আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার বিপনি-বিতান এবং মার্কেটগুলো। রোজার শুরু থেকেই প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত হাজার-হাজার মানুষের পদচারণায় মুখর থাকছে পুরো মার্কেট এলাকা। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় থাকে দুপুরের পর থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত। তখন মানুষের ভিড়ের কারণে ঠিকমতো হাঁটার জায়গাও পাওয়া যায় না। বড় বিপনি-বিতান এবং মার্কেটের ভেতরের দোকান থেকে শুরু করে ফুটপাত, ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতেও ঈদের কেনাকাটায় আসা এসব মানুষের ভিড় দেখা যায়। আর রোজার শুরু থেকেই ক্রেতার উপস্থিতিতে এবারের বিক্রি নিয়েও সন্তুষ্ট ব্যবসায়ীরা।

সোমবার (২৫ মার্চ) দুপুরের পর থেকে বিকেল পর্যন্ত সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে নীলক্ষেত মোড়সহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায় মানুষের ব্যাপক ভিড়। ফুটপাতে হাঁটার জায়গা না থাকায় মূল সড়ক ধরেই হাঁটছেন অনেকে। ফলে তৈরি হয়েছে যানবাহনের ধীরগতি। আর মার্কেটগুলোর ভেতরেও জমেছে কেনা-বেচা। এরমধ্যে বেশিরভাগই নারী ক্রেতা। শাড়ি এবং থ্রি পিসের দোকানগুলোতে সবসময় ভিড় লেগেই আছে।

এছাড়া নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, নূর ম্যানশন মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নুরজাহান সুপার মার্কেট, গ্লোব শপিং সেন্টারেও ক্রেতার ভিড় চোখে পড়ার মতো।

আফরোজা খাতুন নামের এক ক্রেতা বলেন, ছেলের স্কুল ছুটি হয়েছে। গ্রামের বাড়ি চলে যাব। সেজন্য আগেভাগেই শপিং করে নিচ্ছি। আসলে রোজার ঈদেই মানুষজন বেশিরভাগ নতুন কাপড়ের প্রত্যাশা করে। সেজন্য পরিবারের সবার জন্য কাপড় কিনেছি। যদিও রোজা রেখে এখানে ভিড়ের মধ্যে হাঁটাচলা করাটা খুব কষ্টকর হয়েছে। তারপরও বাড়ির সবার জন্য কেনাকাটা করাতে একটি অন্যরকম আনন্দ রয়েছে।

রেহেনা আক্তার নামের আরেক ক্রেতা বলেন, নিউমার্কেট এলাকায় তুলনামূলক কম দামে জিনিস কিনতে পাওয়া যায়। তবে সেটি অবশ্যই দামাদামি করে কিনতে হয়। তাছাড়া এর চেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে একসাথে সব ধরনের ও সব বয়সীদের কাপড় পাওয়া যায়। অন্য জায়গায় বেশি ঘুরতে হয়। কিন্তু বিক্রেতারা এখনও দাম ধরে রেখেছেন। মনে হচ্ছে সব কাপড়ের দামই তারা একটু বেশি চাইছেন।

অপরদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার শুরু থেকেই বিক্রি বেড়েছে অনেক। ব্যবসায়ীদের ধারণা, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে গত বছর মার্কেটে মানুষের উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল। কিন্তু নির্বাচন শেষ হওয়ার এখন সে ধরনের কোনো শঙ্কা কিংবা ভয়ভীতি না থাকার কারণে রোজার শুরু থেকেই ক্রেতারা কেনাকাটা করতে আসছেন।

তাছাড়া ভালো ব্যবসা এবং সাধারণ ক্রেতাদের সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে প্রতিদিন এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও মার্কেট খোলা রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

নিউমার্কেট ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার শুরু থেকেই ক্রেতার উপস্থিতি ভালো দেখা যাচ্ছে। শুরু থেকেই মানুষজন অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে এখানে কেনাকাটা করতে পারছেন। সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। সার্বক্ষণিক মার্কেটে দেখভাল করছি। তবে মাসের মাঝামাঝি সময় হওয়ার কারণে এখনো অনেক মানুষ কেনাকাটা শুরু করেননি। মাস শেষে বেতন পাওয়ার পর এই জনস্রোত আরো বাড়বে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি।

অপরদিকে, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিবেচনার বিষয়টি জানিয়েছেন নিউমার্কেট থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) হালদার অর্পিত ঠাকুর। তিনি বলেন, প্রতিটি মার্কেটের নিচে অতিরিক্ত পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন। রোজার শুরু থেকেই পুলিশ বক্স করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের অপরাধ দমনে আমরা সচেষ্ট রয়েছে। ক্রেতারা যেন নির্ভীক নেই করতে পারেন সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। যেকোনো সহায়তার জন্য সাধারণ মানুষজন আমাদের কাছে আসতে পারেন।

আরএইচটি/জেডএস