আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিরাট সম্ভাবনা দেখছে দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। আফ্রিকার বিশাল এই বাজারে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের  মাধ্যমে বাজার সৃষ্টিসহ বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের লাভবান হওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) আফ্রিকান দেশগুলোতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত এফবিসিসিআইয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রথম সভায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম।

আফ্রিকার বাজার ধরতে পারলে সেটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অনেক ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে মাহবুবুল আলম বলেন, প্রচলিত রপ্তানি পণ্যের বাইরেও আমাদের অনেক পণ্য আফ্রিকাতে রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

আফ্রিকার দেশগুলোতে চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত অনেক জমি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সেখানে জমির দাম অনেক কম। বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীরা চাইলে সেখানে চাষাবাদ থেকে শুরু করে বড় ধরনের বিনিয়োগ করে লাভবান হতে পারে। 

এছাড়া সেখানে ইজ অব ডুয়িং বিজনেসের অবস্থা অনুসন্ধানে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান মাহবুবুল আলম। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে বেশ আন্তরিক এবং সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে বলে জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।

সভায় অংশ নিয়ে এফবিসিসিআই সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, আফ্রিকায় পণ্য উৎপাদন করে ইউরোপের দেশগুলোতে পাঠানো যায়। আবার পরিশিষ্ট অংশ দেশে আনা যায়। আফ্রিকায় বাণিজ্য বৃদ্ধি ও নতুন বাজার ধরা গেলে দুই পক্ষই অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। সরকারের সহযোগিতা পেলে নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করা যাবে।

স্ট্যান্ডিং কমিটির এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির চেয়ারম্যান ও ঢাকায় নিযুক্ত উগান্ডার অনারারি কনসাল আবুল হোসেন। তিনি বলেন, আফ্রিকার দেশগুলো বাংলাদেশের জন্য বড় সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে। আফ্রিকায় ১০ থেকে ১৫টি দেশ রয়েছে যেগুলো বাংলাদেশের জন্য অপার সম্ভাবনাময়। ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে নির্ভরশীল না হয়ে আফ্রিকায় বাজার খোঁজার সময় এসেছে এখন; যেখানে প্লাস্টিক, ফার্মাসিউটিক্যাল, কৃষি ও কৃষিপণ্য ইত্যাদি হতে পারে বিরাট সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। এছাড়া আফ্রিকায় ব্যবসা শুরু করা গেলে একই সঙ্গে সেখানে জনশক্তি রপ্তানির সুযোগও তৈরি হবে।  

সভায় সিটি ব্যাংক ও পার্টেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার বলেন, আমরা শুধু ইউরোপ ও আমেরিকায় ব্যবসা করছি। আফ্রিকায় ব্যবসা করার কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে যেগুলো মোকাবিলা করা গেলে বাংলাদেশের জন্য বিশাল বড় বাজার হবে আফ্রিকা।

আফ্রিকায় ব্যবসা শুরুর আগে সেখানে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় রপ্তানি ও আমদানি পণ্যগুলো চিহ্নিত করার পরামর্শ দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিজি (আফ্রিকা) এ.এফ.এম জাহিদ উল ইসলাম। আফ্রিকার সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণে বিগত দুই-তিন বছর ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনেক কাজ করছে এবং ভবিষ্যতেও মন্ত্রণালয় থেকে সবরকম সহায়তা প্রদান করা হবে বলেও জানান তিনি।

সভায় ভার্চুয়ালি অংশ নেন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ। ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আফ্রিকায় ব্যবসা ও বিনিয়োগের পরামর্শ দেন তিনি।

আফ্রিকায় ব্যবসার নিরাপত্তা ও সরকারের নীতিগত সহায়তা পেলে আফ্রিকায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে চান কমিটির সদস্যরা।

সভায় কেনিয়ায় বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম ওয়াহিদুর রহমান, পুলিশের বিশেষ শাখার  কর্মকর্তা জেসমিন কেকা, এফবিসিসিআইর পরিচালক আবু মোতালেব, হাফেজ হাজী হারুন অর রশীদ, কাওসার আহমেদ, মহাসচিব মো. আলমগীর, আন্তর্জাতিক বিভাগের পরামর্শক রাষ্ট্রদূত মসয়ূদ মান্নান, কমিটির কো-চেয়ারম্যান, এবং অন্যান্য ব্যাবসায়িক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এসআই/এসকেডি