মুসলিম শরিয়াহ আইন অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ (নিসাব পরিমাণ) সম্পদ থাকলে তা শুদ্ধ করতে জাকাত দিতে হয়। বছরের যেকোনো সময় এই জাকাত দেওয়া যায়। তবে অতিরিক্ত সওয়াবের আশায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বড় অংশই বেছে নেন পবিত্র রমজান মাসকে।

গরিব-দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের জন্য জাকাত হিসেবে আমাদের দেশে শাড়ি-কাপড় ও লুঙ্গি দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে আগে থেকেই। কিন্তু মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে পুরোনো নিয়ম পাল্টে যাচ্ছে। এখন জাকাত হিসাবে নগদ টাকা ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ বেড়েছে। ফলে জাকাতের শাড়ি-কাপড় ও লুঙ্গির কদর আস্তে আস্তে  কমে যাচ্ছে।

রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে ফকিরাপুল রোডে, নটরডেম কলেজের বিপরীত পাশে একটি ব্যানার ঝুলানো রয়েছে, যাতে লেখা জাকাতের কাপড় বিক্রি হয়। কনক ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই কাপড় বিক্রি করছে।

জাকাতের কাপড় বেচাবিক্রি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বে থাকা আবুল খায়ের খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রায় ৪০ বছরের ওপরে হবে এখানে আমরা জাকাতের কাপড় বিক্রি করছি। প্রতিবছর রমজানের আগে থেকেই আমরা শাড়ি-কাপড় ও লুঙ্গি বিক্রি শুরু করি। তবে প্রথম ১৫ রমজান বেশি বিক্রি হয়। কিন্তু এবার ওই সময় লকডাউন-নিষেধাজ্ঞা ছিল। তাই দোকান খুলতে পারিনি। ১৬ রোজা থেকে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খুলেছি। কাস্টমার আসছে, তবে আগের মতো বিক্রি হচ্ছে না।

কেন বিক্রি হচ্ছে না জানতে চাইলে এই বিক্রেতা বলেন, বিত্তবানরা মূলত গরিব-দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের জন্য জাকাতের কাপড় কেনেন। গত বছর থেকে মহামারি চলছে। এখন অনেকে কাপড় না দিয়ে নগদ টাকা ও খাদ্যসামগ্রী বেশি দিচ্ছেন। বিক্রি কমার এটা একটা অন্যতম কারণ। এছাড়া মানুষের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখন খুব একটা ভালো না। আর আয় বেশি না থাকলে জাকাত দেবে কীভাবে।

তিনি জানান, আমাদের দীর্ঘদিনের ব্যবসা হওয়ায় নির্দিষ্ট কিছু কাস্টমার আছে। আগে যে কাস্টমার দু’তিনশ কাপড় নিতেন, এখন ৫০/১০০টা নিচ্ছেন। আবার অনেকের আত্মীয়-স্বজনদের কাপড় দিতেই হবে, তাই বাধ্য হয়ে অল্প কাপড়-লুঙ্গি নিচ্ছেন।

কাপড় কম নেওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। কারো কারো আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। আবার অনেকে ঝামেলা এড়াতে নগদ টাকা বিতরণ করছেন। কেউ কেউ বিভিন্ন জাকাত ফান্ডে টাকা দিয়ে দিচ্ছেন বলেও তিনি মনে করেন।

বেচা-বিক্রি কম তাই দোকানের কর্মী সংখ্যাও কমেছে জানিয়ে কনক ট্রেডার্সের এ ইনচার্জ জানান, আগে দোকানে রমজান মাসে ২২ থেকে ২৫ জন কর্মী কাজ করতেন। এবার কাজ করছে ৮ জন। বেচাবিক্রি নেই। আমাদের পাশে প্রতিবছর আরও চার পাঁচটি দোকানে জাকাতের কাপড় বিক্রি হতো। এবার শুধু আমরাই বিক্রি করছি। কারণ, কয়েকজন দোকান ছেড়ে দিয়েছে। আর বিক্রি কম হওয়ায় কাপড় তোলেনি। আমাদের নিজস্ব দোকান, তাই আমরা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি।

জাকাতের শাড়ি-কাপড় ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায় পাওয়া যায়। তবে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার কাপড় বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান। এছাড়া লুঙ্গি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়।

জাকাতের কাপড়ের দাম কম হলেও মান খারাপ নয় দাবি করে দোকানী জানান, আমরা কাপড়-লুঙ্গি অর্ডার দিয়ে বানায়। পাইকারি রেটে বিক্রি করি। আমরা যেখান থেকে লুঙ্গি আনি ওইখান থেকে অনেক ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠানও লুঙ্গি এনে তাদের সিল মারে। আমাদের ২৫০, ৩০০ টাকার লুঙ্গি তারা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করে।

জাকাতের কাপড় কিনতে আসা কমলাপুর এলাকার আবু বকর নামের এক ক্রেতা জানান, আগে জাকাত হিসেবে কাপড়-লুঙ্গি দিতাম। এখন নগদ টাকা দেই। যাদের দেই তারা পছন্দ মতো কিনে নেয়। ২৫ রমজানের মধ্যে এ বছরের জাকাতের টাকা দিয়ে দিয়েছি। এখন আমার বাড়ির পাশে কয়েকজন অসহায় লোক আছে; লকডাউনে তাদের তেমন কাজ নেই। এজন্য টাকার পাশাপাশি তাদের কাপড় ও লুঙ্গি দেবো। এখানে পাইকারি দামে কেনা যায়, তাই নিতে এসেছি।

এসআই/এনএফ