যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুল নিবন্ধকের (আরজেএসসি) আওতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬২ হাজার সেবার বিপরীতে ভ্যাট বকেয়ার প্রমাণ মিলেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অডিটে ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৭–১৮ অর্থবছর পর্যন্ত চার বছরে ৭৬ কোটি টাকার ভ্যাট বকেয়ার তথ্য উঠে আসে। আরজেএসসি এর নিজস্ব অডিটেও বকেয়া ভ্যাটের প্রমাণ পাওয়ায় এরই মধ্যে নোটিশ ইস্যু করা শুরু করেছে।

আরজেএসসির আওতায় পাঁচ ধরনের কোম্পানি নিবন্ধিত হয়ে থাকে। যার মধ্যে রয়েছে পাবলিক কোম্পানি, প্রাইভেট কোম্পানি, বিদেশি কোম্পানি, ট্রেড অরগানাইজেশন (বাণিজ্য সংগঠন) সোসাইটি (সমিতি) এবং পার্টনারশিপ ফার্ম (অংশীদারি কারবার)। সাধারণত নামের ছাড়পত্র, নিবন্ধন, রিটার্ন ফাইলিং, প্রত্যায়িত অনুলিপি, কোম্পানি অবসায়ন ইত্যাদি বিষয়ে আরজেএসসি বিভিন্ন টাইপের ফি নিয়ে থাকে।

আরজেএসসি বলছে ওই চার বছরে শত শত প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের সেবা নিয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সেবা মাশুল নেওয়া হলেও কোনো ভ্যাট নেওয়া হয়নি। এক হিসাবে নিবন্ধক প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৬২ হাজার সেবায় ভ্যাট পায়নি বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। এর মধ্যে ৩০০ কোম্পানি কাছেই পাওনা রয়েছে ২৫ কোটি টাকার মতো। অথচ ভ্যাট আইন অনুসারে দফতরের যেকোনো সেবার বিপরীতে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রযোজ্য।

যে কারণে গত ২১ এপ্রিল সেবা নেওয়া ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে বকেয়া ভ্যাটের টাকা চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধক কার্যালয় (আরজেএসসি)। যার মাধ্যমে বকেয়া ভ্যাট পরিশোধের আহ্বান জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৭–১৮ অর্থবছর পর্যন্ত যেসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সেবা নিয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সেবা মাশুল নেওয়া হলেও কোনো ভ্যাট নেওয়া হয়নি। অতি শিগগিরই ভ্যাট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর। ওই সময়ে (২০১৪-১৫ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর) পুরোনো ভ্যাট আইন চালু ছিল। সেই আইন অনুযায়ী, এ দপ্তরের যেকোনো সেবার বিপরীতে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ হয়। যেসব প্রতিষ্ঠান বকেয়া ভ্যাট পরিশোধ করবে না, ওই সব প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের কোনো সেবা নিতে পারবে না বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতরের নিবন্ধক মকবুল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কাছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দাবি
ও নিজস্ব অডিট আপত্তিতে বিগত চার বছর কয়েকশত প্রতিষ্ঠানের কাছে ভ্যাট বকেয়ার তথ্য বেরিয়ে আসে। এনবিআরের দাবি ছিল প্রায় ৭৬ কোটি টাকা, তবে আমাদের হিসাবে ৭০ কোটি টাকার মতো বকেয়া ধরা পড়েছে। প্রায় ৬২ হাজার সেবার বিপরীতে সাবমিশন নথিপত্র থেকে ওই বকেয়ার তথ্য মিলেছে। যার মধ্যে ৩০০ কোম্পানি কাছেই পাওনা রয়েছে ২৫ কোটি টাকার মতো। আমরা আদায়ের চেষ্টা করছি। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে পৃথক ভ্যাট আদায়ে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, কোন কোন সেবায় ভ্যাট বকেয়া রয়েছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য বের করা অনেক কঠিন কাজ ছিল। তবুও আমরা অতি অল্প সময়ে পুরাতন নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত তথ্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি যাদের কাছে  ভ্যাট পাওনা আছে, তারা পরবর্তী সেবা নেওয়ার আগে বকেয়া ভ্যাট পরিশোধ করবেন। যদি না করেন সেক্ষেত্রে জরিমানা গুণতে হবে।

ভারত বিভাজনের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের পরিদফতর স্থাপিত হয়। তখন ভারতের কলকাতা থেকে প্রাপ্ত কোম্পানি, পেশাদার সংগঠন ও অংশীদারি কারবারের কিছু নথিপত্র নিয়ে এর কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৬২ সালে এর কার্যালয় ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে আরজেএসসি’র অধীনে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৫০টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত রয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩২টি প্রাইভেট, ৩ হাজার ৫৩২টি পাবলিক এবং ৯৩২টি বিদেশি কোম্পানি রয়েছে। এ ছাড়া সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন আইনের অধীনে রয়েছে অনেক সমিতি। সর্বশেষ ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সব ধরনের ফি থেকে আরজেএসসি আয় করে প্রায় ১৬০ কোটি টাকা।

আরএম/এসএম