২০২৩ সালে ১২ হাজার ১১৭ কোটি টাকার বিমা দা‌বি ক‌রে‌ছেন গ্রাহকরা। এর মধ্যে ৮ হাজার ৭৫৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকার দাবি পরিশোধ করেছে বিমা প্র‌তিষ্ঠানগুলো। দাবি পরিশোধের হার ৭২ শতাংশ, পারিশোধ হয়নি ২৮ শতাংশ। তবে ২০২২ সালের তুলনায় দাবি পরিশোধের হার বেড়েছে ৫ শতাংশ।

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এ তথ্য জানান নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারি। জাতীয় বিমা দিবস-২০২৪ উপলক্ষ্যে আইডিআরএ’র সভাকক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং আইডিআরএ’র উদ্যোগে ১ মার্চ ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় বিমা দিবস উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বছরের বিমা দিবসের প্রতিপাদ্য ‘করবো বিমা গড়বো দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ’।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বিমা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে সম্মতি দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, আইডিআরএ চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রেসিডেন্ট অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

সংবাদ সম্মেলন সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়, ২০২৩ সালে কী পরিমাণ বিমা দাবি উত্থাপিত হয়েছে এবং কী পরিমাণ পরিশোধ করা হয়েছে। জবাবে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, ২০২৩ সালে মোট বিমা দাবি উত্থাপিত হয় ১২ হাজার ১১৭ কোটি টাকার। এর বিপরীতে পরিশোধ করা হয়েছে ৮ হাজার ৭৫৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ ৭২ শতাংশ বিমা দাবি পরিশোধ করা হয়েছে। ২০২২ সালে এই হার ছিল ৬৭ শতাংশ।

আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমার গুরুত্ব অনুধাবন করে পুরোনো বিমা আইনকে ঢেলে সাজিয়ে নতুন বিমা আইন, ২০১০ প্রণয়ন করেন। পাশাপাশি প্রণয়ন করেন বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১০। এরপর বিমাখাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ২০১১ সালে অধিদপ্তর বিলুপ্ত করে প্রতিষ্ঠা করেন ‘বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’। ২০১০ সালের পর এ যাবৎ ১০টি বিধি, ২০টি প্রবিধি, ৪টি গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়েছে, যা বিমা শিল্পের উত্তরোত্তর উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

তিনি বলেন, দেশে এখন মোট ৮২টি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান বিমা সেবা দিচ্ছে। বর্তমানে বিমার আওতায় আছে দেশের ১ কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার মানুষ। বিমা খাতে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে কর্তৃপক্ষ বিমা দাবি পরিশোধের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে বিমা কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে আসছে। ফলে লাইফ ও নন-লাইফ মিলে নিষ্পত্তি করা বিমা দাবি ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ৪ শতাংশ বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, দেশের বিমা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে জারি হয়েছে কর্পোরেট গর্ভন্যান্স গাইডলাইন ২০২৩ ও রেগুলেটরি স্যান্ডবক্স গাইডলাইন। ব্যাংকের মাধ্যমে বিমা পণ্য বিপণনের জন্য প্রবর্তন করা হয়েছে ব্যাংকাস্যুরেন্স।

বারি জানান, বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের স্মারক হিসেবে খোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমা। পাইলট পর্যায়ে জীবন বিমা কর্পোরেশনের মাধ্যমে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে ৫০ হাজার শিক্ষার্থীকে এ বিমার আওতায় আনা হয়। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি কোম্পানিগুলোও এখন বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমা পলিসি চালু করেছে। বেসরকারি কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে ৭৮ হাজার ৫০১ জন শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমার আওতায় এনেছে।

তিনি বলেন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বিমা, জনসাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বিমা ও খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার জন্য বঙ্গবন্ধু স্পোর্টসম্যান কম্প্রিহেন্সিভ বিমা। নারীর ক্ষমতায়নকে উৎসাহ দিতে চালু আছে নিবেদিতা বিমা, দেনমোহর বিমা, প্রমীলা পিডিএস, নিবেদিতা পাস ও পারিবারিক নিরাপত্তা বিমা।

তিনি আরও বলেন, সামাজিক বিমা ব্যবস্থার আওতায় চালু হয়েছে শস্য বিমা, প্রবাসী বিমা, স্বাস্থ্য বিমা, হজ বিমা, ক্ষুদ্র বিমা ও গবাদিপশু বিমা। দুর্ঘটনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় দেওয়া হচ্ছে নতুন বিমা। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য আছে ইউনিট লিংকড ইন্স্যুরেন্স প্ল্যান। ২০২৩ সাল পর্যন্ত সর্বমোট ৫ লাখ ৫০ হাজার গ্রাহক ‘বিমা তথ্য’ মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে পলিসি পরিচালনা করছেন। অ্যানড্রয়েডের পাশাপাশি এখন আইওএস হ্যান্ডসেটেও এ অ্যাপটি ব্যবহার করা যায়। বাংলা ও ইংরেজিতে চালু আছে আইডিআরএ’র ওয়েবসাইট।

এসআই/জেডএস