ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড় করার আগে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও আগের শর্ত পূরণ নিয়ে ঢাকা সফরে রয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দল।

দফায় দফায় অর্থমন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সভা বৈঠক হচ্ছে। বৈঠকে দীর্ঘদিন ধরে কর অবকাশ প্রাপ্ত শিল্পখাত নিয়ে আলোচনা হয়। যেখানে আইএমএফের পরামর্শ হলো ন্যূনতম ১০ বছর ধরে সুবিধা পাওয়া শিল্পখাত থেকে অবকাশ সুবিধা বাতিল করে করের আওতায় আনা। 

আগের দেওয়া পরামর্শগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তা নিয়ে চলতি সপ্তাহে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা শনিবার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১০ বছর হিসাবে কর অবকাশ সুবিধা পাওয়া শিল্পখাত বিবেচনা করলে দেশের অধিকাংশ খাতই চলে আসছে। যার মধ্যে রয়েছে— ফার্মাসিটিক্যালস, কৃষি যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, ইলেট্রনিক্স শিল্প, অটোমোবাইল, বাইসাইকেল, গাড়ির টায়ার, নির্মাণ সামগ্রীর স্বয়ংক্রিয় ইট কিংবা রড, রপ্তানি করে এমন কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, পোল্ট্রি শিল্প, প্লাস্টিক রিসাইক্লিং শিল্প ও মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ। এমন অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ ধরনের শিল্প এর আওতায় চলে আসবে।  

তিনি আরও বলেন, আইএমএফ পরামর্শ দেওয়ার অনেক আগে থেকে এনবিআর এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে। তবে অবশ্যই আমাদের যেসব দেশীয় শিল্প ভালো করছে এবং যে সব পণ্যের জনসাধারণের নিত্যপ্রয়োজনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, ওইসব খাতকে অবশ্যই আমাদের বিবেচনা করতে হবে। জটিল এমন সিদ্ধান্ত হুটহাট করে নেওয়া সম্ভব হবে না।

এর আগে গত মাসে আইএমএফের একটি কারিগরি দল এনবিআরের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে। সেখানে কর অবকাশসুবিধা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। এবারের সফররত আইএমএফের প্রতিনিধিদলটি এসব পরামর্শ বাস্তবায়নে পরিকল্পনা ও অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইতে পারে বলে জানা গেছে। 

২০২২ সালে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৫০ কোটি বা সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়ে আবেদন করে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। এরই মধ্যে ঋণের দুটি কিস্তির অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ। আইএমএফ বলছে, আয়কর আইনে বলা হয়েছে, উৎপাদন খাতের কর অবকাশসুবিধা ২০২৫ সালের অর্থাৎ আগামী বছরের জুনে শেষ হয়ে যাবে। আইন অনুযায়ী, এই মেয়াদ শেষের পর তা যেন আর নবায়ন করা না হয়। 

আইএমএফ প্রসঙ্গে সম্প্রতি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, সবাই কর অব্যাহতি বললেও আমরা সেটাকে লজিস্টিক সাপোর্ট বলে থাকি। এ ধরনের অর্থনৈতিক পলিসি প্রতিটি দেশেই রয়েছে। আইএমএফ যেটা বলে আসছে, সেটা হলো ভর্তুকি কমানো। নগদ প্রণোদনা ও ভর্তুকি এটা এনবিআরের বিষয় না। ভর্তুকি আসলে এক ধরনের সাপোর্ট। আমরা ভর্তুকিকে সাপোর্টের পর্যায়ে নিয়ে যাবো। এ সব সাপোর্ট ধাপে ধাপে কমিয়ে আনবো, যাতে আমাদের উৎপাদনে ধস না নামে। সেটা আইএমএফও জানে। আমরা তাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। একসাথে সবকিছু মানা যাবে না। একইভাবে এনবিআরও যেখানে করছাড় কিংবা সাপোর্ট দিয়ে আসছে, সক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে সেখানে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পলিসি সাপোর্টের ক্ষেত্রে এনবিআর এক জায়গায় স্থির থাকে না। প্রতি বছর বাজেটে সাপোর্ট দিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

আরএম/এনএফ