করোনার কারণে ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এতে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। এ শঙ্কাকে আমলে নিয়ে ঝরে পড়া রোধে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে উপবৃত্তির পরিধি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৃহস্পতিবার (৩ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনকালে এ ঘোষণা দেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনা সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাওয়ায় আমরা চলতি বছরের ৩১ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় তা স্থগিত করতে হয়েছে। করোনার এ ক্রান্তিকালে শিক্ষার উন্নয়নকে বেগবান করতে গত অর্থবছরে ঘোষিত অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি বর্ধিত চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে উপবৃত্তি প্রদান, পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণের পরিধি বাড়ানো হবে।

তিনি বলেন, করোনা মহামারির শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শিক্ষার্থীদের পাঠক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ শিরোনামে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের পাঠদান কার্যক্রম চালু করাসহ অনলাইন ও বাংলাদেশ বেতার ও কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। এতে প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীকে দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাখা, পাঠচর্চা ও পাঠে মনোযোগী রাখা সম্ভব হয়েছে। এ সংকটকালে জীবনরক্ষার কৌশল অবলম্বনের পাশাপাশি শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে এনে পাঠদান কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেবো ।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়ার আনন্দ আরও বাড়িয়ে দিতে বছরের শুরুতে কিট অ্যালাউন্স ( ড্রেস, জুতা ও ব্যাগ ) বাবদ প্রাথমিকভাবে ১ হাজার টাকা এবং উপবৃত্তির মাসিক হার ১০০ টাকার পরিবর্তে ১৫০ টাকা করে প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করেন। এজন্য বর্তমান অর্থবছরে ৩ হাজার ৭১২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা কিট অ্যলাউন্স বাবদ এবং অবশিষ্ট টাকা উপবৃত্তি বাবদ ব্যয় হচ্ছে।

তিনি বলেন, মাধ্যমিক স্তরে সুযোগবঞ্চিত দরিদ্র মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট কর্তৃক সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় ‘সমন্বিত উপবৃত্তি’ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর আওতায় বিভাগীয়, মেট্রোপলিটন ও জেলা সদরের পৌর এলাকাসহ বাংলাদেশের ৫১৭টি উপজেলা/থানায় মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরিদ্র পরিবারের ৬ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি ও টিউশন সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে ।

অর্থমন্ত্রী বলেন, স্কিমের আওতায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের প্রতি ষান্মাসিকে ৬ষ্ঠ-৭ম শ্রেণিতে ১২০০ টাকা, ৮ম শ্রেণিতে ১৫০০ টাকা, ৯ম-১০ম শ্রেণিতে ১৮০০ টাকা ও একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ২৪০০ টাকা করে প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া উক্ত শ্রেণিসমূহের জন্য যথাক্রমে ষান্মাসিকভিত্তিক টিউশন ফি ২০১ টাকা, ৩০০ টাকা, ৪৮০ টাকা ও ৩৯০ টাকা ভর্তুকি প্রদান করা হচ্ছে ।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে টিউশন ফি মওকুফ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণির টিউশন ফি মওকুফ করা হবে ।

২০২১-২০২২ অর্থবছরে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩৯ কোটি ২৫ লাখ শিক্ষার্থীকে, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ৭ কোটি ৫০ লাখ শিক্ষার্থী, স্নাতক (পাস) পর্যায়ের ১ কোটি ৫০ লাখ শিক্ষার্থীকে মোট ২ হাজার ১০৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা উপবৃত্তি প্রদান করা  হবে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে করোনার মহামারির মাঝেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তি প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে উপকারভোগী শিক্ষার্থীর  অভিভাবকদের মোবাইল অ্যাকাউন্টে উপবৃত্তির অর্থ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এ সংকটকালে  উপবৃত্তির অর্থে দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারসমূহ কিছুটা হলেও সহায়তা পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী।

এনএম/এসকেডি