এক দাম, এক রেট; দেইখ্যা লন, বাইছা লন; এক্সপোর্ট কোয়ালিটি... এমন সব হাঁকডাকে জমে উঠেছে ফুটপাতে ঈদের কেনাকাটা। শার্ট, প্যান্ট পাঞ্জাবি, মেয়েদের ড্রেস থেকে শুরু করে জুতা, স্যান্ডেল, প্রসাধনী এমনকি গহনাও সাজিয়ে বসেছে ফুটপাতের দোকানিরা।

ঈদ আসতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি, তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুটপাতের বিক্রেতারা। সেই সঙ্গে শেষ সময়ে সাধ্যের মধ্যে ভালো পণ্যটি কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। অন্যান্য বার শুধু নিম্নআয়ের মানুষরাই ফুটপাতের দোকানের মূল ক্রেতা হলেও এবার তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারাও। সব মিলিয়ে নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত নিয়ে জমে উঠেছে ফুটপাতের ঈদের কেনাকাটা।

সোমবার (১ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ফুটপাত ‌ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি এলাকায় জমজমাট হয়ে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। বছরজুড়ে রাজধানীর নিউ মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, গুলিস্তান, মিরপুর এলাকায় ফুটপাতে বেচাবিক্রি দেখা গেলেও এখন ঈদের সময় রাজধানীর প্রায় সব এলাকায় ফুটপাতের বেচাকেনা জমজমাট আকারে চলছে।

বিশেষ করে রাজধানীর মালিবাগ, মৌচাক, রামপুরা বাজার, গুলশান বাড্ডা লিঙ্ক রোড, সুবাস্তু, খিলক্ষেত, উত্তরা, মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, ধানমন্ডি, নিউ মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, ফার্মগেটসহ সব এলাকায় ঈদ উপলক্ষ্যে অতিরিক্ত দোকান বসার পাশাপাশি, ক্রেতা বিক্রেতার দরদামে জমজমাট এখন পুরো ফুটপাত।

বিক্রেতারা বলছে, আগে শুধু একশ্রেণির ক্রেতা থাকলেও এবার মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারাও যুক্ত হয়েছে ফুটপাতে ঈদের কেনাকাটা করতে। তবে বিক্রেতারা এটাও বলছে যে, অন্যান্যবার বেচাবিক্রি বেশ ভালো হলেও এবার তুলনামূলক মানুষ কম কেনাকাটা করছে। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছে, এবার ফুটপাতেও সকল জিনিসের দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।

ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ফুটপাতের মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি অন্যান্যবারের তুলনায় কম ছিল, তবে ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে তাদের উপস্থিতি ততটা বাড়ছে। এছাড়া অল্প টাকায় দরদাম করে নিম্নবিত্ত কেনাকাটা করতে পারলেও এবার ফুটপাতের পণ্যেরও দাম বেড়েছে অনেক, ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারাই এবার ফুটপাত থেকে বেশি পণ্য কিনছে।

রাজধানী বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাতে বিক্রি হওয়া পাঞ্জাবিগুলো ৩০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে, একইভাবে জিন্স, গ্যাবাডিন প্যান্ট ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা, জুতা ২০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাচ্চা ও মেয়েদের ড্রেস ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা, ভ্যানিটি ব্যাগ ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা, স্যান্ডেল ৪০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি শাড়ি, লুঙ্গি, কসমেটিক, অর্নামেন্টস, গহনাসহ নানান ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। এখানকার বিভিন্ন পণ্য মান, আকার ভেদে বিভিন্ন রকমের দাম রাখা হচ্ছে।

রাজধানীর মৌচাক এলাকার ফুটপাত থেকে ছেলে, মেয়ে এবং স্ত্রীর জন্য ঈদের কেনাকাটা করেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, শপিংমলসহ ভালো ব্র্যান্ডের সব দোকানে এবার অতিরিক্ত দামে সব বিক্রি হচ্ছে। যে কারণে সবার জন্য কেনাকাটা করা কঠিন এবার ফুটপাত থেকেই সবগুলো কিনলাম। অন্যান্যবার দু-একটা শপিং মল থেকে কেনাকাটা করতাম। কিন্তু এবার বাজেট কম থাকায় এবং সবকিছুর দাম বেশি হওয়ায় ফুটপাত থেকেই কিনে ফেললাম।

গুলশান বাড্ডা লিঙ্ক রোডেও এবার বসেছে বেশ কিছু ফুটপাতের দোকান। সেখানেও বেশ ভিড় করছেন ক্রেতারা। সেখানকার ফুটপাতের দোকানগুলোতে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন মেরুল বাড্ডা এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলাম ও তার স্ত্রী রেহেনা খাতুন। রেহেনা খাতুন বলেন, প্রতিবার ঈদের কেনাকাটা আমরা ফুটপাত থেকেই করি। বাসায় ছোট ছেলে মেয়ে এবং শ্বশুর শাশুড়ি আছেন। সবার জন্যই কেনাকাটা করতে হয়, তাই ফুটপাত ছাড়া আমাদের উপায় থাকে না। তবে এবার কেনাকাটা করতে এসে দেখছি গতবারের তুলনায় সবকিছুর দাম বাড়তি। বাচ্চার আব্বুর জন্য যে ধরনের পাঞ্জাবি আগে ৩০০ টাকা দিয়ে কিনেছি, সেগুলোর দাম এবার ৫০০ টাকার ওপরে যাওয়া হচ্ছে। একইভাবে অন্যান্য সব কিছুর দামি এবার বাড়তি। যে কারণে এক ঘণ্টা ধরে ঘুরেও এখনো কিছু কিনতে পারিনি।

গতবারের তুলনায় এবার ফুটপাতের সব কিছুর দাম বাড়তি- এ কথা স্বীকার করে লিঙ্ক রোডের ফুটপাতের দোকানে আব্দুর রশিদ বলেন, আগে ইসলামপুর থেকে যে পাঞ্জাবি ২০০ টাকা কেনা পড়েছে, সেই পাঞ্জাবি এবার সেখানেই কেনা পড়ছে ৩০০ টাকা। এভাবে প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। এছাড়া ফুটপাতে বসতে লাইনম্যান খরচ, ঈদের বোনাস, সবমিলিয়ে এবার আর আগের মতো কম দামে বিক্রি করা যাচ্ছে না। এই কয়দিন বেচাকেনা একেবারেই জমেছিল না, বিগত ২-৩ দিন যাবত কিছু কিছু কাস্টমার আসছে। তবে দাম বেশি হওয়ার কারণে আগের চেয়ে বিক্রি এবার কম হচ্ছে।

রাজধানীর গুলশানের প্রবেশ দ্বারে ফুটপাতে দোকান বসিয়েছেন মোকলেসুর রহমান নামের একজন ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, বছরের অন্যান্য সময় ফুটপাতে আমার দোকান থাকে, তবে ঈদের সময় বড় পরিসরে সহ আরও দুই একটি দোকান দেই। তবে অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি আগে শুধু নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষরাই ফুটপাত থেকে কেনাকাটা করত, মধ্যবিত্ত থাকত তবে সেটা কম। কিন্তু এবার দেখছি নিম্নবিত্ত পাশাপাশি মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি বড় অংশ ফুটপাত থেকে ঈদের কেনাকাটা করছে। ক্রেতা বাড়ছে এটা ঠিক কিন্তু বিক্রি কমেছে। সবকিছুর দাম বাড়তি থাকার কারণে এসব ফুটপাত আইটেমের দামও বেড়েছে, সে কারণে অন্যান্যবার ঈদের সময় সারাদিনে ৫০/৬০ পিস পাঞ্জাবি, স্যান্ডেল বিক্রি হলেও এবার বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ পিস। এছাড়া দাম বাড়ার কারণে নিম্নবিত্ত শ্রেণির ক্রেতা এ বছর কিছুটা কমেছে। তবে ঈদের আগের দিন রাত পর্যন্ত আমাদের বেচাবিক্রি চলবে। আশা করছি বাকি সময়ে আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারব।

এএসএস/এমএ