পোশাক শ্রমিকদের করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। অথচ গত ২৯ এপ্রিল ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (টিসিসি) সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল- সরকারের পাশাপাশি পোশাক মালিকদের সংগঠন দুটি তাদের ‘শ্রমিকদের জন্য ভ্যাকসিনের বিষয়ে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে’।

ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। এতে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম মান্নান কচি উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, কোনো কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সে ব্যাপারে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। করোনার ভ্যাকসিনের জন্য সরকার ব্যবস্থা করে দিলে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে শ্রমিকদের ভ্যাকসিন প্রদান করব।

কিন্তু প্রায় একমাস হতে চলল বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর পক্ষ থেকে সরকার কিংবা অন্যান্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে এ বিষয়ে কোনো লিখিত প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। এমনকি আলোচনাও হয়নি। আগে উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হলেও এখন তারা বিষয়টি নিয়ে চুপ থাকার নীতি গ্রহণ করেছে।

মালিকদের বক্তব্য হলো, করোনার টিকা বা ভ্যাকসিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেবল সরকারের। সরকার যদি গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ দেয়, তাহলেই কেবল তারা শ্রমিকদের ভ্যাকসিন দেওয়ার চেষ্টা করবেন। শ্রমিকদের জন্য মালিকাদের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়ার দরকার নেই। কারণ গার্মেন্টস শ্রমিকদের মধ্যে ১৮-৩৫ বছর বয়সী বেশি, তাদের করোনা মোকাবিলার শক্তি বেশি। তারা করোনায় কম আক্রান্ত হচ্ছে।

তবে ভারতের করোনার ধরনের কারণে পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাতীয় শ্রমিক লীগের ট্রেড ইউনিয়ন সমন্বয় বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ হোসেইন। তিনি বলেন, ভারতের করোনা যদি বাংলাদেশে আক্রমণ করে, তবে সবচেয়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে দেশের পোশাক শ্রমিকরা। কারণ তারা একসঙ্গে থাকে। ফলে দ্রুত পোশাক শ্রমিকদের সুরক্ষা দেওয়া জরুরি।

বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, শ্রমিকদের সবার আগে ভ্যাকসিন প্রয়োজন। কারণ একজন শ্রমিকের যদি করোনা হয়, তবে দ্রুত তা সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে।

এ বিষয়ে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদউল্লাহ আজিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ সরকারি বিষয়। আমরা বিষয়টি নিয়ে কোনো চিন্তা করছি না। বরং করোনার সংক্রমণ রোধে শ্রমিকদের মধ্যে আমরা সচেতনতা বৃদ্ধি করছি। আমরা করোনাভাইরাসের জন্য আলাদা পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করেছি। এগুলো নিয়ে কাজ করছি। ভ্যাকসিন নিয়ে কোনো উদ্যোগ আমাদের নেই।

জানতে চাইলে বিকেএমইএর পরিচালক (শ্রম) ফজলে শামীম আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশে এখন করোনা ভ্যাকসিনের সংকট রয়েছে। যে পরিমাণ ভ্যাকসিন রয়েছে, তা দিয়ে বয়স্কদেরও হবে না। তাদের শেষ হলে সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয়, তবে আমরা গ্রহণ করব। করোনা মোকাবিলায় সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।

সার্বিক বিষয়ে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, শ্রমিকের ভ্যাকসিনের জন্য আমরা লিখিত কোনো আবেদন করিনি। তবে মৌখিকভাবে সরকারের দফতরগুলোতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে আমরা লিখিত দেব। সরকার ভ্যাকসিন দিলে আমরা শ্রমিকদের দিয়ে দেওয়ার ব্যবসায় করব।

মালিকদের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের জন্য বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শ্রমিকদের জন্য বিজিএমইএর পক্ষ থেকে আলাদা করে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। কারণ ভ্যাকসিন রাষ্ট্রীয় বিষয়।

দেশের বর্তমানে ৪০ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক রয়েছে। যার বেশিরভাগই রয়েছে তৈরি পোশাক কারখানায়। আর তার তদারকি করে মালিকদের সংগঠন বিজেএমইএ ও বিকেএমইএ।

এমআই/এসএসএইচ