আদায়ে ৫০ হাজার ৯৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকার ঘাটতির মুখে এনবিআর

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায়ে প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকার ঘাটতিতে সংকটে পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশের বেশি হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম রাজস্ব আদায়ে সংকটে ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তিদের। সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনা মহামারিসৃষ্ট কঠোর বিধিনিষেধ। এ অবস্থান থেকে যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হয়, তাহলে বাকি তিন মাসে রাজস্ব আদায় করতে হবে আরও এক লাখ ৫৩ হাজার ১৯১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। যা প্রায় অসম্ভব— মনে করছেন এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত দুই লাখ ২৭ হাজার ৭৬৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে এক লাখ ৭৬ হাজার ৮০৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ঘাটতি ৫০ হাজার ৯৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল এক লাখ ৬৬ হাজার ১১৭ কোটি ৭ লাখ টাকা।

প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশের বেশি হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম রাজস্ব আদায়ে সংকটে ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তিদের। সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনা মহামারিসৃষ্ট কঠোর বিধিনিষেধ। এ অবস্থান থেকে যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হয়, তাহলে বাকি তিন মাসে রাজস্ব আদায় করতে হবে আরও এক লাখ ৫৩ হাজার ১৯১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। যা প্রায় অসম্ভব

গত অর্থবছরের তুলনায় ৬.৪৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হলেও করোনা প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট প্রতিকূল পরিবেশে রাজস্ব আহরণে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সামনের তিন মাসে আরও এক লাখ ৫৩ হাজার ১৯১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা আদায় করতে হবে এনবিআরের

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, লকডাউন যেকোনো দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয়। আমি বরাবরই এর বিপক্ষে। লকডাউন মাসের পর মাস চলতে দেওয়া উচিত নয়। নিম্ন আয়ের মানুষ চলতে পারে না, অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে এনবিআরের রাজস্ব আদায় কমে আসবে, এটাই স্বাভাবিক। অর্থনীতির চাকা না ঘুরলে রাজস্ব কোথা থেকে আসবে? পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এনবিআরকেও করনেট বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া উচিত।

চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত দুই লাখ ২৭ হাজার ৭৬৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে এক লাখ ৭৬ হাজার ৮০৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ঘাটতি ৫০ হাজার ৯৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা

এনবিআর থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ৬.৪৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে সাময়িক হিসাবে মোট এক লাখ ৭৬ হাজার ৮০৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির তিন বিভাগে। এর মধ্যে মার্চ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আদায় হয়েছে ভ্যাট খাত থেকে। এ খাতে আদায় হয়েছে ৬৭ হাজার চার কোটি ৭৪ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ২.৮৮ শতাংশ। 

শতাংশ হিসাবে সাফল্য দেখিয়েছে আমদানি ও রফতানি শুল্ক খাত। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১২.১৭  শতাংশের বেশি রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আদায় হয়েছে ৫৩ হাজার ৯৯৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে, মার্চ পর্যন্ত আয়কর খাতে ৫৫ হাজার ৮০৩ কোটি ৯০ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে আদায় হয় ৫২ হাজার ৮৪৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.৫৯ শতাংশ। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্কে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল যথাক্রমে ১২.৫৯, ৮.৯৬ ও ২.৫৭ শতাংশ।

যদিও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম করোনাকালীন আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক বলে প্রাক-বাজেট উপলক্ষে বিভিন্ন আলোচনায় দাবি করে এসেছেন। এ বিষয়ে এনবিআরের তিন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, মার্চ মাসে যতটুকু আদায় হয়েছে, সামনে রাজস্বের প্রবৃদ্ধি আরও কমে যাবে। রোজার ঈদ উপলক্ষে অর্থনীতিতে বড় ধরনের গতি আসে। রাজস্ব আদায়েও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। লকডাউনে সবকিছু আরও পিছিয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এ মুহূর্তে এনবিআরের বাড়তি কোনো ঊদ্যোগ নেওয়ারও সুযোগ নেই।

এদিকে, লকডাউনের আগে এনবিআর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৯ হাজার কোটি টাকা কমানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করেছে। যা চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে।

অর্থনীতির চাকা না ঘুরলে রাজস্ব কোথা থেকে আসবে- প্রশ্ন অধ্যাপক আবু আহমেদের 

এর আগে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতে যথাক্রমে রাজস্ব আদায় হয় পাঁচ হাজার ৯২৯ কোটি চার লাখ টাকা, আট হাজার ৫৬৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা এবং ছয় হাজার ৪৪৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসে মোট ২০ হাজার ৯৩৮ কোটি ২১ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়। প্রবৃদ্ধি হয় ১০.১৮ শতাংশ। যা এনবিআরকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আশাবাদী করেছিল।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে এক লাখ ২৮ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। এরপর আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে এক লাখ পাঁচ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা এবং আমদানি শুল্ক থেকে ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়।

আরএম/এমএআর/