টাকার ফাইল ছবি

চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এখন পর‌্যন্ত ৭ হাজার ৬৫০ জন ব্যক্তি করদাতা অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বৈধ করেছেন। যেখান থেকে প্রায় ৯৬২ কোটি ৬০ লাখ টাকা রাজস্ব পেয়েছে সরকার। যা দেশের স্বাধীনতার পর থেকে এক বছরের হিসাবে সর্বোচ্চ।

এর মধ্যে শেয়ারবাজারে প্রায় ২৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করেছেন ২০৫ জন ব্যক্তি। ওই খাতে রাজস্ব এসেছে ২২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে অর্থনীতির মূল ধারায় ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা প্রবেশ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র ঢাকাপোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এ বিষয়ে এনবিআর কর বিভাগের সদস্য কলিপদ হালদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে এখন পর‌্যন্ত বেশ ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। যতটুকু জানি চলতি অর্থ বছরে এখন পর‌্যন্ত প্রায় হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। যা যে কোনো অর্থবছরের তুলনায় সর্বোচ্চ। ভবিষ্যতে আদায়ের এই হার আরো বাড়বে বলে মনে করি।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৭ হাজার ৪৪৫ জন করদাতা জমি, অ্যাপার্টমেন্ট, নগদ, ব্যাংক আমানত এবং অন্যান্য সম্পদকে বৈধ করেছেন। এক সাময়িক হিসাব অনুসারে, তাদের অবৈধ সম্পত্তি বৈধ করতে গিয়ে মোট প্রায় ৯৩৯ কোটি ৭৬ লাক টাকা কর আদায় করেছে। যা দেশের স্বাধীনতার পর থেকে এক বছরের হিসাবে সর্বোচ্চ পরিমাণ। আর ২০৫ জন ব্যক্তি শেয়ারবাজারে প্রায় ২৪০ কোটি বিনিয়োগ করে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করেছেন। যেখান থেকে ২২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা কর আদায় হয়েছে।

এর আগে সেনাবাহিনী সমর্থিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই অর্থবছরে ২০০৭-০৮ ও ২০০৮-০৯ সালে করদাতারা মোট ৯১১ কোটি ৩০ লাখ টাকা কর দিয়ে কালো টাকা বৈধ করেছিল। যেখানে করদাতার সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৬৮৩ জন।

এ বিষয়ে এনবিআরের আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ব্যক্তি পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণির করদাতারা ভিন্ন ভিন্ন সম্পদের বৈধতা নিচ্ছেন। এর প্রক্রিয়া সম্পর্কে তারা জটিল বলে দাবি করছেন। অনেক করদাতারা তাদের আয়কর রিটার্নে এসব সম্পদের ঘোষণা দিচ্ছেন। আমাদের কর কর্মকর্তারা রিটার্নে তথ্য যাচাই-বাছাই করে তথ্য সংগ্রহ করছেন। ফলে সঠিক হিসাব বের করা সময় সাপেক্ষ। ভবিষ্যতে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার হিসাব আরও বাড়বে। কারণ আগামী জুন পর্যন্ত এই সুযোগ রয়েছে।’

চলতি বছরের বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের বিষয়ে বলা হয়েছিল, প্রচলিত আইনে যাই থাকুক না কেন, ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের চলতি অর্থবছরে আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গমিটারের ওপর নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা যেকোনো সিকিউরিটিজের ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করলে কর্তৃপক্ষসহ আরও কেউই প্রশ্ন করতে পারবে না। একই সময় ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করলে, ওই বিনিয়োগের ওপর ১০ শতাংশ কর দিলে, আয়করসহ কোনো কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করবে না।

এছাড়া দেশীয় বিনিয়োগ চাঙা করতে এর আগের অর্থবছরে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে একই হারে কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছিল সরকার। ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত এই সুযোগ বহাল আছে।

এদিকে, চলতি ২০২০-২১ করবর্ষে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন দাখিল হয়েছে প্রায় ২০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। অতিরিক্ত সময় চেয়ে এক কোটি ৫০ লাখ করদাতা আবেদন করেছেন। যদিও প্রত্যাশা অনুযায়ী রিটার্ন দাখিল হয়েছে বলে মনে করছে না এনবিআর। দেশে ই-টিআইএনধারীর বর্তমান সংখ্যা ৫০ লাখ ৭২ হাজার। গত অর্থবছরের আয়কর রিটার্নের সংখ্যা ছিল প্রায় ২২ লাখ।

আরএম/এফআর