কনফারেন্স রুম না পেয়ে মেঝেতেই সভা করলেন এনবিআর কর্মকর্তারা
কোনো কনফারেন্স রুম বরাদ্দ না দেওয়ায় সংস্কার কার্যক্রম সফল করতে এনবিআরের দুই শতাধিক কর ও কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারী বাধ্য হয়ে এনবিআর ভবনের মেঝেতে বসেই সভা করেছেন।
সোমবার (২ জুন) বিকেলে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। সভায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের আহ্বানে রাজস্ব ভবনের নিচ তলায় ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।
বিজ্ঞাপন
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, কনফারেন্স রুমের চাবি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে না পাওয়ায় সেমিনার আয়োজনের জন্য আজকের নির্ধারিত সভা ৫১১ নম্বর কক্ষের পরিবর্তে এনবিআর ভবনের নিচে লিফটের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। এমন অবমাননাকর আচরণের বহিঃপ্রকাশ এবং সংস্কার কার্যক্রমে সরকারের সদিচ্ছাকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে মনে করছি। এ ধরনের হীন চেষ্টায় সংস্কারের আন্দোলন দমে যাবে না, বরং কর্মকর্তারা আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হবেন।
সার্বিক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি বিষয়ে সভায় সর্বসম্মতিক্রমে আগামী ২৮ জুন সিভিল সোসাইটি, থিংক ট্যাংক, ব্যবসায়ী সংগঠন, রাজনৈতিক নেতাসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণে দিনব্যাপী ‘কেমন এনবিআর চাই’ শীর্ষক এক সেমিনার আয়োজন করা হবে বলে জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
এক বিবৃতিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ বলছে, সেমিনার আয়োজনের ব্যয়ভার সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যক্তিগত চাঁদার মাধ্যমে নির্বাহ করা হবে। সেমিনারে রাজস্ব ব্যবস্থার টেকসই সংস্কারের লক্ষ্যে ধারণা উপস্থাপন ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত গ্রহণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গুচ্ছাকারে (আইন সংক্রান্ত, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, অটোমেশন, সার্ভিস ডেলিভারি, ইন্টিগ্রিটি, প্রভৃতি) পেশ করা হবে। সফলভাবে এই সেমিনার আয়োজন করতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছে সংগঠনটি।
এদিকে আজও পুলিশ পাহারায় সকাল সোয়া ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অফিস করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। যদিও তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিল এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। গতকালও সেনা ও পুলিশ পাহারায় নিজের দপ্তরে প্রায় ৩ ঘণ্টায় অফিস করেছেন।
গত ২৯ মে এক সংবাদ বিবৃতিতে চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানকে অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তাকে রাজস্ব ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
সংস্কার ঐক্য পরিষদ জানায়, বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি করেছে এবং সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিস্থিতিকে জটিল করেছে। তার অবস্থান অতি নেতিবাচক ও ষড়যন্ত্রমূলক না হলে এই সমস্যা অনেক আগেই সুরাহা হয়ে যেত।
এই পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান চেয়ারম্যানকে অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানিয়ে তাকে রাজস্ব ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে পরিষদ। একই সঙ্গে রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মকর্তাকে স্থায়ী চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানায় সংগঠনটি।
এনবিআর বিলুপ্ত করে নতুন রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫ জারির প্রতিবাদে ১৪ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে এসেছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। ২৫ মে রাতে অর্থ উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জারি হওয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়, এনবিআর বিলুপ্ত করা হবে না, বরং এটিকে আরও শক্তিশালী ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সেই সঙ্গে রাজস্ব নীতি প্রণয়নের জন্য একটি নতুন স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান গঠনের পরিকল্পনাও তুলে ধরা হয়। এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে পরিষদ ২৬ মে থেকে ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয় এবং সব দপ্তরে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়। তবে পরিষদের দ্বিতীয় দাবিটি বর্তমান চেয়ারম্যানকে অপসারণ ২৯ মে পর্যন্ত পূরণ না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।
এর আগে ২৬ মে এক সংবাদ সম্মেলনে ২৯ মের মধ্যে এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানকে অপসারণ করার সময়সীমা বেঁধে দেয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
২৫ মে রাতে এনবিআর কর্মকর্তাদের দাবি মানার আশ্বাস দেয় অর্থমন্ত্রণালয়। আর সেই আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে ঐক্য পরিষদ। তবে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণের ব্যাপারে কোনো কিছুই জানায়নি অর্থ মন্ত্রণালয়। এর পরপরই এক সংবাদ বিবৃতিতে জানায় এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিলসহ চার দাবিতে চলা আন্দোলন কর্মসূচি ১৩ দিন পর কলম বিরতি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
গত ১৩ মে আগারগাঁও এনবিআরের সামনে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলম বিরতির ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে অনুসারে ১৪, ১৫, ১৭, ১৮ ও ১৯ মে কলম বিরতি কর্মসূচি পালিত হয়। আলোচনার আশ্বাসে ২০মে আন্দোলন স্থগিত রেখে ২১ মে থেকে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসে।
গত ২২ মে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবিগুলোর বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
আরএম/এমএ