ঈদের বকশিস হিসেবে সবার কাছে জনপ্রিয় নতুন টাকা। ফলে বছরের এসময় নতুন টাকার চাহিদা থাকে তুঙ্গে। সেই চাহিদার কথা বিবেচনা করে ঈদের আগে বাজারে নতুন টাকার নোট ছাড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

যদিও সেই নতুন টাকা সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাংকের মাধ্যমে খুব অল্পই পৌঁছায়। যারা ব্যাংক থেকে নতুন টাকা সংগ্রহ করতে পারেন না তাদের ভরসা খোলা বাজার। রাজধানীর গুলিস্তানের পাতাল মার্কেটের সামনের ফুটপাতে নতুন টাকা নিয়ে বসেন অনেক ব্যবসায়ী। তাদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা দিয়ে নতুন নোট কিনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে গুলিস্তানে গিয়ে দেখা যায়, নতুন টাকা বিক্রির হিড়িক পড়েছে সেখানে। অনেক মানুষ নতুন টাকা কেনার জন্য দোকানে দোকানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে বেশ অসন্তোষ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এ বছর চাহিদার তুলনায় বাজারে নতুন নোট কম ছেড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য খোলা মার্কেটে নতুন টাকার দাম বেশি। ব্যাংকগুলোতে নতুন টাকার নোট না পেয়ে বাধ্য হয়ে গুলিস্তানের ফুটপাত থেকে নতুন টাকা কিনে বাড়ি যাচ্ছেন মানুষজন।

ব্যাংকে পাওয়া না গেলেও খোলা মার্কেটে কোথা থেকে আসছে নতুন টাকার বান্ডেল, এমন প্রশ্ন ক্রেতাদের। তাদের দাবি, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নতুন নোট খোলা মার্কেটে ছাড়া হচ্ছে।

গুলিস্তানের খোলা মার্কেটের নতুন টাকার ব্যবসায়ী আমিরুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আপনার যত দরকার হবে তত নতুন টাকা দিতে পারব। কোন কোন নোট নেবেন সেটা জানান।

বিভিন্ন নোটের দাম জিজ্ঞেস করতে তিনি বলেন, ১০ টাকার বান্ডেলে ৪০০ টাকা বেশি দিতে হবে। এই ১০ টাকার বান্ডেলে ১ হাজার টাকা থাকে। সুতরাং ১০ টাকার নোটের বান্ডেলে ১ হাজার টাকা নিলে অতিরিক্ত ৪০০ টাকাসহ মোট ১৪০০ টাকা দিতে হবে। তবে ২০ টাকার নোটে অতিরিক্ত দিতে হয় ৩৫০ টাকা। আর ৫০ ও ১০০ টাকার নতুন নোট সম্বলিত ১ হাজার টাকার বান্ডেলে অতিরিক্ত দিতে হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। পাঁচটি ২০০ টাকার নোট নিলে অতিরিক্ত ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দিতে হয়।

গুলিস্তানের সেই ফুটপাত থেকে নাহিদ নামে এক যুবক ১০ ও ২০ টাকার নতুন নোট কিনেছেন। তিনি বলেন, ঢাকায় মার্কেটিংয়ের চাকরি করি। ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছি। ঈদ উপলক্ষ্যে বাড়ির ছোট বাচ্চাদের কাছে নতুন টাকার নোটের চাহিদা বেড়ে যায়। নতুন টাকার নোট না দিলে বাচ্চারা মন খারাপ করে। এজন্য ৫০০ করে ১০ ও ২০ টাকার নতুন নোট নিয়েছি। আমার এই এক হাজার টাকায় ৪০০ টাকা বেশি নিয়েছে। অথচ ব্যাংকে গিয়েছিলাম, সেখান থেকে নতুন টাকার নোট পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়েই এখান থেকে ৪০০ টাকা বেশিতে নতুন নোট কিনতে হলো।

হৃদয় নামে আরেক যুবক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাড়িতে যাচ্ছি, এজন্য কিছু নতুন টাকা কিনে নিলাম। আমি শুধু ১০ টাকার নোট নিয়েছি। ৫০০ টাকা টাকায় অতিরিক্ত ২০০ টাকা দিতে হয়েছে। মানে আমি তাদের (দোকানিকে) ৭০০ টাকা দিয়ে ৫০০ টাকা পেয়েছি।

টাকা ব্যবসায়ী স্বপন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ব্যাংকের বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে টাকা আনি। ব্যাংক থেকে বেশি দামে কিনে আনি তাই আমাদের বেশিতে বিক্রি করতে হচ্ছে। যেমন- ১০ ও ২০ টাকার নোটের চাহিদা বেশি হওয়ায় ব্যাংকের লোকেরা আমাদের কাছ থেকে এই দুই নোটের দাম বেশি রাখে। সেজন্য আমরা এই দুই নতুন নোট হাজারে ৪০০ বেশিতে বিক্রি করি। এর কমে বিক্রি করলে আমাদের লস হয়ে যাবে। গত কয়েকদিনের তুলনায় আজকে নতুন টাকার নোটের দাম একটু বেশি, সেজন্য আমরাও বেশি দামে বিক্রি করছি।

এসআর/এসকেডি