‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রথম দফায় সংশোধনীর মাধ্যমে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। পরবর্তীতে ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন মেয়াদ ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও শেষ হয়নি কাজ। তাই দ্বিতীয় দফায় প্রকল্পের সংশোধনীর মাধ্যমে মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনীতে ৩৪৬ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি এবং মেয়াদ ডিসেম্বর ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ১১৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। যা মোট ব্যয়ের ১৮.১৫ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ২০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পটিতে ১৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি দ্বিতীয় সংশোধনীর জন্য আগামী একনেক সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে। একনেক সভায় অনুমোদন পেলে প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা হবে। 

প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় মোট ব্যয় ছিল ২৫৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীতে এর ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৩০২ কোটি টাকা। বর্তমানে দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় বেড়ে হচ্ছে ৬৪৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। যা প্রথম সংশোধনীর চেয়ে ৩৪৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা বেশি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মাস্টার প্ল্যানে চারটি পর্যায়ে সার্বিক উন্নয়নে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষায় গবেষণাসহ আরও সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি ও গুণগত মান উন্নয়নের জন্য ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর উন্নয়ন (প্রথম পর্যায়)’ শিরোনামে ভিন্ন আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যা জুলাই ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সালের জুন মেয়াদে চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন, চারটি একাডেমিক ভবন, অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য সেতু ও রাস্তা, ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য ল্যাবরেটরি স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য কার্যক্রমের বাস্তবায়ন কাজ চলমান রয়েছে।

প্রকল্পের কার্যপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মূল প্রকল্পের আওতায় প্রথম সংশোধনী পর্যন্ত  ৪ হাজার ৯৪৬ পিস বৈজ্ঞানিক ও ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি কেনার কথা ছিল। এ জন্য মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কিন্তু দ্বিতীয় সংশোধনীতে এ যন্ত্রপাতির সংখ্যা বাড়িয়ে ১০ হাজার ২৬২ পিসের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

এছাড়া প্রথম সংশোধনীতে আসবাবপত্র ছিল ৫ হাজার ৫৩৮ পিস। এ জন্য ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীতে আসবাবপত্রের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২৫ হাজার ২৪৯ পিস। এখানে প্রথম সংশোধনীর তুলনায় আসবাবপত্রের সংখ্যা বাড়ছে ১৯ হাজার ৭১১ পিস। আর প্রথম সংশোধনীর তুলনায় এ খাতে ব্যয় বাড়ছে ৩৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

প্রথম সংশোধনী পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণ ৮ একর পর্যন্ত থাকলেও দ্বিতীয় সংশোধনীতে ভূমি অধিগ্রহণ কমে দাঁড়িয়েছে ৬.১৬ একর। শুরুতে ৮ একর ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় ছিল ১০৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। কিন্তু দ্বিতীয় সংশোধনীতে ভূমি অধিগ্রহণ দুই একর কমলেও ব্যয় বেড়েছে। দ্বিতীয় সংশোধনীতে ৬ একর ভূমি বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ১২০ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

দ্বিতীয় সংশোধনীতে যেসব অঙ্গ বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে মন্ত্রণালয়
৬ হাজার ৭৫০ বর্গ মিটারের ছয়তলা ছাত্র হল নির্মাণ, ৬ হাজার ৭৫০ বর্গ মিটারের ছয়তলা ছাত্রী হল নির্মাণ, ৯ হাজার ৭৫০ বর্গ মিটারের ১৪ তলাবিশিষ্ট শিক্ষক অফিসার্স কোয়ার্টার নির্মাণ, ৯ হাজার ৭৫০ বর্গ মিটারের ১৪ তলাবিশিষ্ট তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির কোয়ার্টার নির্মাণ বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

যেসব কারণে প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে 
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক স্থাপনাসমূহ একই স্থানে রাখার জন্য ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ এর উন্নয়ন (প্রথম সংশোধন)’ শীর্ষক আরেকটি প্রকল্পের আওতায় ৩টি একাডেমিক স্থাপনা, বৈজ্ঞানিক ল্যাবরেটরি ভবন, একাডেমিক ভবন ও ইউটিলিটি কাম একাডেমিক ভবন এবং সেতু নির্মাণ অঙ্গ প্রস্তাবিত ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ এর উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের অধিগ্রহণকৃত ৪ একর জমিতে নির্মাণ করার জন্য প্রকল্পটি দ্বিতীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
 
ভূমি অধিগ্রহণ অঙ্গের সংশোধন
 প্রকল্পে অনুমোদিত ৪ একর জমির অধিগ্রহণজনিত জটিলতা থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ২.১৬ একর জমি অধিগ্রহণ এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ তিনগুণ অর্থের প্রয়োজন হওয়ায় প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয়ের সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। 
     
ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির কারণ
পিডব্লিউডির হালনাগাদ রেট সিডিউল-২০১৮ অনুসরণের ফলে অঙ্গসমূহের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের অসমাপ্ত কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সমাপ্তকরণে প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই ২০১৫ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
 
এ প্রসঙ্গে আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলেছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ভৌত অবকাঠামোসমূহের উন্নয়ন হবে। যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হবে। কারিগরি ও আধুনিক শিক্ষায় প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ উন্নয়নে অধিক সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীর ভর্তির সুযোগসহ এ বিষয়ে গবেষণার সুযোগ সম্প্রসারিত হবে। এজন্য প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

এসআর/এসকেডি/জেএস