ঈদুল ফিতরের বাকি আছে ছয় থেকে সাত দিন। কিন্তু এপ্রিল তো দূরের কথা, এখনও মার্চের বেতনই পাননি অন্তত ৫০০ পোশাক কারখানার শ্রমিক। ফলে ঈদের আগে বেতন ও বোনাস নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

এখন পর্যন্ত ৪০-৪৫ ভাগ তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের কেবল বোনাস হয়েছে। আবার অনেকে শুধু বেতন পেয়েছেন। বেতন-বোনাস দুটিই দিয়েছে এ রকম কারখানার সংখ্যা মাত্র পাঁচ শতাংশ। শিল্প পুলিশ, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ১০ মের মধ্যে সদস্যভুক্ত সব কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের চেষ্টা চলছে। ঈদের আগেই সব কারখানা শ্রমিকদের বেতন বোনাস পরিশোধ করা হবে। এখন পর্যন্ত নয় শতাধিক কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে বিজিএমইএ।

আশুলিয়া-সাভার এলাকার মোট ১ হাজার ৩২১টি কারখানার মধ্যে ১৪১টি কারখানায় বেতন-বোনাস নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ৫৫, বিকেএমইএর ১৭ ও বিটিএমএর পাঁচটি কারখানা রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) আওতায় থাকা কারখানার সংখ্যা আটটি এবং অন্যান্য ৪৫টি কারখানায় বেতন বোনাস নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ঢাকা, গাজীপুর, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামকে শ্রমঘন এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলে এসব এলাকার আইনশৃঙ্খলা তদারকির দায়িত্বে রয়েছে শিল্প পুলিশ।

আরও পড়ুন : ঝুঁকি শ্রমিকের সুবিধা মালিকের

সংস্থাটির তথ্য মতে, এসব এলাকায় বস্ত্র, তৈরি পোশাকসহ মোট ৭ হাজার ৯৮২টি কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানাসহ অন্তত পাঁচশ কারখানার শ্রমিকদের ঈদের আগে এপ্রিল মাসের বেতন বোনাস নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুরে দুই শতাধিক কারখানা রয়েছে। যেখানে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানার সংখ্যা প্রায় ১৫০টি। এছাড়াও  বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সদস্যভুক্ত ১৫টি এবং অন্যান্য খাতের ৫০টি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

আশুলিয়া-সাভার এলাকার মোট ১ হাজার ৩২১টি কারখানার মধ্যে ১৪১টি কারখানায় বেতন-বোনাস নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ৫৫, বিকেএমইএর ১৭ ও বিটিএমএর পাঁচটি কারখানা রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) আওতায় থাকা কারখানার সংখ্যা আটটি এবং অন্যান্য ৪৫টি কারখানায় বেতন বোনাস নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ঈদের আগে নারায়ণগঞ্জের ৬০টি কারখানা শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে জটিলতায় পড়তে পারে। এর মধ্যে বিজিএমইএর ১০, বিকেএমইএর ২৫, বিটিএমএর সদস্যভুক্ত কারখানা রয়েছে পাঁচটি। এছাড়াও অন্যান্য কারখানা রয়েছে ১৭টি।

ময়মনসিংহে ঈদুল ফিতরের আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও বোনাস পরিশোধ নিয়ে শঙ্কার তালিকায় রয়েছে ১৭টি কারখানা। এর মধ্যে বিজিএমইএ ও বিটিএমএর সদস্যভুক্ত কারখানা রয়েছে ১০টি (প্রত্যেক সংগঠনের ৫টি করে কারখানা)। এছাড়া অন্যান্য খাতের পাঁচটি কারখানায় বেতন বোনাস নিয়ে সমস্যা হতে পারে। বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ৯১টি কারখানা শ্রমিকদের বোনাস ও বেতন দিতে পারবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গতকাল পর্যন্ত বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ৯ শতাধিক কারখানা শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস দিয়েছে। যা পরিমাণে ৬০ শতাংশের বেশি। বাকি কারখানাগুলোও সরকার নির্ধারিত সময়ের আগেই বেতন বোনাস পরিশোধ করবে।

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার করোনার কারণে পোশাক শ্রমিকদের ঈদ আনন্দ নেই। কারণ এবার শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হচ্ছে না। ফলে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করার সুযোগ পাচ্ছেন না তারা।

তিনি বলেন, আমরা সরকার ও পোশাক মালিকদের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, ২০ রমজানের মধ্যে শ্রমিকের বেতন ও বোনাস দেওয়ার জন্য। কিন্তু সরকার আমাদের কথা রাখেনি। সরকার ঘোষণা দিয়েছে ১০ মে অর্থাৎ ২৭ রমজানের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ করতে। তাতে অনেক শ্রমিক বেতন ভাতা পাবেন না বলেই শঙ্কা করছি। শ্রমিকরা যাতে আন্দোলন করতে না পারেন সেজন্য বলবে বেতন ও বোনাস দেবো। ২৭ রমজানের দুদিন পরেই ঈদ। ফলে বেতন বোনাসের জন্য আন্দোলনে নামতে পারবেন না শ্রমিকরা।

আরও পড়ুন : করোনায় সাড়ে ছয় শতাধিক কারখানা বন্ধ

বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ইসমাইল ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাংশ কারখানা শ্রমিকদের বেতন ও  ঈদের বোনাস দিয়েছে। প্রত্যেকটি কারখানা কর্তৃপক্ষকে ঈদের আগেই শ্রমিকদের বেতন বোনাস পরিশোধ করা উচিত।  সাধারণত গার্মেন্টসগুলো শ্রমিকদের বেতন দেয় মাসের ৮ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে। সেই হিসেবে এবারের ঈদ অত্যন্ত সুন্দর সময়ে হচ্ছে। তাই বেতন বোনাস নিয়ে বাড়তি ঝামেলা হওয়া উচিত হবে না।

তবে শ্রমিকদের কথার সঙ্গে একমত নন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা মাসের শুরু থেকেই বেতন বোনাস দিচ্ছি। গতকাল পর্যন্ত বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ৯ শতাধিক কারখানা শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস দিয়েছে। যা পরিমাণে ৬০ শতাংশের বেশি। বাকি কারখানাগুলোও সরকার নির্ধারিত সময়ের আগেই বেতন বোনাস পরিশোধ করবে।

বিকেএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমরা শ্রমিকদের বেতন বোনাস দিচ্ছি। সবাই যাতে দ্রুত পরিশোধ করে এ জন্য মনিটরিং করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন : করোনার ঝুঁকি নিয়ে কারখানায় শ্রমিকরা, গুনতে হচ্ছে ৫ গুণ ভাড়া

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের জন্য সরকার-মালিক-শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শক কমিটির ৬৭তম সভা ও তৈরি পোশাক খাতের টিসিসি কমিটির অষ্টম সভা অনুষ্ঠিত হয়। শ্রম ভবনে অনুষ্ঠিত সভায় সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ১০ মের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।

ওই দিন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেছিলেন, দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের স্বার্থে করোনার মধ্যে শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কলকারখানায় উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন। যদি কোনো কারখানার শ্রমিকদের মার্চের বেতন বকেয়া থাকে সেগুলো ঈদের আগেই পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া সুবিধা মতো জোনভিত্তিক ছুটির ব্যবস্থা করতেও মালিকদের পরামর্শ দেন তিনি।

এমআই/এসকেডি/জেএস