বর্তমান পরিস্থিতিতে, দেশের জনগণের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণে যে বাজেট ঘোষণা করেছে তা বাস্তবসম্মত। বিশাল এ বাজেট বাস্তবায়নে সুশাসন, যথাযথ মনিটরিং, বিনিয়োগ ও উৎপাদন বাড়ানো এবং কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। পাশাপাশি বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংক ঋণের পরিবর্তে কম সুদে বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়নের কথা বলেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৩ জুন) প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ এর ওপর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা পোস্টকে এ কথা বলেন তিনি। এর আগে বিকেলে জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
  
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে, দেশের জনগণের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য বাজেটের এই আকার অবাস্তব নয়। দেশের অর্থনীতির পরিকাঠামো বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাজেটের আকারও প্রতিবছর বাড়ছে। তবে বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সুশাসন, যথাযথ মনিটরিং, বিনিয়োগ ও উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যবান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায়। বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং তদারকের মান ক্রমাগতভাবে উন্নয়নের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও পরিকল্পনা নিশ্চিত করা জরুরি।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা বিনিয়োগ, শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান প্রক্রিয়াকে গতিশীল করবে। এসব অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) আরও ভূমিকা রাখবে। দক্ষতা উন্নয়নের জন্য নজর দেওয়া হয়েছে। মানব সম্পদকে সার্বিকভাবে উন্নয়ন করা হলে স্বাভাবিকভাবে উৎপাদন বাড়বে।

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে রাজস্ব আদয়ের লক্ষ্যমাত্রা তেমন বাড়ানো হয়নি। তবে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ইন্টিগ্রেটেড ও অটোমেশন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা জরুরি বলে জানান তিনি।

প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি রাখা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ৬.২ শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে সরকারকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নিতে হবে। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিতে হবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা এবং সেভিংস সার্টিফিকেট থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে স্থানীয় ব্যাংক ব্যবস্থার পরিবর্তে যথাসম্ভব সূলভ সুদে বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়নের প্রচেষ্টার কথা জানান। যথাযথ বিনিয়োগ ও শিল্পোন্নয়ন ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারাকে অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়। রাজস্ব নীতিতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি যাতে বিনিয়োগকারীরা আস্থার সঙ্গে বাবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যেতে পারে।

৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ব্যবসায়িক খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা অগ্রিম আয়কর (এআইটি) বিলুপ্ত করার জন্য প্রস্তাব করেছিলাম কিন্তু এ বিষয়ে বাজেটে কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। অগ্রিম আয়কর যথাযথ সমন্বয়/রিফান্ড না হওয়ায় পরিচালনা ব্যয় বাড়ায়। পদ্ধতিগত জটিলতা নিরসনপূর্বক অগ্রিম আয়কর যথাসময়ে সমন্বয় করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, বলেন এফবিসিসিআই সভাপতি।

এসআই/জেডএস