মুগদা বাজারের সবজিবিক্রেতা

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ ও রোজা শুরুকে কেন্দ্র করে বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম লাগামহীন হতে থাকে। বিধিনিষেধের দুদফা শেষ এবং রোজা কয়েকটি পেরিয়ে গেলেও বাজার এখনও চড়া। বেশিরভাগ পণ্যই এখনও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এতে সংসারের আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। সব চেয়ে বেশি কষ্টে আছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ।  

বুধবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর একাধিক কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, শাক-সবজি, গরুর মাংস, মাছসহ বেশিরভাগ পণ্যের দাম চড়া। এখন আদা রসুন ও পেঁয়াজের দামও বাড়তে শুরু করেছে। তবে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কম রয়েছে।

নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামে নাকাল রাজধানীর নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ বলছেন, আয় সীমিত, কিন্তু ব্যয় বেড়েই চলছে। লকডাউনের কারণে অনেকের আয় আগের তুলনায় কমেছে। অন্যদিকে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় খরচ বেড়েছে। এতে করে সংসারের আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলানো অনেকের কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মুগদা বাজারের সবজিবিক্রেতা মিজান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোজার শুরুতে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছিল। এর পর কয়েকটির দাম কিছুটা কমলেও বেশিরভাগ সবজি আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামাল একদিন ৫ থেকে ১০ টাকা কমে তো আরেকদিন আরও বেড়ে যায়। এভাবেই চলছে। রোজার শুরুতে বেগুনের দাম অনেক বেড়েছিল। গত সপ্তাহ থেকে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। শসার দাম কমে  এখন কেজিতে ৪০ টাকা। গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছিল।

এছাড়া আগের বাড়তি দামেই বাজারে প্রতি কেজি ঝিঙে ও চিচিঙ্গা, ধুন্দল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। কচুর লতি ও বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। কাকরোল ৮০ টাকা। পটল ও করলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।  ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পেঁপে ও ঢেঁড়স। টমেটো ৩০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, আলু ২০ থেকে ২২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাউ ও চালকুমড়া আকারভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

লেবু হালিপ্রতি আকারভেদে ১৫  থেকে ৩০ টাকা, কাঁচামরিচ কেজি ৬০ টাকা, ধনে পাতা ও পুদিনা পাতা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকায়। পুঁইশাক, লাউশাক, কলমিশাক, ডাঁটাশাক, লালশাক ও পাটশাক আঁটিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়।

মুগদা বাজারে সবজি কিনতে আসা জামান মিয়া জানান, শুধু আলুর দামই একটু কম আছে। বাকি সব সবজির দামই বেশি। বরবটি চাচ্ছে ৭০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা। কী কিনব? প্রতিদিন দুইশ টাকা সবজি কিনতেই চলে যায়। আয় করি কয় টাকা? ফুটপাতে ব্যবসা করতাম এখন লকডাউনে পুলিশ বসতে দেয় না। আয় বন্ধ। নিত্যপণ্যের দামে যে অবস্থা, আমাদের মত নিম্ন আয়ের মানুষের সংসারের ব্যয় মেটানো খুবই কষ্টকর।

এদিকে বাজারে গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। মুরগি ব্যবসায়ী কালাম বলেন, এখন কেজিতে ব্রয়লার বিক্রি করছি ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। সোনালিকা (কক) আগের সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ২০ টাকার মতো বেড়েছে। আজকে কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। আর লেয়ার (লাল) বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকা কেজিতে, আর খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়। ২৮ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি হালি ডিম।

এদিকে আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ। প্রতি কেজি রুই-কাতলা মাছ ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৩০ থেকে ১৬০, আইড় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, মেনি মাছ ৩০০ থেকে ৩৫০, বেলে মাছ প্রকারভেদে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা, বাইম মাছ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, পুঁটি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, পোয়া ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, মলা ২৮০ থেকে ৩৬০ টাকা, পাবদা ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, বোয়াল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, শিং ও দেশি মাগুর ৪০০ থেকে ৫০০, শোল মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, টাকি মাছ ৩০০ টাকা, পাঙ্গাস ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা, চাষের কৈ ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও ৭০০ থে‌কে ৮০০ গ্রা‌মের ইলিশ মাছ বি‌ক্রি হ‌চ্ছে ৪০০ থে‌কে ৫০০ টাকায়।

রাস্তায় ভ্যানে আদা রসুন ও পেঁয়াজ বিক্রেতা আবুল হোসেন জানান, পেঁয়াজের দাম একটু বেড়েছে। এখন কেজি ৪০ টাকা। আগের সপ্তাহে ৩৫ টাকা ছিল। দেশি আদা ১০০ ও রসুন ৯০ টাকা এবং চায়না রসুন ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আদা-রসুনও কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়েছে। কেন বেড়েছে তার কোনো সঠিক তথ্য দিতে পারেননি এ বিক্রেতা। তিনি জানান, কেনা বেশি পড়েছে, তাই বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে।

বাজারে ছোট দানার মসুর ডাল ১০০ টাকা এবং মোটা দানা ৭০ টাকা, মুগ ডাল ১২০ টাকা, মটর ডাল ১০০ টাকা, ছোলা ৭০ টাকা আর খেসারি ৮০ টাকা, ডাবলি ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অ্যাংকর ডালের বেসন ৬০ টাকা, বুটের ডালের বেসন ১০০ টাকায় বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।

খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন তেল কোম্পানিভেদে বিক্রি হচ্ছে এক লিটার ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা এবং পাঁচ লিটার ৬৪০ থেকে ৬৬০ টাকায়। প্রতি কেজি খুচরা (খোলা) সয়াবিন তেল কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩২ থেকে ১৩৫ টাকা আর পাম ওয়েল ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়।  

এসআই/আরএইচ