জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, করদায় যাতে একই ব্যক্তির ওপর না বর্তায় এবং কর নেট বাড়ানোর জন্য ধীরে ধীরে কাজ করছে এনবিআর। যার প্রতিফলন গত ৪ বছরের পরিসংখ্যানে ওঠে এসেছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এ সভার আয়োজন করে।

সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে হাই ভ্যালুএডেড পণ্য উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার আইসিটি, উন্নত প্রযুক্তি, পণ্য ও সেবা খাতকে প্রাধান্য দিয়ে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। বিলাসবহুল পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে এবং দেশে ওইসব পণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বড় বড় ভারী শিল্পগুলোকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ট্যাক্স টু জিডিপির রেশিও বাড়ানোর লক্ষ্যে এনবিআরের সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে ২০২৪ সালে আয়কর রিটার্ন দাখিল হয়েছে প্রায় ৩৭ লাখ। যা ২০২০ সালে ছিল ২১ লাখ এবং ২০২৪ ভ্যাট রিটার্ন হয়েছে ৫ লাখ যা ২০২০ সালে ছিল মাত্র ২ লাখ।

সভাপতির বক্তব্যে চিটাগাং চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, ট্যাক্স টু জিডিপির রেশিও বাড়ানো প্রয়োজন। তবে দ্রুত বাড়াতে গিয়ে রাজস্বনীতি কঠোরভাবে প্রয়োগ করার আগে বর্তমান সংকটময় অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা এর চাপ নিতে সক্ষম এবং প্রস্তুত কি-না তা বিবেচনা করতে হবে। তিনি নির্দিষ্ট কর প্রদানকারীর ওপর বোঝা না বাড়িয়ে বরং করদাতার সংখ্যা কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় তার জন্য একটি যথাযথ পরিকল্পনা করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, করনীতির বিভিন্ন ধারার জটিলতার কারণে বেসরকারি কোম্পানির ট্যাক্স ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলেও বাস্তবে মোট করদায় সবধরনের ব্যবসার ক্ষেত্রেই ৪০ থেকে ৫০ শতাংশের ওপরে দাঁড়াচ্ছে। মুদ্রানীতির সংকোচনের ফলে দেশে এমনিতেই বিনিয়োগ ব্যয়বহুল হয়েছে। তাই রাজস্বনীতি প্রয়োগের চাপ ক্রমাগত বাড়তে থাকলে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত হবে এবং বর্তমান বিনিয়োগকারীরাও নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বে। তাই সরকারের অবকাঠামোগত ডেভেলপমেন্টের বিনিয়োগকে ফলপ্রসূ করতে দেশি-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য বিনিয়োগ-বান্ধব রাজস্ব নীতি এবং পরিবেশ সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরি।

আয়কর আইন ২০২৩ প্রণয়নকে যুগান্তকারী উল্লেখ করে চেম্বার সিনিয়র সহ-সভাপতি তরফদার মো. রুহুল আমিন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারি নীতি প্রণয়ন ও উন্নয়নমূলক এবং জনস্বার্থে নিবেদিত চেম্বার বা বাণিজ্য সংগঠন, দেশীয় ট্রাস্ট বা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেন। এছাড়া রপ্তানি নিরবচ্ছিন্ন করতে বন্দর ও অফ-ডকগুলোতেও স্ক্যানিং মেশিন স্থাপনের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কর নীতি) এ কে এম বদিউল আলম, চট্টগ্রামের কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কমিশনার, চেম্বার পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

এমআর/এমএসএ