রফতানিকে উৎসাহিত করতে সরকারের দেওয়া নগদ সহায়তা পেতে এক শ্রেণির জালিয়াতি চক্র জাল রফতানির দলিল তৈরি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

রফতানি দলিলে প্রকৃত ঘোষণার চেয়ে কম পণ্য, ঘোষণাবহির্ভূত পণ্য দেখিয়ে কিংবা রফতানি না করে ভুয়া রফতানির কাগজপত্র তৈরি করে ওই নগদ প্রণোদনার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের অনুসন্ধানে সম্প্রতি এমন বেশকিছু কারসাজি ধরা পড়েছে। যে কারণে কারসাজি প্রতিরোধে এরই মধ্যে পণ্যের চালান পরীক্ষায় আরও সতর্ক হতে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ। বিশেষ করে বাড়তি নগদ সহায়তায় পণ্য চালান কায়িক পরীক্ষায় জোড় দিয়েছে কাস্টম হাউজ কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে বন্দরের বাইরে যেসব জায়গায় পণ্যের চালান যায়, সেখানের কর্তৃপক্ষের কাছে রক্ষিত তথ্য যাচাই করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ থেকে দেওয়া এক চিঠির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার মো. ফখরুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই নগদ সহায়তা পাওয়ার জন্য কিছু রফতানি চালানে অনিয়মের চিত্র পাওয়া গেছে। যে কারণে সতর্ক হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

রফতানি সক্ষমতা বাড়াতে সরকার বেশকিছু পণ্যে নগদ সহায়তা বা ক্যাশ ইনসেনটিভ দিয়ে থাকে। সেজন্য প্রতি বছর বাজেটে বড় অংকের বরাদ্দ রাখা হয়ে থাকে। এই নগদ সহায়তা ১ শতাংশ থেকে শুরু করে ২০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে।

বর্তমানে ৩৭টি ক্যাটাগরিতে ৪৭ ধরনের পণ্যে বিভিন্ন হারে প্রণোদনা দেয় সরকার। এর মধ্যে কয়েকটি পণ্য ২০ শতাংশ, কিছু পণ্য ১৫ শতাংশ ও ১০ শতাংশ হারে প্রণোদনা পায়। আবার কিছু পণ্য ১ থেকে ৯ শতাংশ হারে প্রণোদনা পায়। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে রফতানি খাতে প্রণোদনা প্রদানের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৭ ধরনের পণ্য রফতানির জন্য নগদ সহায়তা হিসেবে বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে আমদানি ও রফতানির সাথে সংশ্লিষ্ট এক কাস্টমস কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার সবজি, খাদ্যদ্রব্য ও মশলাজাতীয় পণ্য রফতানিতে সর্বোচ্চ নগদ সহায়তা দিয়ে থাকে। যেমন- মুড়ি রফতানিতে নগদ সহায়তা দিচ্ছে সরকার। কন্টেইনারে রফতানির সময় অর্ধেক মুড়ি ও অর্ধেক অন্য পণ্য দিয়ে, কাগজপত্রে ঘোষণা দিলো মুড়ি। সমস্যা হচ্ছে আমাদের একটি চালানে ২ শতাংশের বেশি পণ্য পরীক্ষা করতে পারি না। জালিয়াতচক্র সেই সুযোগটি নিচ্ছে বলে আমাদের ধারণা।

সেজন্যই চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ থেকে ভুয়া রফতানি দলিল তৈরির মাধ্যমে রফতানি দেখানো, রফতানি দলিলে প্রকৃত ঘোষণার চেয়ে কম পণ্য বা ঘোষণাবহির্ভূত পণ্য দেখানো এবং যে পণ্যের বিপরীতে প্রণোদনার পরিমাণ বেশি সে পণ্যের পরিমাণ বেশি দেখানো কিংবা মিথ্যা ঘোষণা দেওয়া ইত্যাদির বিষয়ে সতর্ক ও সচেতন হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সাথে এর সঙ্গে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে তার একটি তালিকা তৈরি করতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আরএম/এইচকে