মোট ঋণের দুই তৃতীয়াংশ সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নিচ্ছে। সে কারণে সরকারের দায়দেনা পরিস্থিতি বুঝতে হলে বৈদেশিক ঋণের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ঋণও দেখতে হবে। 

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) গুলশানের একটি হোটেলে দেশের বৈদেশিক ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত সেমিনারে প্রতিষ্ঠানটির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ কথা বলেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।

দেবপ্রিয় বলেন, গত দুই সপ্তাহে ঋণের বিষয়গুলো আলোচনায় এসেছে। দায় পরিশোধের পরিসংখ্যান, সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন ধরনের ফলাফলের কারণে বিষয়গুলো এসেছে। নীতিনির্ধারকরা প্রায়ই বলেন, অর্থনীতিবিদরা ঠিকমতো বিশ্লেষণ করতে পারে না এবং ভবিষ্যতও বলতে পারে না। অর্থনীতিবিদদের নিয়ে প্রায়শই শ্লেষাত্মক ও ব্যাঙ্গাত্মক কথা বলেন। আজ থেকে দুই বছর আগে সিপিডিতে বসে আমি বলেছিলাম যে, ২০২৪ সাল আমাদের জন্য কঠিন হবে। সেখানে দায়দেনা পরিশোধে বড় ধরনের ধাক্কা আসতে পারে। ২০২৫ সাল থেকে ঋণ পরিশোধে অস্বস্তি শুরু হবে। বলেছিলাম ২০২৬ সালে এটা আরও বাড়বে। ঋণের হিসেবে গাফলতি আছে। এই হিসেবে এখনও অনেক কিছু বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। 

তিনি বলেন, মূল আলোচনায় সরকারি ঋণের পরিস্থিতি উঠে এসেছে। আরও ব্যক্তি খাতের ঋণ আছে। হিসেবে দেখেন যদি ১০০ শতাংশ ঋণ নিয়ে থাকেন তার ৮০ শতাংশ সরকারের। ২০ শতাংশ ব্যক্তিখাতের। ব্যক্তিখাতের ঋণের ও সরকারি তাৎপর্য আছে। কারণ এটা দায়দেনা ও বিনিময় খাতে প্রভাব রাখে। ব্যক্তিখাতের ঋণের অবস্থা কী,  কেউ কী বলতে পারবেন? এই টাকা কেউ কেউ বিদেশে নিয়ে গেছেন। কেউ ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করেছেন। এই হিসাবটা কম গুরুত্বপূর্ণ না।

তিনি আরও বলেন, সরকার তো দেশের ভেতরেও ঋণ নিচ্ছে। সেই ঋণের পরিমান কত? যেই ঋণ আমরা বিদেশ থেকে নেই, তার দ্বিগুণ আমরা দেশ থেকে নেই। সরকারের এখন যে ঋণের পরিমাণ তার দুই তৃতীয়াংশ এখন অভ্যন্তরীণ ঋণ, সেটিই বড় বিষয়। সরকারের দায়দেনা পরিস্থিতি বুঝতে হলে বৈদেশিক ঋণের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ঋণও দেখতে হবে। বৈদেশিক ঋণের কারণে মাথাপিছু দায়দেনা যদি ৩১০ ডলার হয়, তার সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ঋণ যোগ করলে সেটা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৮৫০ ডলার। 

দেবপ্রিয় বলেন, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের হিসাব যদি দেখেন তাহলে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জুলাই পর্যন্ত রাজস্ব ব্যয়ের ৩৪ শতাংশ গেছে এসব ঋণে পরিশোধে। যার মধ্যে ২৮ শতাংশ গেছে অভ্যন্তরীণ ঋণের জন্য, আর ৫ শতাংশ বৈদেশিক ঋণের জন্য। মাত্র ৩ বছরে ২৬ শতাংশ থেকে ৩৪ শতাংশে গেছে। ২০১৮-১৯ সালের পর থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা কোভিড, ইউক্রেন বা গাজার কারণের নয় ভিন্ন কারণে ত্বরান্বিত হয়েছে। সেজন্য আমাদের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ হয়েছে। ঋণ পরিশোধের ক্যাপাসিটি এই জায়গায় গেছে যে রেভিনিউ বাজেট থেকে উন্নয়ন প্রকল্পকে অর্থায়ন করতে একটা পয়সা দিতে পারি না। 

সিপিডির বিশেষ ফেলো বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের ৭০ শতাংশ নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরিতে। ফলে খাতভিত্তিক উন্নয়ন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। প্রকল্প থেকে একটি গোষ্ঠী লাভবান হয়েছে। মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। মেগা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিরা বিদেশে টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। 

আরএম/কেএ