তৈরি পোশাক ও বস্ত্র কারখানা শ্রমিক-কর্মচারীদের আসছে ঈদের বোনাস এবং এপ্রিল, মে ও জুন মাসের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য গত বছরের মতোই সহজ শর্তে আবারও ঋণ প্রণোদনা চায় ব্যবসায়ীরা।

রোববার (২৫ এপ্রিল) অর্থমন্ত্রীর কাছে এ সংক্রান্ত একটি আবেদন জানিয়েছে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের মালিকদের তিন সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ। এই চিঠির অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছেও পাঠানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, পোশাক ও বস্ত্র শিল্পকে আর্থিক সংকট মোকাবেলায় সহায়তার করতে আসন্ন ঈদে শ্রমিক কর্মচারীদের এ বছরের এপ্রিল, মে ও জুন এই তিন মাসের বেতন-ভাতা ও বোনাস দেওয়ার জন্য আগের মতো একই শর্তে যেন ঋণ দেওয়া হয়।

চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএর সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান ও বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।

বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে আমরা সরকারের কাছে সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছি। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে আশা করি এই সহায়তা আমরা পাব।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী করোনার উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পোশাক শিল্পে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। এর প্রভাবে অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক স্বনামধন্য অনেক ক্রেতা নিজেদেরকে দেউলিয়া ঘোষণা করার ফলে তাদের থেকে রফতানিকৃত পণ্যের বিপরীতে পেমেন্ট পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ক্রেতা কর্তৃক ক্রয়াদেশ বাতিল/স্থগিত ও নির্দিষ্ট সময়ে পেমেন্ট না পাওয়ার ফলে পোশাক খাত আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। 

আরও বলা হয়, বিশ্ব বাজারে রফতানি সক্ষমতা বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশের পোশাক শিল্প অন্যান্য দেশের তুলনায় হ্রাসকৃত মূল্যে পোশাক রফতানি করে থাকে যার মধ্যে মুনাফার অংশ খুবই কম থাকে। টিকে থাকার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে লস দিয়েও ক্রয়াদেশ নিতে বাধ্য হয়। শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ব্যয় পরিশোধ করা হতো ক্রেতার নিকট থেকে পেমেন্ট পাওয়া ও নগদ সহয়তা বাবদ প্রণোদনার অর্থ প্রাপ্তির পর। কিন্তু রফতানিমূল্য প্রত্যাবাসন না হওয়ার কারণে নগদ সহায়তার আবেদনও করতে পারছে না। আবার অনেক ক্রেতা ডিসকাউন্ট হারে মূল্য পরিশোধ করছে। যার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো তারল্য সংকট নিরসন করতে পারছে না।

চিঠিতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব কমে স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসবে এটাই সকলের কাম্য ছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাপী পুনরায় শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। বিশ্বের অনেক দেশেই আগের মতো লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে যেসব ক্রেতা পেমেন্ট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন করেছিল তারাও পেমেন্ট দিতে অপারগতা প্রকাশ করছে।

এমতাবস্থায় আসন্ন ঈদে সচল কারখানাগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও বোনাস দেওয়ার জন্য রফতানিকারকদের ওপর প্রচণ্ড চাপ রয়েছে। উদ্যোক্তাদের আর্থিক সংকটের কারণে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও বোনাস পরিশোধের জন্য অর্থের যোগান দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে রফতানিমুখী পোশাক শিল্পকে সহায়তা করতে শ্রমিক-কর্মচারীদের এপ্রিল, মে ও জুন মাসের বেতন-ভাতা ও বোনাস দেওয়ার জন্য আগের মতো সহজ শর্তে ঋণ পাওয়া আবশ্যক।

উল্লেখ্য, গত বছরের করোনার ধাক্কা সামলে উঠতে বিভিন্ন খাতের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। পোশাক কারখানাসহ রফতানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের এপ্রিল, মে জুন ও জুলাই- এই চার মাসের বেতন-ভাতা দিতে সরকারের প্রণোদনা তহবিল থেকে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেন শিল্প মালিকরা। এর বাইরে করোনার ক্ষতি মোকাবিলায় ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ব্যবসায়ীদের নেওয়া ঋণের সুদেও ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার।

এমআই/ওএফ